‘করোনা ভাইরাস’ এ কথাটা শুনলেই যেন মানুষ আঁতকে উঠে। প্রথম দিককার কথা ভাবলে এ রোগটাকে মনে হতো বাইবেলে বর্ণিত কুষ্ঠরোগের সামিল। যেহেতু, রোগটার সংক্রমণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মানুষের মধ্যে এই রোগের আতঙ্ক বা ভীতি কম নয়। আজও তার গতি, প্রকৃতি এবং আকৃতি খুব একটা পাল্টে যায়নি। তবে নতুন কোভিড -ডেল্টা এমন একটি ভাইরাস যা কিনা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের, মারাত্মক মৃত্যু ঘাতক এবং সহজে নির্ণয়যোগ্য নয়। নতুন কোভিড-ডেল্টা ভাইরাসের ধরণ: রোগী কোন সমস্যাই উপলব্ধি করে না। কোন প্রকার লক্ষণও দেখা যায় না। কোভিড -ডেল্টা অবশ্যই আগের চাইতে আরো সংক্রামক এবং একটি উচ্চ মৃত্যু হারের ভাইরাস। এটি চরম অবস্থায় যেতে কম সময় নেয়, কখনও কখনও লক্ষণ ছাড়াই ছড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় আমাদের সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার করা এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা। সেই সাথে সুযোগ পেলেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা। তবে করোনা ভাইরাস থেকে নিজে বাঁচাবার এবং অন্যকে বাঁচানোর সর্বৎকৃষ্ট পন্থা হলো মাস্ক, মাস্ক এবং মাস্ক ব্যবহার করা।
গত ১ জুলাই থেকে চলছে দেশব্যাপী টানা লক্ডাউন। এবারের লক্ডাউনে কোন মানুষই যেন আর ঘরে থাকতে নারাজ। তবুও অভাবী মানুষের অভাব তো আর কমছে না বরং বেড়েই চলেছে। কেননা, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের দেশেও মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলেছে। এর উর্ধ্ব গতি যেন কোন ভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এমনকি কোন কোন দিন মৃত্যুর সংখ্যা দিনে ২৫০ও ছাড়িয়ে গেছে। হাসপাতালে, রাস্তা-ঘাটে বেড়ে চলেছে স্বজন হারানোর কান্না ও হাহাকার। তাই তো এবারের লক্ডাউনে অভাবী মানুষেরা অভাবের তাড়নায় ঘরে বসে থাকতে চাইছেন না। এমতাবস্থায়, দেশের সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অসহায় অভাবী দরিদ্র পরিবারের পাশে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বেলায়ও। রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের প্রতিটি ধর্মপল্লীর প্রায় ২,৪০০ পরিবারকে ১০০০.০০ টাকা করে সর্বমোট ২,৪০০,০০০.০০ (চব্বিশ লক্ষ) টাকা নগদ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে কর্মরত স্থানীয় সিস্টার সম্প্রদায়ের সিস্টারদের এবং স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে মোট ৬,২০,০০০.০০(ছয় লক্ষ বিশ হাজার) টাকা সর্বমোট ৩,0২০,০০০.০০ (ত্রিশ লক্ষ বিশ হাজার) টাকা বিতরণ করা হয়।
এই ত্রাণ কার্যক্রম সম্বন্ধে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জেভার্স রোজারিও বরেন্দ্রদূত অনলাইনকে জানান, ক্যাথলিক মণ্ডলি সব সময়ই দরিদ্রদের পক্ষ সমর্থন করে থাকে। বর্তমান এ বাস্তবতায় দরিদ্র মানুষদের পক্ষ সমর্থন করা বা তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া আমাদের একটি নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। সেই সাথে এও মনে করি যে, এ কঠিন সময়ে সকলকেই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আর্তমানবতার সেবাকাজে এগিয়ে আসতে হবে। তাই, তিনি সমাজের বিত্তবানদেরকে এ কাজে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। কোভিড মহামারি চলাকালীন সময়ে সকলকে তিনি স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার এবং নিরাপদে থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “প্রার্থনা করি যেন করোনা ভাইরাস থেকে ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে মুক্ত ও নিরাপদ রাখেন। বিশেষভাবে করোনা ভাইরোসে আক্রান্ত জনগণের জন্য প্রার্থনা করি যেন ঈশ্বর তাদেরকেও এই চরম মূর্হুতে তাদের পাশে থাকেন এবং সকলকে আর্শীবাদ করেন।”
-ফাদার বাবলু সি. কোড়াইয়া