গত ২৩ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে বিকালে ডিকন নরেশ লরেন্স মার্ডী’র মঙ্গল কামনা করে আশির্বাদের অনুষ্ঠান পবিত্র ঘন্টা করা হয়। এই আশির্বাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাল-পুরোহিত ফাদার মাইকেল কোড়াইয়াসহ অন্যান্য ফাদার-সিস্টারগণ ও ধর্মপল্লীর খ্রিস্টভক্তগণ।
২৪ নভেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ ডিকন নরেশকে যাজকপদে অভিষিক্ত হন। অভিষেক অনুষ্ঠানের পবিত্র খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। পবিত্র খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ৪০ জন ফাদারগণ, ৩০ সিস্টারগণ ও প্রায় ৭০০ খ্রিস্টভক্ত।
খ্রিস্টযাগের শুরুতে বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ মহোদয় বলেন- খ্রিস্টেতে প্রিয়জনেরা, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে একটি মহান আশ্চর্য কাজ সংঘটিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সকলের উপস্থিতিতে এই আশ্চর্য কাজটি সম্পন্ন হবে। যাজকীয় অভিষেক একটি আহ্বান, যাজকীয় অভিষেক একটি বিশেষ ডাক এবং যাকজীয় অভিষেক হচ্ছে একটি আশ্চর্য কাজ। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডিকন নরেশ মার্ডীর মাথায় হস্ত স্থাপনের পর যাজকীয় অভিষেক প্রার্থনার পর এই আশ্চর্যকাজটি সংঘটিত হয়ে যাবে। ডিকন নরেশ আর ডিকন হিসেবে পরিচিত হবে না পরিচিত হবে একজন যাজক হিসেবে। খ্রিস্টের যাজক অপরখ্রিস্ট এই যাজকীয় কাজে তার হাতে এই রুটি এবং দ্রাক্ষারস যিশুর দেহ এবং রক্তে রূপান্তরিত হবে। সে নিজে তার যাজকীয় জীবনে খ্রিস্টকে উত্তম মেষপালক যিশু খ্রিস্টকে আমাদের মাঝে জগতের মাঝে সর্বদা উপস্থিত করবেন। যতদিন তিনি খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করবেন ততদিন তিনি আমাদের জন্যে খ্রিস্টকে বাস্তবরূপে, সত্যিকাররূপে এবং প্রকৃতরূপে তাকে উপস্থাপন করবেন। সেই খ্রিস্টকে যিনি চির জীবি এবং যিনি সত্যিকার অর্থেই পুনরুত্থিত।
আসুন, আমরা সকলে মিলে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই, কেননা তিনি এই ধর্মপল্লী থেকে তাঁর এই সন্তানকে বেঁছে নিয়েছেন, মণ্ডলিকে একটা বড় উপহার তিনি দান করছেন। আমরাও তার সঙ্গে আছি প্রার্থনায় ধ্যানে। তাই, ডিকন নরেশ খ্রিস্টের হৃদয়ের ভালবাসায় স্থিত থাক, তাহলে খ্রিস্টের আনন্দ তোমার জীবনে থাকবে এবং তোমার জীবনের আনন্দ পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও স্মরণিকা’র বাণীতে বলেন- যিশুর পবিত্র হৃদয় ধর্মপল্লীর কীর্তনা গ্রামের কৃতিসন্তান ডিকন নরেশ লরেন্স মার্ডীর পুণ্য যাজকীয় অভিষেক উপলক্ষ্যে আমি তাকে জানাই আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
যাজক হিসেবে বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীতে সেবাকাজ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। তাই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যে, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের উত্তর অঞ্চল বাণী প্রচারের একটি উর্বর এলাকা। নব অভিষিক্ত যাজক তার যাজকীয় ও পালকীয় সেবাদায়িত্ব পালনে থাকবে সদাবিশ্বস্ত, এ হল আমার প্রত্যাশা। যিশুর বাণী, “ফসল প্রচুর, কিন্তু মজুর অল্প”; আমাদের এই রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে প্রভুর দ্রাক্ষাক্ষেত্রে কাজ করার জন্য ঈশ্বর আরো একজন মজুর পাঠালেন ব’লে তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ। ধন্যবাদ জানাই নব অভিষিক্ত যাজকের প্রয়াত পিতা-মাতাকে এবং তার পরিবারের সবাইকে।
বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর ভক্তজনকে অনুরোধ করি, তারা যেন তাদের এই অভিষিক্ত যাজকের জন্য প্রার্থনা করে সে যেন একজন আদর্শ যাজক হিসেবে জীবনের শেষ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকতে পারে।
নব অভিষিক্ত ফাদার নরেশ তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন- খ্রিস্টের যাজকত্ব যাজকীয় জীবনের মহাদান। অন্তর থেকে আমি খ্রিস্টের যাজকত্ব পেয়ে মহা খুশি। আমার এ যাজকীয় জীবনে এই আনন্দকে ধরে রাখা ও আজীবন বিশ্বস্ত থাকা আমার মহা দায়িত্ব।
যাজকীয় জীবন ঈশ্বর প্রদত্ত একটি মহাদান। এই মহাদানকে আজীবন বিশ্বস্তভাবে টিকিয়ে রাখতে আমি আমার কয়েকটি নীতি নিয়ে চলার সংকল্প করছি। তা হলো- ঈশ্বরের প্রতি, খ্রিস্টের প্রতি গভীর বিশ্বাস ও ভালবাসা নিয়ে কাজ করবো; প্রতিদিন যে প্রার্থনাগুলো রয়েছে তা বিশ্বাসের সাথে করবো; প্রতিদিন গভীর বিশ্বাস ও ভালবাসার সাথে খ্রিস্টযাগ অর্পণ করবো; অন্যান্য যে সমস্ত সংস্কারীয় সেবা কাজ রয়েছে সেগুলো বিশ্বস্তভাবে সম্পাদন করবো; নিয়মিত পাপস্বীকার করবো এবং বিশপ মহোদয় ও কর্তৃপক্ষের প্রতি বাধ্য থাকবো।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি মানুষই স্বপ্ন দেখে থাকেন। একজন নব অভিষিক্ত যাজক হিসেবে আমিও আমার যাজকীয় জীবন নিয়ে যে স্বপ্নগুলোর লালন করছি তা হলো- প্রভু যিশুর পথ অনুসরণ করব এবং অন্যকেও যিশুর পথ অনুসরণ করতে সাহায্য করব; জনগণের খ্রিস্টীয় বিশ্বাস বৃদ্ধির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করব; একজন যাজক একা নয়, জনগণকে নিয়েই স্বর্গে বা নরকে যায়। এই সত্য মনে রেখে জনগণকে স্বর্গে নিয়ে যাবার জন্য তাদের মাঝে সেবা কাজ করব, যেমন ধর্মশিক্ষা দান, তাদের মাঝে বাণী প্রচার করা, সংস্কারীয়া সেবা কাজ ইত্যাদি; আমি এমনভাবেই যাজকীয় জীবনে বিশ্বস্ত থাকব যে, আমি যেন হয়ে উঠতে পারি তাদের একজন কাছের মানুষ, তাদের ফাদার, তাদের সেবক; আমি জনগণের মধ্যে হয়ে উঠব একজন “অপর খ্রিস্ট।” একজন “উত্তম মেষপালক” এবং তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলব।
বেনীদুয়ার ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া বলেন- পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও, আজকের মধ্যমণি নব অভিষিক্ত ফাদার নরেশ লরেন্স মার্ডী, অন্যান্য সকল ফাদারগণ, সিস্টারগণ, ব্রাদারগণ এবং সম্মানিত খ্রিস্টভক্তগণ সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আজকের এই শুভদিনে আমরা ঈশ্বরের আশির্বাদ পেয়েছি এবং অভিষেক অনুষ্ঠান আমাদের ধর্মপল্লীতে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে সেই জন্য আমরা সকলেই পিতা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই এবং দ্বিতীয় আমাদের ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিওকে আন্তরিকভাবে ধর্মপল্লীবাসী এবং সবার পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। কারণ তিনি আজকে এই যাজকীয় অভিষেকের অনুমতি এবং সহায়তা দিয়েছেন এই জন্যে।
আজ আমরা সুদীর্ঘ তেরো বছর পর যিশুর পবিত্র হৃদয় ধর্মপল্লী, বেনীদুয়ার থেকে একজন নতুন যাজক লাভ পেয়েছি। এতে আমরা গোটা ধর্মপল্লীবাসী সকলেই অত্যন্ত আনন্দিত ও উল্লসিত। যারা এই নব অভিষিক্ত যাজক ফাদার নরেশ মার্ডীকে এই চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছতে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন তাদের আমি ধর্মপল্লীর পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সর্বোপরি, যার পুণ্য পরিকল্পনায় নরেশ আজ প্রভুর যাজক, ধন্যবাদ সেই সদাপ্রভু ঈশ্বরকে।
তিনি আরো বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি পরম করুণাময় পিতা পরমেশ্বর তাঁর এই মনোনীত সেবককে যাজকীয় জীবন-পথে চলতে নিত্য সহায়তা করবেন। আর আমরা, বিশেষভাবে আমাদের ধর্মপল্লীর সবাই আমাদের এই প্রিয় সন্তান ফাদার নরেশ মার্ডীর জন্য প্রার্থনা করব।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার