“ভালোবাসা ও সেবায় ৫০ বছরের পথ চলা” এ মূলসুরকে কেন্দ্র করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কারিতাস বাংলাদেশ রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক কার্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে অঞ্চল পর্যায়ে কারিতাস বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর সমাপনী অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্য দিয়ে বর্ষব্যাপী জুবিলী উদযাপনের সমাপ্তি হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ফজলে হোসেন বাদশা, সংসদ সদস্য, রাজশাহী-২, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি. ডিডি. বিশপ, রাজশাহী কাথলিক ধর্মপ্রদেশ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যথাক্রমে মো. আব্দুল জলিল, জেলা প্রশাসক, রাজশাহী; ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, ভিকার জেনারেল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন স্তরের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা/কর্মীবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উন্নয়ন মিত্র, যুবক-যুবতী, কারিতাসের সহযোগী সমিতির সদস্য সদস্যা এবং আদিবাসী সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া প্রতিনিধি, সমমনা এনজিও প্রতিনিধিসহ চারশতাধিক লোক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মি. ডেভিড হেম্ব্রম, আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জনাব ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমি জানি এবং দেখেছি কারিতাস বাংলাদেশ দেশে দুঃস্থ ও পিছিয়েপড়া জনগণের জন্য কাজ করে। তাদের ৫০ বছরের কাজের দৃষ্টান্ত এ দেশে অনেক। কারিতাসের কাজের অনেক অগ্রাধিকারের মধ্যে আদিবাসীদের উন্নয়ন অন্যতম। আর এ জনপদের আদিবাসীদের অধিকার ও মাতৃভাষা সুরক্ষাসহ সকল ধরনের সহযোগিতা আমাদের পক্ষ হতেও প্রদান করা হবে। এছাড়া কারিতাস বাংলাদেশের কাজের সাথে আমিও যেহেতু সম্পৃক্ত তাই তাদের কাজে যে কোন ধরনের সহায়তা আমাদের পক্ষ হতে অবশ্যই প্রদান করা হবে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভেদ ভুলে গিয়ে আমরা সকলে একসাথে কাজ করে দেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের গেস্ট অব অনার বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি. ডিডি. বলেন, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ও যুদ্ধ পরবর্তীতে বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব ও পুনর্বাসন কাজ থেকে শুরু করে দেশের সমন্বিত উন্নয়নে কারিতাস ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমানে কারিতাস বাংলাদেশ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। তন্মধ্যে আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিকতা উন্নয়ন, মানবীয় মূল্যবোধ উন্নয়ন, প্রকৃতি ও পরিবেশতগত উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, শিশু উন্নয়ন, সকল মানুষের সমন্বিত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রভৃতি অন্যতম।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি মো. আব্দুল জলিল, জেলা প্রশাসক, রাজশাহী বলেন, স্বাধীনতার পর হতে কারিতাস বাংলাদেশ দেশে বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম শুরু করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, কৃষি, আদিবাসীদের উন্নয়নসহ ব্যাপক কার্যক্রম বর্তমানেও পরিচালনা করছে। তিনি ভবিষ্যতে পার্টনারশিপের মাধ্যমে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে কারিতাস বাংলাদেশ ভালবাসায় ৫০ বছরের পথচলায় ঐতিহাসিক ও উল্লেখযোগ্য অর্জন সহভাগিতা করেন মি. কার্তিক মিঞ্জ, কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, রেভা. ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, ভিকার জেনারেল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ; ফাদার উইলিয়াম মুর্মু, পরিচালক, উন্নয়ন ও প্রশাসন, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ এবং কারিতাসের নির্ধারিত প্রাক্তন কর্মকর্তাগণ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কারিতাসের কার্যক্রমের উপর জীবনসাক্ষমূলক বক্তব্য প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি মি. ডেভিড হেম্ব্রম, আঞ্চলিক পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত), উপস্থিত সকলকে এ সুবর্ণজয়ন্তী সফল করতে সহযোগিতাদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। এছাড়া তিনি কারিতাস কার্যক্রমে যে কোন সময় যে কোন প্রকার পরামর্শ রাখার অনুরোধ করেন: যেন কারিতাসের কাজকে আর স্বার্থক ও সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা অব্যাহত রাখা যায়। উল্লেখ্য তিনি কারিতাস বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দিকও তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের উল্লেযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল বর্ণাঢ্য র্যালি, জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কারিতাস পতাকা উত্তোলন ও কারিতাস সংগীত পরিবেশন, কবুতর-বেলুন ও ফেস্টুন ঊড়ানো, অতিথিদের বরণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হতে পাঠ ও কারিতাস জুবিলী প্রার্থনা, রক্তদান কর্মসূচি, স্টল পরিদর্শন, স্মারক বৃক্ষ রোপন, উদ্বোধনী নৃত্য, অতিথিদের বক্তব্য, ক্রেস্ট প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লাকী কূপন ড্র, পুরস্কার বিতরণী ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা কারিতাসের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালন ও কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মি. দীপক এক্কা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (ডিএম) এবং মিস র্যান্সি রুথ হাঁসদা, কর্মসূচি কর্মকর্তা (আলোকিত শিশু), কারিতাস রাজশাহী অঞ্চল।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: অসীম ক্রুশ