গত ১২-১৪ তারিখ পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে আন্ধারকোঠা মিশনে অনুষ্ঠিত হলো পাহাড়িয়া ছাত্র সম্মেলন ২০২৩। ৩দিন ব্যাপী এই সম্মেলনের মূলসুর হিসেবে নেওয়া হয়েছিল “শিক্ষা ও কৃষ্টি সংস্কৃতি রক্ষা এবং চর্চায় পাহাড়িয়া যুবাদের ভূমিকা।” এ সম্মেলনে ২৭ টা গ্রাম থেকে ২৬৭ জন পাহাড়িয়া ছাত্র ছাত্রী অংশগ্রহণ করে।

সম্মেলন সূচনা হয় ১২ অক্টোবর সন্ধ্যায় বরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। স্থানীয় গ্রামের যুবক-যুবতীরা কৃষ্টি অনুসারে ভেজানো চাল-গুড় খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণকারী সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বরণ করে নেয়। পাহাড়িয়া ভাষা গবেষক মিস্টার অভিলাষ বিশ্বাস , পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের ভাষা , কৃষ্টি ও সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং পাহাড়িয়া জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে অনেকাংশে ধারণা দেন। পরিচয় পর্ব এবং সম্মেলনের কিছু দিক নির্দেশনার মধ্য দিয়ে প্রথম দিন শেষ হয়।
১৩ অক্টোবর সকালে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র খ্রিস্টযাগ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দ্বিতীয় দিন তথা উদ্বোধনীর দিন। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন হয়, এতে উপস্থিত ছিলেন, পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রশান্ত বিশ্বাস, আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার প্রেমু টি. রোজারিও। আরোও উপস্থিত ছিলেন পাহাড়িয়া ভাষা গবেষক মিস্টার অভিলাষ বিশ্বাস ও রণজিৎ সাওরিয়া, সেন্ট জেরোজা কনভেন্ট এর হাউজ সুপিরিয়র সিস্টার তেরেজা মার্ডি.এসসি, সিস্টার নিয়তি এবং পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ।
স্বাগত বক্তব্যে সভাপতি প্রশান্ত বিশ্বাস বলে, আমাদের এই সম্মেলন আয়োজন করার মূল লক্ষ্যই হলো ছিটিয়ে থাকা পাহাড়িয়া ছাত্র-ছাত্রীদের একত্রিত করা, যাতে করে আমরা সচেতনমূলক বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি।
ফাদার প্রেমু টি. রোজারিও তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এটি শুধু পাহাড়িয়া সম্মেলন নয় বরং এটি হলো একটা পাহাড়িয়া মিলন মেলা, আমি এইটা দেখে খুশি হয়েছি যে অনেক পাহাড়িয়া ছাত্র-ছাত্রী এই সম্মেলনের মাধ্যমে একসাথে হতে পেরেছে। 
যুব বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ এবং যুব নেতৃত্ব – এই বিষয়ে সহভাগিতা করেন , রাজশাহী যুব কমিশনের যুব সমন্বয়কারী ফাদার নবীন পিউস কস্তা। তিনি তার সহভাগিতায় যুবক যুবতীদের পড়াশুনা থেকে ঝরে যাওয়ার কারণ এবং তার সমাধান , জাতির উন্নতির ক্ষেত্রে কি কি বিষয়ে আমরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছি এবং এতে আমাদের করণীয় কি এইসব বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। 
বিকেলে অধিবাসী পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের সাথে উপস্থিত সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একটা সম্পর্ক স্থাপন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে একটি মত বিনিময় সভা করা হয় এতে অনেক ছাত্র-ছাত্রী তাদের সমস্যা তুলে ধরে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: শিক্ষার অভাব, অলসতা, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা ইত্যাদি। বিকেলে পাহাড়িয়া জাতির ইতিহাস কৃষ্টি সম্পর্কিত কুইজ প্রতিযোগিতা হয়,  এতে সবাই সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। কুইজ বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেন সভাপতি প্রশান্ত বিশ্বাস । রাতে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় সকলে মেতে উঠে পাহাড়িয়া বাজনা, নাচ ও গানে এবং প্রায় প্রত্যেক গ্রাম থেকেই উপস্থাপনা করে।
১৪ অক্টোবর সকলের প্রার্থনা ও নাস্তা শেষে পাহাড়িয়া জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সংকট চিহ্নিতকরণ ও তা উত্তরণে করণীয় বিষয়ক একটি মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কল্যাণ চৌধুরী, এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির গবেষণা কর্মকর্তা – বেঞ্জামিন টুডু । আলোচনা সভায় উঠে আসে বিভিন্ন সংস্কৃতির অপব্যাবহার ফলে সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের পথে ।
সমাপনী অনুষ্ঠানে অধিবাসী পাহাড়িয়া ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রশান্ত বিশ্বাস তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি আমাদের ডাকে আপনারা এতো বেশি সাড়া দিয়েছেন সেজন্য। আমি আরো বেশি খুশি হব যখন দেখবো আমার জাতির ছেলে-মেয়েরা এক এক জন উচ্চ পর্যায়ের মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছে । 
সম্মেলন শেষে অংশগ্রহণকারী রিমা বিশ্বাস বলে, পাহাড়িয়া সম্মেলনে এই প্রথম অভিজ্ঞতা আমার খুব ভালো ছিল, অনেক কিছুই শিখলাম আর অনেক কিছু জানলাম , পাহাড়িয়া জাতি সম্বন্ধে আমার তেমন কোনো ধারণা ছিল না কিন্তু এই সম্মেলনের পর অনেকটা পাহাড়িয়া সম্পর্কে অনেকটা ধারণা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। আশা করছি আমি যতটুকু জানলাম সেটা আরো মানুষকে জানতে পারবো। 
এতো সংস্কৃতি দিয়ে কি হবে, যদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব না থাকে? এই প্রশ্নের প্রতি উত্তরে নাটোর চাঁদপুর থেকে বিজয় বিশ্বাস বলে, কথাটা ঠিক। কিন্তু সংস্কৃতিও একটা বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্য। আর এই সম্মেলনে শিক্ষার গুরুত্ব, নেতৃত্ব, সমাজে যুবাদের ভূমিকা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদকাসক্ত , বাল্যবিবাহ ইত্যাদি বিষয় অনেক উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যা আমাদের ছাত্র ছাত্রীদের সঠিক দিক নির্দেশনা ছিল । 
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস 
Please follow and like us: