গত ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, রোজ শুক্রবার লূর্দের রাণী মারিয়া ধর্মপল্লীতে পালিত হলো ‘বার্ষিক পালকীয় কর্মশালা’। পালকীয় কর্মশালার মূলসুর ছিল: “সিনোডাল চার্চ ও ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ”। এতে ধর্মপল্লীর বিভিন্ন গ্রামের প্রতিটি ব্লকের ৫ জন করে খ্রিস্টভক্ত, পালকীয় পরিষদের সদস্য/সদস্যা, বিভিন্ন সংঘ-সমিতির প্রতিনিধি ও ধর্মপল্লীতে সেবাদানরত ফাদার-সিস্টারগণ অংশগ্রহণ করেন। মোট অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ১০৫ জন।
পালকীয় সন্মেলনে শ্রদ্ধেয় ফাদার পিউস গমেজের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে কর্মশালা উদ্বোধন হয়। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলন করেন পাল-পুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার দিলীপ এস. কস্তা। শুভেচ্ছা বক্তব্যে পাল-পুরোহিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কর্মশালায় সকলের সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
মূলসুরের উপর সহভাগিতা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার যোহন মিন্টু রায়। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, “সিনোডাল চার্চ ‘মিলনধর্মী মণ্ডলি’-একসাথে পথ চলা: মিলন, অংশগ্রহণ ও প্রেরণ। মিলনধর্মী মণ্ডলিতে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে, মণ্ডলির জন্য এক হয়ে একসাথে কাজ করা। মণ্ডলির সকল কাজে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমরা প্রত্যেকে একেকজন অংশগ্রহণকারী হয়ে উঠব। মণ্ডলিতে সবাই এক, সবাই সমান। কোন ভেদাভেদ নেই”। তিনি যাজকদের কাজসমূহ এবং ধর্মপল্লীতে খ্রিস্টভক্তের সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্ব সম্পর্কে তুলে ধরেন। ব্যক্তিগত ত্যাগস্বীকারের বিষয়ে আলোকপাত করেন। তিনি আরো বলেন, “মণ্ডলির কাজে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে আমরা প্রেরণ কাজে সরাসরিভাবে অংশগ্রহণকারী হয়ে উঠি”।
‘ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ ও আমাদের ধর্মপল্লী’ বিষয়ের উপর সহভাগিতা করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার দিলীপ এস. কস্তা। তিনি তার সহভাগিতায় বলেন, “ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজ একসাথে কাজ করে। একজন খ্রিস্টভক্ত হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে বাইবেলের হাত ধরে পাড়ি দিতে হবে। বাইবেল হলো খ্রিস্টীয় ক্ষুদ্র লাইব্রেরী। “বিশ্বাস ও বাইবেল খ্রিস্টমণ্ডলিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপাসনার কারণে আমরা সবাই এক হই। সকল সাক্রামেন্ত খ্রিস্টযাগের সাথে জড়িত। মণ্ডলির প্রাণকেন্দ্র খ্রিস্টযাগ, খ্রিস্টযাগের প্রাণকেন্দ্র হলো যাজক”। তিনি আরো বলেন, “মণ্ডলি হল দেহ স্বরূপ। একই পবিত্র আত্মা ভক্তবিশ্বাসীকে নানা ধরনের সেবাকাজ, আত্মিক অনুগ্রহ ও শক্তি দান করে। তাই ধর্মপল্লীর সাথে যুক্ত থেকে খ্রিস্টভক্তগণ আপন আপন মেধা, দক্ষতা ও সামর্থ অনুসারে কাজে সহায়তা দেন। ক্ষুদ্র খ্রিস্টীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য হলো মিলন সমাজ গড়ে তুলা, একে অন্যকে সাহায্য ও সহায়তা দান করা”।
শ্রদ্ধেয় ফাদার পিউস গমেজ তার বক্তব্যে বলেন, “খ্রিস্টযাগ থেকেই শুরু হয় খ্রিস্টমণ্ডলি। খ্রিস্টযাগে যোগদান করা একজন খ্রিস্টভক্তের কর্তব্য। ধর্মশিক্ষা আমাদের প্রত্যেকের জন্য বড় আশির্বাদ। সাক্রামেন্তীয় শিক্ষা আমাদের অন্তরে ও মনে গেঁথে রাখতে হবে”। তিনি আরোও বলেন, “যাজক হলো যিশুর প্রতিনিধি স্বরূপ বা প্রেরিত। যাজকের মধ্য দিয়ে আমরা যিশুকে গ্রহণ করি। যাজককে যখন আমরা মণ্ডলির কোন কাজে সাহায্য করি তখন মণ্ডলিকেই আমরা সাহায্য করি।”
পালকীয় কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী বাবলু রেনাতোস কোড়াইয়া বলেন, “খ্রিস্টমণ্ডলি আমাদের প্রত্যেককে এক করতে চায় এবং খ্রিস্টীয় আদর্শে আমাদের গড়ে তুলতে চায়। তাই খ্রিস্টীয় আদর্শ দ্বারা আমাদের পথ চলতে হবে”।
পালকীয় কর্মশালার শেষে অংশগ্রহণকারীরা পাপস্বীকার, খ্রিস্টযাগে যোগদান করেন। খ্রিস্টযাগ শেষে পাল-পুরোহিত সকলকে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। পরিশেষে মধ্যাহ্ন ভোজের মধ্য দিয়ে বার্ষিক পালকীয় কর্মশালার সমাপ্তি হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : পিতর হেম্ব্রম