সাধু পিতরের সেমিনারিতে অনুষ্ঠিত হলো সেমিনারিয়ানদের দুইদিনব্যাপী মাসিক নির্জন ধ্যান

“প্রার্থনা উপবাস ও ভিক্ষাদানের মধ্য দিয়ে ইশ্বরের সান্নিধ্য লাভ” এই মূলসুরকে কেন্দ্র করে  ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি সাধু পিতরের সেমিনারি মুশরইলে অনুষ্ঠিত হলো দুইদিন ব্যাপী মাসিক নির্জন ধ্যান।এবারের নির্জন ধ্যান পরিচালনা করেন সেমিনারীর আধ্যাত্মিক পরিচালক শ্রদ্ধেয় ফাদার অনিল মারান্ডী।

মূলসুরকে কেন্দ্র করে শ্রদ্ধেয় ফাদার বলেন, ” প্রার্থনা হলো ঈশ্বরের সাথে কথা বলার মাধ্যম।দুইজন বন্ধু যেমন একে অপরের প্রয়োজন বুঝতে পারে তেমনি ঈশ্বর ও মানুষের সম্পর্কও ঠিক তেমনি।  ঈশ্বর আমাদের প্রয়োজন বুঝতে পারেন। আমরা যদি কিছু নাও করি শুধু নীরব থাকি তাও প্রার্থনা। তাই আমরা সকল কিছুর পূর্বে ও পরে প্রার্থনা করি। কারণ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে আমরা ঈশ্বরের কাছে আমাদের প্রয়োজন তুলে ধরি। আমরা সারাবছর অনেক কিছু গ্রহণ করি কিন্তু প্রায়শ্চিত্তকালে আমাদের সুযোগ হয়  ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাবার। উপবাস শুধু একবেলা না  খেয়ে থাকা নয়, উপবাস হলো আমাদের মন্দ অভ্যাস ত্যাগ করে সংযম করা। আর দান করার মধ্যে রয়েছে আলাদা আনন্দ। আমরা আমাদের ত্যাগস্বীকারের অংশটুকু অন্যকে দান করার মধ্য দিয়ে তাদের সাহায্য করতে পারি। “

অধিবেশন শেষে সকলে পুনর্মিলন সাক্রামেন্ত গ্রহণ করে এবং খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করে। পরিশেষে শ্রদ্ধেয় ফাদারকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও দুপুরের আহার গ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্জন ধ্যান সমাপ্ত হয়।

মুশরইল ধর্মপল্লী সেমিনারির প্রতিপালক সাধু পিতরের মহাপর্ব উদযাপন

২২শে ফেব্রুয়ারি মুশরইল ধর্মপল্লী ও সেমিনারীর প্রতিপালক সাধু পিতরের পর্ব মহাসমারোহে উদযাপন করা হয়। উল্লেখ্য পর্বের আধ্যাত্মিক প্রস্তুতিস্বরূপ পর্বের আগে নয় দিনের নভেনা করা হয় এবং ২১ তারিখ অর্থাৎ  পর্বের আগের দিন সন্ধ্যায় সাধু পিতরের স্মৃতিচিহ্ন সহযোগে আলোক শোভাযাত্রা করা হয়।

পর্বীয় খ্রিস্টযাগের পূর্বে আদিবাসী কৃষ্টিতে নাচ- গান ও হাত ধোয়ানোর মাধ্যমে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়কে বরণ করে নেওয়া হয়। সকাল ৯.৪৫ মিনিটে পর্বীয় খ্রিস্টযাগ শুরু হয়। খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্য করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও এবং সহার্পিত খ্রিস্টযাগে অংশ নেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের চ্যান্সেলর  ফাদার প্রেমু টি রোজারিও, মুশরইল ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ও সেমিনারির পরিচালকদ্বয়।

খ্রিস্টযাগে বিশপ মহোদয় তার উপদেশ বাণীতে বলেন, “ আজ আমরা মুশরইল ধর্মপল্লী ও সেমিনারীর প্রতিপালক সাধু পিতরের পর্ব উদযাপন করছি। আজ সাধু পিতরের ধর্মাসন মহাপর্ব আর ধর্মাসন হচ্ছে ধর্মপালের শিক্ষাদানের প্রতীক। সকল বিশপদের জন্য ক্যাথিড্রালে ধর্মাসন রয়েছে যেখান থেকে বিশপগণ শিক্ষা দান করেন। আজ আমরা সাধু পিতরের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে পারি তার মতো নম্র ও বিনয়ী হতে। আমাদেরও উচিত তার মতো খ্রিস্টের বাণী প্রচার করা। “

খ্রিস্টযাগের পরে মুশরইল ধর্মপল্লী ও সেমিনারির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও লটারি ড্র।

ধর্মপল্লীর পালপুরোহিত শ্রদ্ধেয় ফাদার প্রশান্ত আইন্দ সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,” পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়, অন্যান্য ফাদারগণ, ব্রাদারগণ, সিস্টারগণ  ও খ্রিস্টভক্তবৃন্দ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই কারণ আপনার অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করেছেন। আপনাদের আর্থিক অনুদান, পরামর্শ ও সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। সবাই ভালো থাকবেন”।

পরিশেষে বিশপ মহোদয়কে উপহার সামগ্রী প্রদান ও দুপুরের আহার গ্রহণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

মুশরইল ধর্মপল্লী ও সেমিনারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন

“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি”

গত ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মুশরইল ধর্মপল্লী ও সেমিনারিতে বিশেষ খ্রিস্টযাগ অনুষ্ঠিত হয়। খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন শ্রদ্ধেয় ফাদার শ্যামল জেমস গমেজ এবং সহার্পিত খ্রিস্টযাগে অংশ নেন পাল-পুরোহিত ফাদার প্রশান্ত আইন্দ ও আধ্যাত্মিক পরিচালক ফাদার অনিল মারান্ডী। খ্রিস্টযাগে উপদেশ বাণীতে ফাদার  বলেন” পৃথিবীতে আর কোন জাতি নেই যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছেন কিন্তু আমরা দিয়েছি। যখন বিদেশী কেউ শুনে আমরা ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছি তারা অবাক হয়। বাঙালি জাতির রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই মাতৃভাষা। আর এই ভাষাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। ”

খ্রিস্টযাগের পরে শহীদের স্মরণে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, জাতীয় উত্তোলন ও শপথ বাক্য পাঠ করা হয়। ভাষা শহীদের ত্যাগস্বীকার ও সাধু পিতরের পর্ব উপলক্ষে সেমিনারীয়ানদের উদ্যোগে একটি দেয়ালিকা প্রকাশ করা হয় যার মূলসুর হলো ” আত্মোৎসর্গ “।

পরিশেষে, পাল-পুরোহিত ফাদার প্রশান্ত আইন্দ বলেন,” ৫২ র ভাষা আন্দোলনে রফিক, শফিক, বরকত, সালাম, জব্বারসহ নাম না জানা আরো অনেকে আমাদের ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু অনেক সময় আমরা আমাদের এই ভাষা শুদ্ধ চর্চা করি না। আমাদের উচিত মাতৃভাষাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।

পরিশেষে সেমিনারির পরিচালক ফাদার শ্যামল গমেজ সকলকে সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার – লর্ড ডি রোজারিও

Please follow and like us: