গত ১১ ফেব্রুয়ারি বনপাড়া, লূর্দের রাণী মারীয়া তীর্থ ও ধর্মপল্লীর পর্ব উদযাপন করা হয়। তীর্থের ও পর্বদিনের খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ফা: প্যাট্রিক গমেজ। তাঁর সহাপির্ত খ্রিস্টযাগে ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ এস.কস্তা, সহকারি পাল-পুরোহিত ফাদার পিউস নিকু গমেজ ও সেন্ট যোসেফ স্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল শংকর ডমিনিক গমেজসহ আরো ১০ জন ফাদার, ১২ জন সিস্টার ও প্রায় ১,৫০০ মত খ্রিস্টভক্ত পর্বীয় খ্রিস্টযাগে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক খ্রিস্টভক্ত তাদের মানত পূর্ণ হওয়ায় মায়ের প্রতি তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যেও খ্রিস্টযাগে যোগদান করতে আসেন। এখানে উল্লেখ্য যে, তীর্থের প্রস্তুতিস্বরূপ চলে নয় দিনের নভেনা। বিভিন্ন ফাদারগণ, মা মারীয়ার বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে খ্রিস্টযাগের উপদেশ দেন ও নভেনা পরিচালনা করেন। নভেনার খ্রিস্টযাগে শত শত খ্রিস্টভক্তগণ যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন নভেনায় অংশগ্রহণকারি খ্রিস্টভক্তগণ।
খ্রিস্টযাগের শুরুতেই বিগত বছরের সকল দয়াদানের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পর্বকর্তা ও মিসার উদ্দেশ্য দাতাদের নাম ঘোষণা করা হয়। ফাদার প্যাট্রিক গমেজ তার খ্রিস্টযাগের উপদেশে বলেন, “আজ আমরা উদযাপন করছি, লুর্দের রাণী মারীয়া তীর্থ ও বনপাড়া ধর্মপল্লীর পর্ব দিবস। লূর্দের রাণী মারীয়াকে রোগীদের সুস্থতা দানকারী মারীয়া হিসেবেও অভিহিত করতে পারি। তাই অসুস্থ মানুষের মাঝে যিশুর যন্ত্রণাভোগী চিত্র দেখি। কেননা অসুস্থদের কষ্ট যিশুর কষ্টের সাথে মিশিয়ে অসুস্থতা হয়ে উঠে আশির্বাদস্বরূপ। আমরাও অসুস্থ শারীরিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক ও নৈতিকভাবে। তাই, লূর্দের রাণী মারীয়া বার্নাডেটের কাছে দর্শন দান করে এই বাণী রাখেন পাপীর মন পরিবর্তনের জন্য প্রার্থনা কর, রোজারী মালা প্রার্থনা কর, কেননা আমি অমলোদ্ভবা। তাই তোমরা সবাই পবিত্রতার বসন পরিধান কর। পারিবারিক প্রার্থনা প্রসঙ্গেও তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন- আমাদেরকে রোজারীমালা প্রার্থনা করতে হবে এবং আমাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে তা শিখাতে হবে। রোজারীমালা প্রার্থনার শ্লোগান দিয়ে তিনি বলেন- প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা, ঘরে ঘরে রোজারীমালা। আমরা যেন অন্ততপক্ষে রোজারীমালা প্রার্থনা জপ করার মধ্যদিয়ে আমাদের পরিবারগুলোকে মায়ের হাতে রাখি। অবশ্য এক্ষেত্রে বর্তমানে যে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো হল-টিভি, মোবাইল, ফেসবুক অর্থাৎ প্রার্থনার সময়টুকু যেন এই ডিভাইসগুলো আমাদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে। তাই আবারও বলতে চাই, আমাদের জীবন চলার পথে আমরা যেন মা মারীয়াকেই বিশ্বাসের আদর্শতম স্থানে রাখি। তিনি যেভাবে বিশ্বাসপূর্ণ অন্তর নিয়ে কানা নগরে বিবাহভোজে যিশুকে অনুরোধ করেছিল; এদের দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গেছে এ বিষয়ে যিশু যেন কোন কিছু করে তাদেরকে সাহায্য করেন। অর্থাৎ এমনিভাবে আমরা যখন বিশ্বাসপূর্ণ হৃদয় নিয়ে মা মারীয়ার মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করি তখন তিনি আমাদের প্রার্থনাগুলো তার সন্তান যিশুর কাছে নিবেদন করেন এবং আমাদের প্রয়োজন মেটাবার জন্য সর্বদা চেষ্টা করেন। তাই, মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, তাকে স্মরণ করা আমাদের আধ্যাত্মিক জীবনের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হওয়া উচিত। এছাড়াও বর্তমান বিশ্বের এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নিজেদের জন্য অসুস্থদের জন্য মায়ের কাছ থেকে বিশেষ কৃপা ও আশির্বাদ চাইতে পারি কারণ মা সর্বদা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন। পর্বীয় খ্রিস্টযাগের প্রস্তুতি ও অংশগ্রহণ দেখে ফাদার গমেজ তার প্রশংসা করে বলেন- আজকের খ্রিস্টযাগটি হচ্ছে সিনোডাল চার্চের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কেননা, সবাই যার যার স্থানে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। আসলে এমনটিই হওয়া দরকার। তাই, আজকের এই খ্রিস্টযাগের ন্যায় আমরাও যেন প্রত্যেকেই সিনোডাল চার্চ হয়ে উঠার চেষ্টা করি।
পবিত্র খ্রিস্টযাগের শেষ আশির্বাদের আগে পর্বীয় বিস্কুট আশির্বাদ করেন ও পরে রোগীদের নিরাময় কামনা করে প্রার্থনা করেন। অত:পর পর্বীয় মহা খ্রিস্টযাগের বিশেষ আশির্বাদ দান করেন প্রধান পৌরহিত্যকারী ফাদার প্যাট্রিক গমেজ। তারপর সকল ফাদারগণ লূর্দের রাণী মারীয়ার মূর্তির কাছে গিয়ে নীরবে প্রার্থনা করেন।
পাল-পুরোহিত দিলীপ এস.কস্তা খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণকারী সকল ফাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তদেরকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন- সবাইকে পর্বীয় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। আজকের এই পর্বকে সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য সর্ব প্রথম ঈশ্বরকে এবং সেই সাথে নয় দিনের নভেনায় ও আজকের এই পর্বীয় মহাখ্রিস্টযাগে যারা বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। লূর্দের রাণী মারীয়া আমাদের সকলকে আশির্বাদ করুন এই শুভ কামনা করে পর্বীয় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে তার বক্তব্য শেষ করেন।