Hierarchical Relationship & Pastoral Ministry in the parish এ মূলভাবকে কেন্দ্র করে গত ১০ জানুয়ারি, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হলো ধর্মপ্রদেশীয় যাজকবর্গের বার্ষিক সেমিনার। এ সেমিনারে উপস্থিত ছিল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, ভিকার জেনারেল ফা: ইন্মানুয়েল কানন রোজারিওসহ ধর্মপ্রদেশের কর্মরত বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৪০ জন ফাদার। প্রার্থনা, বাইবেল ও প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে সেমিনারের কার্যক্রম শুরু করা হয়।
শ্রদ্ধেয় বিশপ তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন- ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে চাইলে অবশ্যই আমাদেরকে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আর সে সুসম্পর্ক গড়তে হবে ঈশ্বরের সঙ্গে, আমরা যেখানে থাকি সেই প্রতিষ্ঠানে ও ধর্মপল্লীতে অবস্থানরত সকল মানুষের সাথে। পালকীয় সেবাকাজকে সুন্দর ও ফলপ্রসূ করার জন্য সুসম্পর্ক গড়া আমাদের প্রত্যেকেরই একান্ত আবশ্যকীয় কাজ। আমরা যে যেখানে কাজ করি সেখানকার ভাই পুরোহিতদের সাথে সুসম্পর্ক রাখাটাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ। যে ঈশ্বরকে আমরা চোখে দেখি না; তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা সহজ কিন্তু যাদের সঙ্গে আমরা বসবাস করি তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা প্রত্যেকেই স্বতন্ত্র, তাই আমাদের স্বাদ, চাওয়া-পাওয়া, ভাল লাগা এগুলোর মধ্যে তফাৎ আছে। কোন কোন সময় অন্যজনের ভাল লাগাটাকেও সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। সুসম্পর্ক রাখাটা মঙ্গলবাণী ঘোষণা করারই সামিল।
ফা: দিলীপ এস.কস্তা ‘খ্রিস্টমণ্ডলিতে পদ মর্যাদা ও সেবা দায়িত্ব’ এ বিষয়ে উপস্থাপনায় বলেন- পালকীয় সেবাকাজের এক বড় বিষয় হল যিশুর মত মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের সময় দেয়া, তাদের সাথে যোগযোগ করে কাজ করা, তাদের কল্যাণ করা। পরিবার পরিদর্শন, শিশু, যুবাদের প্রতি যত্ন, যারা দূরে, বিচ্ছিন্ন তাদের কাছে যাওয়া, যারা নানা সমস্যা, প্রয়োজনে ও বিপদে আছে তাদের প্রতি মনোযোগ ও বিভিন্ন দয়ার কাজ, যারা উপাসনায় আসে না তাদের সাথে যোগাযোগ ও তাদের অনুপ্রেরণা দান করা, পাপস্বীকারের সাক্রামেন্তের ব্যবস্থা করে বিশেষভাবে যেখানে সুযোগ নেই বা বন্ধ হয়ে গেছে. যারা প্রভুর বাণী শুনতে ও গ্রহণ করতে চায় তাদের নিকট এই খ্রিস্টীয় সেবা পৌছে দেওয়া।
ফা: সুশীল লুইস পেরেরা ‘পালকীয় সম্পর্ক ও যাজকীয় সেবাকাজ’ এ বিষয়ে তার বক্তব্যে বলেন- উত্তম পালক (যোহন ১০:২৭-২৯) যিশুর অনুসরণে ও আদর্শে আমরা সর্বস্তরের ভক্তগণের পালক। যিশু উত্তম পালক এটি খুবই সুন্দর একটি প্রতীক। পালকের ভালবাসা কখনো শেষ হয় না। পালক হিসেবে আমাদের যিশুর মত পালের সকলের সাথে স্থান কাল ভেদে আন্তরিক সম্পর্ক থাকা ও রাখা এক গুরুত্বপূর্ণ কথা। যিশু পালক যেমন সবার সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন আমাদেরও তাঁরই মত মানুষের সাথে দয়ার/মমতার (মম+তা, ত্ব = মমত্ব, স্নেহ; দয়া পরের সুখ নিমিত্ত; মায়া- { মায়া আত্মসুখ নিমিত্ত; মায়া আবিল, দয়া নির্মল, মায়ায় বদ্ধ হয়, দয়ায় আপ্লুত হয়, সিক্ত হয়, মায়া পার্থিব, দয়া স্নেহ, প্রেম স্বর্গীয়, অস্থাবর, সাংসারিক ভোগ্য মাত্রকেই মায়া করে ভগবান প্রেমের পাত্র, পাপী কৃপার পাত্র, পুত্র স্নেহের পাত্র, ভিখারী কৃপার পাত্র, ঐশ্বর্য সম্পদ আত্মীয় স্বজন মায়ার পাত্র) আমরা অন্যের সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক রাখতে আহুত।
এভাবে সবার সাথে সম্পর্ক রেখে আমরা নিজেদের বাস্তবতায় তাঁরই মত নিঃস্বার্থভাবে দয়ামমতায় সেবা কাজ ক’রে যাব সেটাই তো সবার প্রত্যাশা।
আলোচনার পরে ভিকারিয়া ভিত্তিক দলীয় আলোচনা করা হয়। অত:পর দলীয় প্রতিবেদনও পাঠ করা হয়। সবশেষে উন্মুক্ত আলোচনার মধ্যদিয়ে সেমিনারের কার্যক্রম শেষ করা হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার