গত ১১-১৪ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী বনানীতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃসংঘের বার্ষিক সেমিনার ও মিলনমেলা। বিগত একটি বছরের সকল কর্মকান্ড ও ব্যস্ততা কাটিয়ে আবারও বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃসংঘের যাজকগণ মিলিত হয়েছে এক কাতারে। এ যেন এক আশির্বাদপুষ্ট সময়। ভাই পুরোহিতের সাথে ভাই পুরোহিতের মিলন। বিগত জীবনের সুখ-দুঃখ সহভাগিতার অবকাশ। এ আবেগ-অনুভূতি সফলতা-ব্যর্থতা-হতাশা, একাকিত্ব মানসিক যন্ত্রণা এই সকলই ভাগাভাগির এক বিশেষ মুহুূর্ত। তাই, একে অপরের সান্নিধ্যে এসে লাভ করে প্রেরণা, উৎসাহ, উদ্দীপনা ও শক্তি নতুন করে পথ চলা।
এই সেমিনারীর মূলভাব ছিলো, “বর্তমান জগত, জীবন ও খ্রিস্ট ধর্ম শিক্ষার গুরুত্ব”। এই যাজক ভ্রাতৃসংঘের বার্ষিক সাধারণ মিলনসভায় প্রায় ২০০ জন যাজক উপস্থিত ছিলো।
এই বার্ষিক সাধারণ মিলনসভায় সভাপতিত্ব করেন বিডিপিএফ এর সভাপতি ফাদার মিন্টু এল পালমা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বিশপ রমেন জেমস বৈরাগী, বিশপ ইম্মানুয়েল রোজারিও, বিশপ সেবাষ্টিায়ন টুডু এবং বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশের ভিকার জেনারেলগন।
সকালে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে শুরু হয় দিনের কার্যক্রম। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ পল পনেন কুবি। এরপর সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরু হয় সকাল ৮:৩০ মিনিটে ভ্রাতৃসংঘের সভাপতি ফাদার মিন্টু এল পালমার স্বাগতিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। এরপর বিশপ জের্ভাস রোজারিও বিডিপিএফ এর বার্ষিক সাধারণ মিলনসভার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও মূলসুরের উপর বক্তব্য উপস্থাপন করে বলেন, “বিশপগণ, ফাদারগণ হলেন মণ্ডলিতে প্রধান কাটেখ্রিস্ট তাই তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে ধর্মশিক্ষা দেওয়া।”
বিশপ আরো বলেন, “মণ্ডলিতে আমরা ফাদার ও সিস্টারগণ বিভিন্ন ধরনের পালকীয় সেবা কাজ করে থাকি তবে তার মধ্যে আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে গুরুত্বের সাথে ধর্মশিক্ষা দেওয়া তাই এই বিষয়ে আমরা যেন আরো বেশী সচেতন থাকি।”
জুবিলী পালনকারী ফাদার এলিয়াস মন্ডল, তাঁর যাজকীয় জীবনের ২৫ বছরের পালকীয় সেবা দানের অভিজ্ঞতার আলোকে সহভাগিতা করে বলেন, আমি প্রথমেই ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই কারন আমি দুর্বল মানুষ হওয়া সত্বেও ঈশ্বর আমাকে বেঁছে নিয়েছেন তাঁর কাজের জন্য এটা আমার জীবনে একটা বড় দান ও উপহার।
ফাদার আরো বলেন, আমার যাজকীয় জীবনের ২৫ বছরের পালকীয় সেবাকাজ করতে গিয়ে আমি অনেক ভাল ও কষ্টের অভিজ্ঞতা করেছি যা আমার যাজকীয় জীবনের সামনের দিতে যেতে অনুপ্রেরণা যুগায়।
এছাড়াও যাজক ভ্রাতৃসংঘের বার্ষিক সাধারণ মিলনসভায় আলোচনা করা হয় সামাজিক যোগাযোগ এর মাধ্যমে কাথলিক মন্ডলীর ধর্ম শিক্ষা এবং জাতীয় শিক্ষানীতি ও মন্ডলীর শিক্ষানীতি এবং স্কুল কলেজের খ্রীষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে।
এরপর প্রয়াত ধর্মপ্রদেশীয় বিশপ-যাজকদের জীবনির উপর বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বাংলাদেশ খ্রিস্টমণ্ডলির পাঁচশত বৎসরের ইতিহাসে স্থানীয় মন্ডলীর ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের ইতিহাস একশত বৎসরের অধিক, সেই বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকেই। এ যাবৎ বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন ধর্মসংঘের যাজক ছাড়া ৩৪০ জন ধর্মপ্রদেশীয় যাজক হয়েছেন। এর মধ্যে ৬০ জন যাজক স্বর্গবাসী হয়েছেন। এই ৬০ জন যাজকের মধ্যে ৩ জন বিশপ রয়েছেন।
তবে প্রয়াত ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ৫৭ জন এবং ৩ জন বিশপের জীবনি ও তাদের পালকীয় সেবা কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে এই বইটি লেখা হয়েছে।
পরিশেষে সন্ধ্যায় পবিত্র খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করার মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয় ভ্রাতৃসংঘের ২০২৩ এর বার্ষিক সাধারণ মিলনসভা। আর এই সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসগ করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল রোজারিও, তিনি বলেন, “ভ্রাতৃসংঘের এই বার্ষিক মিলন সভা আমাদের যাজক ভাইদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মিলনসভা। কারণ এর মধ্যদিয়ে আমরা ভাইয়ে ভাইয়ে মিলনাবদ্ধ হই। তবে আমাদের এ ভাইয়ের সম্পর্ক যদিও রক্তের সম্পর্ক নয় বরং এ সম্পর্ক হচ্ছে আমাদের হৃদয়ের ও আত্মার সম্পর্ক যা কখনো বিছিন্ন হবার নয়।”
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার