
৭-৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় ন্যায় ও শান্তি কমিশনের আয়োজনে খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে পালন করা হয় মানবাধিকার দিবস। এতে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে ৫০ জন খ্রিস্টভক্ত উপস্থিত ছিলেন।উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ন্যায় ও শান্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বিশপ জের্ভাস রোজারিও, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ন্যায় ও শান্তি কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার সাগর কোড়াইয়া, চ্যান্সেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও, ধর্মপ্রদেশীয় মানবাধিকার ডেক্স এর আহ্বায়ক ফাদার শ্যামল গমেজ এবং পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া। প্রোগ্রাম সঞ্চালক হিসেবে ছিলেন ন্যায় শান্তি কমিশনের সেক্রেটারি অসীম ক্রুশ।
ন্যায় ও শান্তি কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার সাগর কোড়াইয়া বলেন, আমাদের এই সেমিনার আয়োজনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যই হলো আপনাদের আইনি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান সম্পর্কে জানা।
বিশপ বিশপ জের্ভাস রোজারিও তার উদ্বোধনী বক্তব্যে মানবাধিকার সম্পর্কে ক্ষুদ্র ধারণা দেন। তিনি আরো বলেন কোথায় এবং কি ভাবে আমরা এইসব আইনি সুযোগ সুবিধাগুলো লাভ করতে পারবো। তিনি উপস্থিত বিভিন্ন ডেক্স এর আহবায়কদের ধন্যবাদ জানিয়ে মানবাধিকার দিবস উৎযাপনের শুভ সূচনা করেন।
মানবাধিকার কি? বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে – এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক অ্যাডভোকেট ব্রাদার নির্মল ফ্রান্সিস গমেজ, সিএসসি। তিনি বলেন , মানুষের সাথে মানুষের যে সম্পর্ক তা হলো ভাতৃত্বের সম্পর্ক। তিনি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে আহ্বান করেন। তিনি আরো বলেন, ঈশ্বর সকলকে স্বাধীনতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তাই আমরা যেনো একে অপরের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করি।
রাতে অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডুকে সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তার কারণে বাংলাদেশ মণ্ডলি তথা রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ গর্বিত। তিনি উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম আইনজীবী যিনি হাই কোর্টের একজন উকিল এবং তিনি একজন সান্তাল সম্প্রদায়ের। তার সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত অনুভূতি ব্যক্ত করেন সুশীল টুডু। তিনি বলেন, আমাদের জন্য প্রভাত টুডু একজন সম্পদ, আমাদের আদিবাসীদের জন্য গর্ব, তবে আমি বলবো এই গর্ব যেনো আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু – সংখ্যালঘু হিসেবে খ্রিস্টানদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে তাৎক্ষণিক করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, শুরুতেই আমাদের আইন সম্পর্কে জানতে হবে যে সংবিধান কি বলছে এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনগুলো কি কি । তিনি যুবাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনে যুব সমাজ যেনো সচেষ্ট থাকে।
৮ ডিসেম্বর কুমারী মারিয়ার অমলোদ্ভব মহাপর্ব উপলক্ষে খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি বলেন, স্বাধীনতা হলো মানুষের শান্তি লাভের একটা উপায়। ঈশ্বর সবাইকে স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেনো ঈশ্বরের স্বাধীনতা খর্ব না করি। তিনি আরো বলেন, ঈশ্বর আমাদের বংশধরদের পাঠিয়েছেন যেনো সন্তানদের আগলে রাখতে পারি, তিনি যাজকদের পাঠিয়েছেন যেনো তারা ঈশ্বরের পথে পরিচালিত করতে পারেন, তিনি রাজাদের পাঠিয়েছেন যেনো রাজাদের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের বাধ্য থাকতে পারি, তিনি প্রবক্তাদের পাঠিয়েছেন যেনো তারা ঈশ্বরের বাণী প্রচার করতে পারেন এবং কালের পরিক্রমায় ঈশ্বর তার প্রিয় পুত্র যিশু খ্রিস্টকে পাঠিয়েছেন যেনো তাঁর দ্বারা জগতের মানুষেরা মুক্তি লাভ করে। পরিশেষে বিশপ মহোদয় সকলকে আহ্বান করে বলেন, ঈশ্বরের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক সেটা যেনো হয় আত্মার সম্পর্ক, তা যেনো বাহ্যিক না হয় কারণ বাহ্যিক সম্পর্ক অস্থায়ী।
রাজশাহী কোর্টের অ্যাডভোকেট আসাফুদৌল্লা শামীম বলেন, আমাদের অধিকার আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে নতুবা পরে দেখা যাবে যা আমার পাওয়ার কথা সেটা অন্য কেউ ভোগ করছে। তিনি বিভিন্ন আইনি ধারণার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন মানুষ হিসেবে কি কি অধিকার আমাদের প্রাপ্য এবং সরকার কোন সব সুবিধা দিতে বাধ্য।

মাণ্ডলিক আইন ও সাংবিধানিক আইনের উপর আলোচনা শেষে আসে অনুভূতি প্রকাশের পালা। পিউস মারান্ডী তার অনুভুতি ব্যাক্ত করে বলেন, এ প্রশিক্ষণে আসার আগে মাণ্ডলিক আইন ও সাংবিধানিক আইনের বিষয়ে তেমন কিছু জানা ছিল না, পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা বৃদ্ধ হওয়াতে পরিবারের দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়েছে। আশা করি এ প্রশিক্ষণ থেকে আমি যা পেয়েছি তা আগামী দিনে সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।
কস্তানতিনা হাঁসদা বলেন, সংসারিক চাপের কারণে প্রায় বিভিন্ন আইন সম্পর্কে প্রায় ভুলে গেছিলাম, তাই এখানে এসে সে বিষয়গুলো আবার ঝালাই করতে পারলাম এবং আরো কিছু নতুন নতুন ধারণা পেয়েছি যা আমার বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারব।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী ফাদার সুশান্ত ডি’কস্তা বলেন, এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে আইন সম্পর্কে সিস্টেমেটিক বা সঠিক ধারণা পেয়েছি এবং সচেতনতা লাভ করেছি। সচেতন ভাবে কাজ করলে আমরা যে সফল হতে পারব এই বিষয়েও আরো সজাগ হতে পেরেছি। তিনি তার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন এই ধরণের সেমিনার ধর্মপল্লী পর্যায়ে করার জন্য ন্যায় শান্তি কমিশনের কাছে প্রস্তাব রাখেন।
সমাপনী বক্তব্যে ফাদার শ্যামল গমেজ বলেন, নতুন যাজক হিসেবে আমরা আপনাদের কাছ থেকে শিখছি কিভাবে জনগণের সাথে কাজ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি একে অপরের উপর নির্ভর করেই মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় ন্যায় ও শান্তি কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার সাগর কোড়াইয়া বলেন, আমাদের প্রত্যেকের যেমন অধিকার রয়েছে তেমন অন্যের অধিকার রক্ষা করাও আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এই বলে বিশপ মহোদয়ের পক্ষে প্রোগ্রামের সমাপনী ঘোষণা করেন।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টঃ বেনেডিক্ট তুষার বিশ্বাস
Please follow and like us: