গত ১৮ আগস্ট সিবিসিবি সেন্টারে “এশিয়ার বিশপ সম্মিলনী এবং বাংলাদেশ মণ্ডলি একসাথে পথ চলা” বাংলাদেশ ক্যাথলিক বিশপ সম্মিলনী আয়োজিত সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত সেমিনারে প্রতিটি ধর্মপ্রদেশের আর্চ বিশপদ্বয় ও সকল বিশপগণ এবং প্রতিটি ধর্মপ্রদেশ থেকে পাঁচ জন করে ধর্মপ্রদেশীয় প্রতিনিধি ফাদার, সিস্টার, কাটেখ্রিস্ট এবং খ্রিস্টভক্তগণ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধর্মসংঘের সুপিরিয়র জেনারেলগণ এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
সেমিনারের উদ্দেশ্যসমূহ ছিল: ১. এফএবিসির ভিশন, মিশন, কাঠামো এবং কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে পরিচিত করা। ২. এফএবিসির সাথে বাংলাদেশ মণ্ডলির এক সাথে পথ চলার উল্লেখযোগ্য ঘটনাসমূহ তুলে ধরা। ৩. আগামী দিনের বাস্তবতায় এফএবিসি এবং বাংলাদেশ মণ্ডলির একসাথে পথ চলার নতুন পথের সন্ধান করা।
সেমিনারের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিবিসিবি’র জেনারেল সেক্রেটারী পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ পল পনেন কুবি, সিএসসি।
সেমিনারের ১ম অধিবেশন এফএবিসির ভিশন, মিশন, কাঠামো এবং এফএবিসির বিভিন্ন পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সম্মিলনীসমূহ বিষয়ে আলোকপাত করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। তিনি এফএবিসি সংগঠন এবং সংগঠনের বিশপগণের এশিয়া মহাদেশের বাস্তবতার আলোকে একত্রে যুগোপযোগী অনুচিন্তন ও এশিয়া মণ্ডলির জন্য দিক্ নির্দেশনামূলক বিষয়বস্তুর উপর ১১টি প্লেনারী এসেম্বলী-এর উপর তাঁর উপস্থাপনা ছিল প্রাণবন্তু এবং তত্ত্ব ও তথ্যবহুল।
সেমিনারের ২য় অধিবেশন ‘একত্রে পথ চলার নতুন পথের সন্ধান’ (এফএবিসির ৫০ বছরে জুবিলী চূড়ান্ত প্রতিবেদনের আলোকে) আলোকপাত করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারি। তিনি তাঁর সহভাগিতায় এশিয়া ও বাংলাদেশ মণ্ডলির বর্তমান বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। অত:পর তিনি বাইবেলীয় ‘তিন পণ্ডিতের’ যাত্রাকে আমাদের একত্রে যাত্রার ‘মডেল’ হিসেবে উপস্থাপন করতে প্রয়াসী হয়েছেন। যা ছিল সকলের কাছে বোধগম্য এবং বাস্তবধর্মী। তিনি সুস্পষ্ট করেছেন যে, আমাদেরও একত্রে যাত্রার জন্য ‘তারার’ প্রয়োজন রয়েছে, যা উর্ধ্বলোক থেকে আসে, অর্থাৎ পবিত্রাত্মার আলো এবং পরিচালনা; আমাদেরও তিন পণ্ডিতের মত যিশুর জন্য মহামূল্যবান উপহার প্রস্তুত করতে হবে; আমাদেরও নতুন পথের অনুসন্ধান করে যাত্রা করতে হবে।
ফা: মার্কুশ মুর্মু তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমাদেরও একত্রে যাত্রার জন্য ‘তারার’ প্রয়োজন রয়েছে, যা উর্ধ্বলোক থেকে আসে, অর্থাৎ পবিত্রাত্মার আলো এবং পরিচালনা; আমাদেরও তিন পণ্ডিতের মত যিশুর জন্য মহামূল্যবান উপহার প্রস্তুত করতে হবে; আমাদেরও নতুন পথের অনুসন্ধান করে যাত্রা করতে হবে। দলীয় আলোচনা সর্বজনীন মণ্ডলি, এশিয়া মণ্ডলি, স্থানীয় মণ্ডলি, মিলনধর্মী মণ্ডলি , অবধারণ, নতুন পথ, প্রভৃতি ধারণাকে আরও গভীর এবং সুস্পষ্ট করেছে বলে আমি মনে করি। তিনি আরো বলেন, পরিশেষে, নির্ধিদ্বায় বলতে পারি, সেমিনারটি ফলপ্রসূ হয়েছে; আমরা অংশগ্রহণকারীগণ উপকৃত হয়েছি এবং মিলনধর্মী মণ্ডলি ‘হওয়া’ ও ‘করণীয়’ সম্পর্কে দিক নির্দেশনা লাভ করেছি। আয়োজক মণ্ডলি, বাস্তবায়নকারী, উপস্থাপকদ্বয় এবং অংশগ্রহণকারীগণ-সকলের প্রতি রইল অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। ঈশ্বর সর্বদা আমাদের সহায় থাকুন।
রোজলিন কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, FABC AND BANGLADESH CHURCH : JOURNEIYNG TOGETHER বিষয়ক সেমিনারে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এভাবে FABC’ র ভিশন, মিশন এবং সম্মিলনীগুলো সম্পর্কে জানতে পারা একটি নতুন অভিজ্ঞতা। Synodality এর এই একত্রে যাত্রার জন্য নতুন পথের অনুসন্ধান ৮টি ডায়োসিসের প্রতিনিধিরা সকলে মিলে সন্ধান করার চেষ্টা করেছি, অনুসন্ধানের এই প্রক্রিয়াটি খুব ভালো লেগেছে। আমরা সবাই মিলে যেন যাত্রার এই কঠিন পথকে সুগম করতে পারি এবং প্রত্যাশিত একটি ফলাফল পেতে পারি এটা আমার অন্যতম চাওয়া। পবিত্র আত্মা যেন আমাদের জীবনের পথকে আলোকিত করে, পরিচালিত করে।
ইভা মারাক্ তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এই সেমিনারের তাৎপর্য অনেক গুরুত্ব বহন করে। অনেক অজানা তথ্য জানা ও খ্রিস্টীয় ক্যাথলিক সমাজ গড়ে তুলতে সকলের ভূমিকা সম্পর্কে জানা। আশা করি, পরবর্তীতে অংশগ্রহণকারী সকলে খ্রিস্টীয় আদর্শের গড়ে ওঠা মণ্ডলিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
চট্টগ্রাম মহাধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টভক্ত মানিক তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন ঠিক এভাবে– নতুন ভাবধারায় মণ্ডলি হয়ে ওঠার মানসে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দ থেকে এফএবিসি এশীয় মণ্ডলিকে সমন্বিত করার যে প্রয়াস চলমান রেখেছে, আজকের সেমিনার থেকে তা সুস্পষ্ট হয়েছে। এফএবিসির ১১টি প্লেনারি এসেম্বলির যে প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলো ছিল জীবন ঘনিষ্ঠ ও যুগ লক্ষণ অনুসারে নির্ধারিত। এটি সুস্পষ্ট যে, ৫০ বছরের সাধনায় এফএবিসি ফলশালী। তথাপি এই ফলসমূহ দেশীয় মণ্ডলিতে আশানুরূপ বিস্তার হয়নি বলে মনে হয়। এফএবিসির সামগ্রিক ভাবনায় পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ মণ্ডলিতে পারিবারিক সেবাকাজে আরো নবায়ন প্রয়োজন। বহু পরিবার আছে যারা নানাবিধ কারণে মণ্ডলি বহির্ভূত বৈবাহিক সম্পর্কে আছে, সাক্রামেন্ত থেকে বঞ্চিত আছে। তাদের প্রতি বিচারকসুলভ আচরণ না করে খ্রিস্টের ন্যায় গ্রহণীয় আচরণ করতে উপযুক্ত পালকীয় পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেন জীবনদশায় সকলেই প্রভুতে মিলিত হতে পারে। এশীয় মণ্ডলির পালকীয় পদ্ধতি আসিপা সমাজ অর্থাৎ ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ গঠন করা সম্ভব হলে এসব স্থানীয় মণ্ডলিই কোন্ কোন্ পরিবারের অধিকতর পালকীয় যত্ন ও নিরাময় প্রয়োজন তা নিরূপণ করতে সহায়ক হতে পারে।
সমাপনী খ্রিস্টযাগের উপদেশে আর্চ বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুশ বলেন, একসাথে পথচলার একটি সুস্পষ্ট উদাহরণ হচ্ছে পরিবার। আর এই একতাবদ্ধ জীবনের একতা বেশি করে প্রকাশ পায় বিবাহিত জীবনে। তাই আজকের পাঠে বলা হয়েছে যে, ঈশ্বর যাকে যুক্ত করেছেন মানুষ যেন তা বিচ্ছিন্ন না করে। যিশু ও মণ্ডলির মধ্যে সেই একতাই তিনি আমাদের জীবনে দান করেছেন। অর্থাৎ যিশুর ভালোবাসা মাণ্ডলিক জীবনে ভালোবাসার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি আরো বলেন, যাজকীয় জীবন ও ব্রতধারি-ব্রতধারিণীদের জীবনে অনেক দান-দক্ষিণা আছে, আছে ভালোবাসা। কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা নিহিত আছে একতার মধ্যেই। তবে এই একতাবদ্ধ জীবনে রয়েছে এক গভীর আত্মত্যাগ। আর এই আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই পারিবারিক জীবনকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে হবে। যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে প্রকৃত ভালোবাসা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। প্রকৃত ভালোবাসার জায়গাটি হলো পরিবার।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার বাবলু কোড়াইয়া