প্রতি বছরের মত এবার ও যীশু খ্রিস্টের পুনরুত্থান পর্ব এসে গেছে আমাদের দ্বোর গোড়ায়। আমরা যারা খ্রিস্টভক্ত, আমরা বিশ্বাস করি যে মৃত্যুকে জয় করে ঈশ্বর পুত্র যীশু জীবনে ফিরে এসেছেন, অর্থাৎ মৃত্যু তাঁকে কবরে ধরে রাখতে পারেনি, তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন। পুণ্য বৃহস্পতিবার শেষ ভোজ থেকে উঠে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে জৈতুন বাগানে গিয়েছিলেন প্রার্থনা করার জন্য। তাঁর শত্রু সৈন্যরা তাঁকে সেখান থেকেই ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার নির্যাতন করে, বিচার আচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়। তাঁকে ক্রুশ বহন করতে বাধ্য করে ও শেষে সেই ক্রুশে তাঁকে ঝুলিয়ে হত্যা করে। শুক্রবার দিন তাঁকে তাঁর শিষ্যগণ কবরস্থ ও করে। কিন্তু কি আশ্চর্য্য, মৃত্যুর তৃতীয় দিন, অর্থাৎ রবিবার দিন ভোরে কয়েক জন ধার্মিকা মহিলা তাঁকে সুগন্ধি তৈল মাখতে গিয়ে কবরে তাঁকে আর খুঁজে পায়নি। যীশু নিজেই তাদের সাক্ষাৎ দিয়ে বলেছেন যে তিনি জীবিত আছেন। আর তিনি তাঁর শিষ্যদের গিয়ে খবর দিতে বলেছেন যে, তিনি মৃতদের মাঝে আর নেই, তিনি জীবিত হয়েছেন। পিতর ও যোহনসহ শিষ্যগণ সেই ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। সাক্ষী হয়েছেন এম্মাউসের পথে যে দু’জন শিষ্য জীবিত যীশুর সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন তারাও। পরে অবশ্য সকল শিষ্যগণই যীশুকে বন্ধ ঘরে উপস্থিত যীশুকে দেখতে পেয়েছিলেন। শেষে শিষ্যগণ গালিল সাগরের পাড়ে ও জীবিত যীশুকে দেখেছিলেন আর তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন।
পুনরুত্থান পর্ব হল পাপ ও অন্ধকারের উপর যীশুর বিজয়, যার মধ্যদিয়ে পরিত্রাণ রহস্য প্রস্ফুটিত হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে যীশু বিশ্বাসীদের জন্য ছিনিয়ে এনেছেন অনন্ত জীবন। ক্রুশীয় মৃত্যুকে জয় করে যীশু আমাদের মানব জাতির জন্য পরিত্রাণের আশা ও নবজন্ম নিয়ে এসেছেন। আমরা তাই আর ভয় করিনা, যীশুর সাথে যুক্ত হয়ে আমরা পরিত্রাণের নবজীবন লাভ করব সেই আশা করি।
বিভিন্ন দেশে পুনরুত্থান পর্ব পালনের বিভিন্ন রীতি-নীতি হয়েছে। তবে উপাসনায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে এই পর্বের মমার্থ উপলব্ধি করতে পারাই হল আসল। আমরা হয়তো নতুন জামাকাপড় পরব বা খাবার প্রস্তুত করব যা খুবই সাভাবিক। কিন্তু আসল বিষয় হল অন্তরে মনে নতুন হয়ে উঠা; যীশুর পুনরুত্থানের জীবনে অংশী হতে পারা। আমরা মনে প্রাণে তা-ই হতে চেষ্টা করব। বাচ্চারা আনন্দ করবে, নতুন জামা পরবে ও বড়দের আশীর্বাদ নিবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে খ্রিস্টভক্তদের মধ্যে যেন একটি মিলনের আনন্দ গড়ে উঠে এই পর্ব সেই কথাই বলে। তাই আসুন আমরা যীশুর সঙ্গে নতুন জীবনে প্রবেশ করি – জেগে উঠি এক নতুন আশায়। পরিত্রানের সেই আশা যেন আমাদের নিয়ে যায় অনন্ত জীবনের পথে যেখানে আমরা পথচলব, বেচেঁ থাকব যীশুরই সাথে।
খ্রিস্টবিশ্বাসী সকলকে আমি পবিত্রতম পুনরুত্থান পর্ব বা পাস্কা পর্বের আনন্দময় শুভেচ্ছা জানাই। পুনরুত্থিত যীশু সকলকে সুখ ও শান্তি দান করুন।
+ বিশপ জের্ভাস রোজারিও
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ

Please follow and like us: