সংবাদদাতা: ফাদার সাগর কোড়াইয়া
আমরা যিশুর জন্মজয়ন্তী বর্ষে আছি। আর এই জুবিলী আমাদের আশার কথা বলে এবং আমরা আশা নিয়ে ধ্যান করছি। আশা থেকে বিশ্বাসের জন্ম। তাই আমাদের আশাবাদী মানুষ হয়ে উঠতে হয়। আশায় বুক বাঁধতে হয় যে যিশু আমাদের কষ্ট লাঘব করেন। আর যখন আমরা দুঃখ-কষ্ট গ্রহণ করতে পারি তখন কষ্টগুলো ঈশ্বরের প্রশংসায় পরিণত হয়। ২৫ জুন পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী, বনানীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃ-সংঘের বার্ষিক সাধারণ সভার সমাপনী খ্রিস্টযাগের উপদেশে ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুজ এই কথা বলেন।
বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের বার্ষিক সাধারণ সভা ও কনফারেন্সে একশত চৌষট্রি জন ফাদার অংশগ্রহণ করেন। ২৫ জুন উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাস গমেজ। বিশপ উপদেশে বলেন, জুবিলীবর্ষে আমরা মা মারীয়াকে নিয়ে এই সভা করতে যাচ্ছি। মা মারীয়া যাজকদের মা। তাই মায়ের সাথে আমাদের তীর্থযাত্রা যেন সাফল্যমণ্ডিত হয়। বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃ-সংঘের সভাপতি ফাদার মিন্টু লরেন্স পালমা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, এই বছর যিশুর জন্মজয়ন্তী বর্ষে “আমরা আশার তীর্থযাত্রী” মূলভাবকে নিয়ে ধ্যান করছি। আশা না থাকলে মানুষ তো বাঁচতে পারতো না। আশা হচ্ছে সাংঘাতিক একটি শক্তি। ধর্মপ্রদেশীয় যাজকগণ এখানে একত্রিত হয়েছি মা মারীয়ার সাথে তীর্থযাত্রায় একত্রিত হতে। তীর্থ শুধুমাত্র স্থান পরিদর্শন ও পরিভ্রমণই নয় বরং মা মারীয়াকে হৃদয়ে ধারণ করে যিশুর পথে যাত্রা করা।
পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর পরিচালক ফাদার পল গমেজ উপস্থিত সকল যাজককে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই সেমিনারী আমাদের সবার মাতৃগৃহ। কারণ এই সেমিনারীর শিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা, যত্ন ও ভালবাসা লাভ করে আজ আমরা যাজক। আমরা শত ব্যস্ততার মধ্যেও এই সভায় অংশগ্রহণ করেছি। আর এটাই হচ্ছে বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের একসাথে পথচলা। ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পল পনেন কুবি, সিএসসি বলেন, জুবিলীবর্ষ আমাদের নতুন করে আশায় বসবাস করতে আত্মিক অনুপ্রেরণা যোগায়। বর্তমানে আমরা এমন একটি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রয়েছি যা আমাদের যুদ্ধ, অশান্তি, ভেদাভেদ ও আন্দোলনের চিত্র প্রকাশ করছে। আর এই বাস্তবতায় যিশুর জন্মজয়ন্তী আমাদের আশার কথা বলে।
ফাদার প্রশান্ত থিওটোনিয়াস রিবেরু “মা মারীয়ার সাথে আশার তীর্থযাত্রা” মূলভাবের ওপর আলোচনায় বলেন, তীর্থযাত্রায় মা মারীয়া কিভাবে আমাদের সাথে যাত্রা করেন তা উপলব্ধি করা প্রত্যেক যাজকের কাজ। যাজকগণ মারীয়াকে তাদের যাজকত্বের অভ্যন্তর বাসস্থানে রাখেন। মা মারীয়ার মতো মা মারীয়ার মধ্যস্থতায় আমরা আশার বাহক হয়ে আশার মিশনারী হয়ে উঠি। “পুণ্য উপাসনার বিবিধ দিক ও আমাদের অবস্থান” মূলভাবের আলোকে ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ বলেন, উপাসনা হল আমাদের বিশ্বাসের বাস্তব প্রতিফলন। উপাসনা হল ঈশ্বর ও তাঁর জনগণের মিলন। উপাসনা বিশেষত খ্রিস্টযাগ মণ্ডলীর সকল কাজের মধ্যে সর্বোচ্চ চূড়া ও উৎস।
ফাদার ফ্রান্সিস মুর্মু “ধর্মপ্রদেশীয় জীবনাহ্বান বৃদ্ধিতে যুগোপযোগী দিকনির্দেশনা” বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ব্রতীয় জীবনাহ্বান বৃদ্ধির কাজ বা দায়িত্ব শুধু ফাদার-সিস্টারদেরই নয়; একাজে প্রত্যেকজন খ্রিস্টভক্ত যুক্ত হতে পারেন। ‘কাথলিক মণ্ডলীর ধর্মীয় আইন অমান্য করার শাস্তির বিধান’ বিষয়ের ওপর ফাদার মিন্টু লরেন্স পালমা আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আমরা যারা যাজক তাদের এই আইন সমন্ধে জানা অতীব জরুরী।
বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃ-সংঘের যাজকদের সভার বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ছিলো বর্ষভিত্তিক পালকীয় অভিজ্ঞতা সহভাগিতা, বই ও স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, বিগত সভার কার্যবিবরণী পাঠ এবং নতুন পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। সমাপনী বক্তব্যে বিশপ জের্ভাস রোজারিও সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই বছর যিশুর জন্ম জুবিলীর সাথে একাত্ম হয়ে ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের সভার জন্য যে মূলভাব নেওয়া হয়েছিলো তা যুগোপযোগী। আমরা যে আশায় বসবাস করি তা যেন কখনো ভুলে না যাই। আমরা যদি মণ্ডলীকে ভালবাসি তাহলে অবশ্যই সেবাকাজ করবো। আর সেবাকাজ করা মানে যিশুকেই সেবা করা।