গত ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবা কেন্দ্রে এক জাঁক-জমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজশাহীর স্থানীয় ও জাতীয় ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রাক্-বড়দিন উৎসব উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও, এসটিডি, ডিডি, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ, মন্সিনিয়র মার্সেল তপ্ন, শ্রদ্ধেয় ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারান্ডী, চ্যাঞ্চেলর ফাদার প্রেমু রোজারিও, ফাদার বাবলু কোড়াইয়া, পরিচালক, খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্র, রাজশাহী, মি: ডেভিড হেম্ব্রম, আঞ্চলিক পরিচালক, কারিতাস বাংলাদেশ, রাজশাহী, মি: স্বপন মণ্ডল, সিনিয়র ম্যানেজার, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ, পবা, ফাদার শ্যামল গমেজ, রেক্টর, মুশরইল সেমিনারী, ফাদার সাগর কোড়াইয়া, সহকারি পাল-পুরোহিত, আন্ধারকোটা, সিস্টারগণ, রাজশাহী শহরে কর্মরত বিভিন্ন মিডিয়াকর্মী ও বিভিন্ন ধর্মপল্লী থেকে আগত ১০০ খ্রিস্টভক্তগণ।
উদ্বোধনী নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয় এবং সান্তালী, উঁরাও, পাহাড়িয়া এবং বাংলা ভাষায় বড়দিনের কীর্তন ও গান করার মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের ১ম পর্ব শেষ হয়। পবিত্র বাইবেল পাঠের মাধ্যমে ২য় পর্ব শুরু করা হয়। এই পর্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দদের আসনগ্রহণ ও ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।
ধর্মপ্রদেশীয় সামাজিক যোগাযোগ কমিশনের আহ্বায়ক ফাদার বাবলু কোড়াইয়া তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা উদযাপন করতে যাচ্ছি ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর অর্থাৎ শুভ বড়দিন। আমরা আজকাল বলে থাকি- ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ঠিক তাই। বাংলাদেশের মানুষ উৎসবমুখী। ছোটো-খাটো পাওয়া, আনন্দগুলো নিয়ে মেতে উঠাই আমাদের স্বভাব। আর উৎসবগুলির আনন্দ ভাগ করে নেওয়া বাঙালি জাতির একটা বড় গুণ। আজকের এই প্রাক্ বড়দিনের উৎসবের আনন্দকে সহভাগিতা করার জন্যেই আমরা সকলে এখানে সমবেত হয়েছি। বড়দিনের উৎসব এখন শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দেশের সীমানা পেরিয়ে বড়দিন আজ আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তৃতীয়বারের মতো আমরা বড়দিনকে ঘিরে এই ধরনের মিলন উৎসবের আয়োজন করেছি। আমাদের জানার অভাব ও সীমাবদ্ধতার কারণে কোনো কোনো মিডিয়া হয়তো বা বাদ পড়েছে। আমরা তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। আপনাদের সহযোগিতায় ভবিষ্যতে এই মিলন উৎসব আরো তাৎপর্যপূর্ণ ও সুন্দর হবে এই আশা রাখছি।
অতঃপর ফাদার প্রেমু রোজারিও বাইবেলের আলোকে পুণ্যময় বড়দিনের তাৎপর্য সকলের সামনে আলোকপাত করতে গিয়ে প্রবক্তা যিশাইয়ার গ্রন্থের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, এক শিশু জন্ম নিয়েছেন আমাদের জন্য, এক পুত্র সন্তানকে দেওয়া হয়েছে আমাদের জন্য। তাঁর কাঁধে রয়েছে আধিপত্যের ভার তাঁর নাম রাখা হল আশ্চর্য মন্ত্রণাদাতা শক্তিশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা শান্তিরাজ। বড়দিনকে তাই বলা যায় ঈশ্বরপুত্রের মানব দেহধারণের উৎসব। স্বর্গ ও মর্তের মিলন উৎসব। বড়দিনের আনন্দ ও তাৎপর্য ভালোবাসা, ক্ষমা ও পুনর্মিলনের মধ্যেই নিহিত রয়েছে। তিনি পুণ্যপিতার পোপ ফ্রান্সিসের বড়দিনের বাণীর আলোকে বলেন, বড়দিন হচ্ছে খ্রিস্টের মধ্যে মানব দেহধারী ও জন্মগ্রহণকারী ভালোবাসার একটি স্মরণ উৎসব।
সোনালী সংবাদের একজন স্টাফ রিপোর্টার তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমরা সকলে মিলে এই উৎসব উদযাপন করব। আমরা ইতিমধ্যে যেভাবে সকলের পাশে উপস্থিত ছিলাম আর সেইভাবেই থাকব। আপনাদের উৎসবে আমরা ভাগিদার হব। আপনারা মিডিয়াকর্মীদের সন্মানে যে অনুষ্ঠানটি করেছেন আমরা অভিভূত। আমরা আপনাদের সাফল্য কামনা করি। আপনাদের অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে করতে মিডিয়াকর্মীদের যে সহায়তা প্রয়োজন মিডিয়াকর্মীগণ সে সহায়তা করবেন। আমরা আশা করব এবারের বড়দিন উৎসব সকলের মাঝে মঙ্গল বয়ে আনবে।
এরপর সমাপনী শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন সভাপতি রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, এইবার আমরা তৃতীয়বারের মতো সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে প্রাক্ বড়দিন উদযাপন করছি। আগামীতেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। এদেশে জাতিতে জাতিতে এবং ধর্ম নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি নেই। সকল ধর্মের মানুষ একসাথে সহমর্মিতার মধ্যে দিয়ে যার যার ধর্ম পালন করে আসছে। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ধর্ম ও দখলদারিত্বের জন্য যুদ্ধ করছে। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করছে। এটা কাম্য নয় উল্লেখ করে বিশ্বে শান্তির জন্য সবাইকে সহনশীল হয়ে কাজ কার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যের পর আমন্ত্রিত সকল অতিথিবৃন্দদের নিয়ে কেক কাটেন অনুষ্ঠানের সভাপতি বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং পরে উপস্থিত সকলের মধ্যে বড়দিনের শুভেচ্ছা উপহার প্রদানের মাধ্যমে প্রাক্-বড়দিন অনুষ্ঠানের সমাপনী ঘটে।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার