ফা. সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার, রাজশাহী সিটি, বাংলাদেশ।
ভারতের জেজুইট সম্প্রদায়ের প্রবীণ ফাদার স্ট্যানিসলাউস লুর্দুস্বামী, যিনি স্ট্যান স্বামী নামে পরিচিত, গত ৫ জুলাই কারাবন্দি অবস্থায় মুম্বাইয়ের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। তাঁর মৃত্যুতে জাতিসংঘের টুইটার হ্যান্ডেলে লেখা হয়, “বিনা বিচারে দীর্ঘদিন বন্দি থাকার পর মৃত্যু হয়েছে ৮৪ বছর বয়সী মানবাধীকারকর্মী স্ট্যান স্বামীর। তাঁর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত এবং উদ্বিগ্ন। যথেষ্ট আইনি প্রমাণ ছাড়া যেসব মানুষকে আটক করা হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতিতে প্রত্যেক রাষ্ট্রের উচিত তাঁদের মুক্তি দেওয়া।” টুইটারে আরো বলা হয়েছে, “জামিনের অপেক্ষায় থাকা ভারতের অধিকারকর্মী ফাদার স্ট্যান স্বামী মারা গেছেন।” সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ভারতের ঝাড়খান্ড রাজ্যের রাজধানী রাঁচী থেকে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের ৮ অক্টোবর ফাদার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মাঁওপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দে এক ঘটনায় যুক্ত থাকার অজুহাতে গ্রেপ্তার করা হয়। ভীমা কোড়েগাঁও নামে ঐ ঘটনায় জড়িত থাকার অপরাধে ফাদার স্বামীর সঙ্গে আরোও ১৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়- যাদের মধ্যে রয়েছেন অধিকারকর্মী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং আইনজীবী। সরকারের এক তদন্তে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘুদের হয়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উস্কানী দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছেন।
পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত ও স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তার জামিনের আবেদন করা হলেও বরাবরই তা নাকচ করে দেওয়া হয়। তবে স্বাস্থ্যগত কারণে গত ২৮ মে বোম্বে হাইকোর্ট ফাদারকে তালোজা কেন্দ্রিয় কারাগার থেকে হলি ফ্যামিলি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য স্থানান্তরের নির্দেশনা জারি করেন। তালোজা কারাগারে ঠাসাঠাসিভাবে করোনা রোগীদের মধ্যে থাকার কারণে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হোন বলে তাঁর সমর্থকরা অভিযোগ তুলেছেন। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের পরিচালক ড. আয়েন ডি’সুজার মতে, ফাদার স্বামী করোনা জটিলাতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। বোম্বে হাইকোর্ট ফাদারের মৃত্যুকে বেদনাদায়ক ও ভাষায় প্রকাশহীন সান্তনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভারতের ইতিহাসবিদ রামাচন্দ্র গুহ এই মৃত্যুকে ‘জুডিশিয়াল হত্যাকান্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ঝাড়খন্ড রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন, এই আটকের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছেন।
এশীয় ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনী, গত বছর অক্টোবর ২৬ তারিখে ফাদার স্ট্যানকে মুক্তির দাবি জানিয়েছিলেন। এশীয় ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনীর সভাপতি, মিয়ানমারের কার্ডিনাল চালর্স মোয়ং বো, এই ঘটনাকে সংখ্যালঘুদের প্রতি উপনিবেশীয় আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন। সেই সাথে ভারতের ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনীও তাঁর মুক্তি দাবি জানিয়েছেন। কার্ডিনাল বো, ফাদারের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়ে এক বার্তায় বলেছেন, “তাঁর আটক থাকার পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিরিহ এই মৃত্যু-হত্যা আমাদের বিস্মিত করেছে। তবে তাঁর এই আটকাদেশ, অনুপ্রাণীত করে দিলো- ভারত এবং বিশ্বের হাজার মানুষের মুক্তির আন্দোলনকে।” ভারতের ক্যাথলিক বিশপ সম্মেলনীর সভাপতি, কার্ডিনাল অসওয়াল্ড গ্রর্সিয়াস বলেছেন, তাদের আবেদন সত্বেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিষয়টির উপর হস্তক্ষেপ করতে চান নি। জনজাতি অধিকার আন্দোলনের এই ধর্মীয় নেতা- ফাদার স্ট্যানিসলউস লুর্দুস্বামীর আত্মা স্বর্গবাসী হোন। তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুন কন্ঠহীন মানুষের অধিকার রক্ষার সরব কন্ঠ হয়ে।