গত ২৪ই নভেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দে বিকাল ৪:০০ টায় ডিকন রবিন যোয়াকিম হেম্ব্রম-এর যাজকীয় অভিষেক লাভের পূর্বে তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করে সাক্রামেন্তীয় আরাধনা করা হয়। পরে তাকে আশির্বাদ প্রদান ও মিষ্টি মুখ করানো হয়। এই আশির্বাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ ও ডিকনের আত্মীয়-স্বজন ও ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তগণ।
২৫ নভেম্বর ২০২২ খ্রিস্টাব্দ ডিকন রবিন যোয়াকিম হেম্ব্রমকে যাজকপদে অভিষিক্ত করা হয়। অভিষেক অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও ও তাঁর সহার্পিত খ্রিস্টযাগে ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং ৪০ জনের অধিক ফাদার। পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত সিস্টারগণ ও খ্রিস্টভক্তগণ।
খ্রিস্টযাগে বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয় বলেন- রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীতে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে একটি মহান আশ্চর্য কাজ সংঘটিত হতে হচ্ছে। আমাদের সকলের উপস্থিতিতে এই আশ্চর্য কাজটি সম্পন্ন হবে। যাজকীয় অভিষেক একটি আহ্বান, যাজকীয় অভিষেক একটি বিশেষ ডাক এবং যাকজীয় অভিষেক হচ্ছে একটি আশ্চর্য কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিকন যোয়াকিম হেম্ব্রমের মাথায় হস্ত স্থাপনের ও যাজকীয় অভিষেক প্রার্থনার মধ্যদিয়ে এই আশ্চর্যকাজটি সংঘটিত হবে। এরপর থেকে ডিকন যোয়াকিম রবিন হেম্ব্রম আর ডিকন হিসেবে নয় বরং একজন অভিষিক্ত যাজক হিসেবেই পরিচিত হবে। খ্রিস্টের যাজক অপরখ্রিস্ট এই যাজকীয় কাজে তার হাতে এই রুটি এবং দ্রাক্ষারস যিশুর দেহ এবং রক্তে রূপান্তরিত হবে। খ্রিস্টযাগ অর্পণের মধ্যদিয়ে সে নিজে তার যাজকীয় জীবনে উত্তম মেষপালক যিশু খ্রিস্টকে আমাদের মাঝে সর্বদা উপস্থিত করবেন। যতদিন তিনি খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করবেন ততদিন তিনি আমাদের জন্যে খ্রিস্টকে বাস্তবরূপে, সত্যিকাররূপে এবং প্রকৃতরূপে তাঁকে উপস্থাপন করবেন। সেই খ্রিস্টকে যিনি চিরজীবি, যিনি পুনরুত্থিত। তিনি বলেছেন, আমি সর্বদাই তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি। এই অভিষেকের পরেই তিনি যখন পাপস্বীকার সাক্রামেন্ত প্রদান করবেন, তখন তিনি অপরখ্রিস্ট হয়ে নিজেই বলবেন, আমি তোমাকে তোমার সমস্ত পাপকর্ম হতে মুক্ত করছি। খ্রিস্টের নামে নয় আমিই তোমাকে মুক্ত করছি। কারণ, এ অভিষেকের মধ্যদিয়ে তিনি অপরখ্রিস্ট হয়ে যাবে, খ্রিস্টের সঙ্গে সে গভীরভাবে একাত্ব হবে এবং সেজন্যই সাধু পলের মত সেও বলতে পারবে যে, আমি জীবিত আছি এবং খ্রিস্ট আমার মধ্যে জীবিত আছেন।
আসুন, আমরা সকলেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই, কেননা, তিনি এই ধর্মপল্লী থেকে তাঁর একজন সন্তানকে বেঁছে নিয়েছেন। মণ্ডলিতে তিনি একটা বড় উপহার হিসেবে তাঁকে দান করছেন। আমরাও তার সঙ্গে আছি প্রার্থনায় ও ধ্যানে। তাই, ডিকন রবিন যোয়াকিম হেম্ব্রম খ্রিস্টের হৃদয়ের ভালবাসায় স্থিত থাক, তাহলে খ্রিস্টের আনন্দ তোমার জীবনে থাকবে এবং তোমার জীবনের আনন্দ পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও বলেন- খ্রিস্টমণ্ডলির সূচনা থেকে আজ অবধি কাথলিক মণ্ডলিতে যাজকদের অবদান ও সেবাকাজ অতুলনীয় ও অবিস্মরণীয়। একজন কাথলিক খ্রিস্টভক্তের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাজকীয় সেবাকাজের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই বলা হয়, কাথলিক মণ্ডলিতে যাজকগণ হলেন ঐশজনগণের সেবাকর্মী। তারা অনেকের মধ্য থেকে বাছাইকৃত, মনোনীত ও মহাযাজক খ্রিস্ট কর্তৃক অভিষিক্ত ব্যক্তি। তারা ঐশবাণী সেবাকর্মী, সংস্কারাদি ও খ্রিস্টপ্রসাদের সেবাকর্মী এবং ঐশ জনগণের শাসনকারী।
মণ্ডলিতে যখন দীর্ঘ প্রস্তুতির পর একজন ডিকনকে যাজকপদে অভিষিক্ত করা হয় তখন স্বর্গে ও পৃথিবীতে আনন্দের সাড়া পরে যায়। এই আনন্দের প্রধান কারণ হল: একজন অভিষিক্ত ব্যক্তি যাজক খ্রিস্টভক্তদের স্বর্গের পথ দেখান। ঈশ্বরের অনুগ্রহে তাঁর অভিষিক্ত হাতের স্পর্শেই প্রতিটি খ্রিস্টযাগে সাধারণ রুটি ও দ্রাক্ষারস প্রভু যিশুর দেহ ও রক্তে পরিণত হয়। প্রভু যিশুর পবিত্র দেহ-রক্ত অন্তরে গ্রহণ করে খ্রিস্টভক্তগণ ঈশ্বর ও মানুষের সাথে মিলনাবদ্ধ হওয়ার সুযোগ লাভ করে। এজন্য যাজকবরণ সাক্রামেন্তের মর্যাদা ও গুরুত্ব অন্য কোন কিছুর সাথেই তুলনা করা যায় না।
রাজশাহী উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর সন্তান ডিকন যোয়াকিম রবিন হেম্ব্রম-এর যাজকীয় অভিষেক উপলক্ষ্যে আমি সত্যিই অত্যন্ত আনন্দিত। তাঁর যাজকীয় অভিষেকের মধ্যদিয়ে আমাদের ধর্মপ্রদেশে যাজকদের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর আরো অনেক শিশু ও যুবারা ধর্মীয় জীবনাহ্বানে সাড়া দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হবে বলে প্রত্যাশা করি।
পরিশেষে, উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর সকলের সার্বিক কল্যাণের জন্য ঐশ অনুগ্রহ যাচ্না করি। মঙ্গলময় পিতা পরমেশ্বর আপনাদের সবাইকে তাঁর মঙ্গলাশীর্বাদে নিত্যই ঘিরে রাখুন।
নব অভিষিক্ত ফাদার রবিন যোয়াকিম হেম্ব্রম তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- যাজকত্ব হল ঈশ্বরের মহান দান। এই মহান দান পেয়ে আজ আমি সত্যিই আনন্দিত। আমি যাজক হওয়ার অনুপ্রেরণা পাই শ্রদ্ধেয় ফাদার পাওলো চিচেরি, পিমে-এর জীবনাদর্শ দেখে। তিনি অনেক সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। অসহায়, দরিদ্র, অসুস্থ, শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকলকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবেসেছেন এবং তাদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। বিশেষত, শিশুদের তিনি অনেক ভালবাসতেন। ফাদারের এই সহজ সরল জীবন ও শিশুদের প্রতি ভালবাসা আমাকে যাজক হতে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। এই আহ্বানকে বেড়ে উঠতে বা জাগ্রত করতে বেশি সহায়তা করেছে মুক্তিদাতা স্কুলের আমার সহপাঠিগণ। আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী, অনেক ফাদার ও সিস্টারগণের উপদেশ, পরামর্শ ও প্রার্থনা আমার আহ্বানকে পরিপক্কতা দান করতে সহায়তা করেছে। তাইতো নিজেকে মণ্ডলির কাজে সমর্পণ করে আমি বলতে পারছি, “প্রভু আমায় ডেকেছ, এই তো আমি” (১ সামুয়েল ৩:৪)। আমি অযোগ্য ব্যক্তি তবুও ঈশ্বরই আমাকে তার দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য যোগ্য করে তুলেছেন। এজন্য পিতা পরমেশ্বরকে অন্তরের গভীর থেকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
ক্যাথিড্রাল ধর্মপল্লীর ফাদার ইনচার্জ ফাদার উত্তম রোজারিও সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন- আজকের এই শুভদিনে আমরা ঈশ্বরের আশির্বাদ পেয়েছি এবং অভিষেক অনুষ্ঠান আমাদের ধর্মপল্লীতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেই জন্য আমরা সকলেই পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এবং দ্বিতীয়তঃ আমাদের ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিওকে আন্তরিকভাবে ধর্মপল্লীবাসী এবং সবার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তিনি আজকে এই যাজকীয় অভিষেকের অনুমতি এবং সহায়তা দিয়েছেন। আমরা সত্যিই আনন্দিত কারণ আমাদের ধর্মপল্লীর প্রাক্তন পাল-পুরোহিত আমাদের বর্তমান বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ শ্রদ্ধেয় ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও আজকের এই অভিষেক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন। ডিকন যোয়াকিমকে যাজকপদে অভিষিক্ত করেছেন। এটা আমাদের জন্যে সত্যিই অনেক আনন্দের। এই জন্য আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিওকে আমাদের সকলের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জানাই। ধন্যবাদ জানাই সকল ফাদার-সিস্টারদের এই পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করার জন্য এবং সার্বিকভাবে যারা সহায়তা করেছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার