সংবাদদাতা: প্রতিবেদন কমিটি
খ্রিস্ট জন্মজয়ন্তী বর্ষে বিশ্ব মণ্ডলীর সাথে একাত্ম হয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ “খ্রিস্ট-জয়ন্তী: আশার তীর্থযাত্রায় অংশগ্রহণ” মূলভাব নিয়ে ধ্যান করছে। আমাদের অনেক আশা আছে; আর আশাই আমাদের সামনে এগিয়ে চলতে প্রেরণা দেয়, শক্তি জোগায় ও পথ দেখায়। আমরা জানি এই জগতের সকল আশা পূর্ণ হয় না। তবুও আমরা আশা করি- আশায় বুক বাঁধি। আমাদের জীবন একদিন ভরে উঠবে নিরবিচ্ছিন্ন সুখ আর আনন্দে। আমরা পাব বিজয়ের আনন্দ ও তৃপ্তি। ১১ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় সম্মেলনের শুভেচ্ছা বক্তব্যে বিশপ জের্ভাস রোজারিও এই কথা বলেন।
পালকীয় সম্মেলনে বিশপ, ৪৯জন ফাদার, ১জন ডিকন, ৩জন ব্রাদার, ৩৪জন সিস্টার এবং ১২০জন খ্রিস্টভক্তসহ মোট ২০৮জন অংশগ্রহণ করেন। পালকীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি বিশপ জের্ভাস রোজারিও ও পালকীয় সম্মেলনের আহ্বায়ক এবং খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রের পরিচালক ফাদার সাগর কোড়াইয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভিকার জেনারেল ফাদার ফাবিয়ান মারাণ্ডী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের উন্নয়ন কর্মকর্তা ফাদার উইলিয়াম মুরমু, পবিত্র আত্মা সেমিনারীর পরিচালক ফাদার পল গমেজ, ফাদার দিলীপ এস. কস্তা এবং কারিতাস রাজশাহী অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আরোক টপ্য। বিশপীয় পালকীয় পত্রের আলোকে আলোচক ফাদার বিশ্বনাথ মারাণ্ডী এবং সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিসেস টগর পিরিচ আসন গ্রহণ করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফাদার সাগর কোড়াইয়া বলেন, পুণ্যপিতা ফ্রান্সিস ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যায় সাধু পিতরের বাসিলিকার দরজা খোলার মধ্য দিয়ে যিশুর জন্ম জুবিলীবর্ষ উদ্বোধন করেন। এই দরজা খোলার অর্থ হচ্ছে, দরজার মধ্য দিয়ে প্রবেশ করে যেন প্রত্যেকে পাপের ক্ষমা লাভ করে পবিত্র জীবন যাপন করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, আজ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় পালকীয় সম্মেলন ২০২৫ শুরু করতে যাচ্ছি। আপনারা যারা ধর্মপল্লী ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিগণ এসেছেন, আপনাদের উপস্থিতির জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।
বিশপীয় পালকীয় পত্রের আলোকে “পরিবার, সমাজ ও ধর্মপল্লীতে কী কী বিষয় আমাদের ভয় দেখায়, হতাশা-নিরাশা নিয়ে আসে, আমাদের জীবনকে নিরানন্দ ও ছলনা করে এবং কীভাবে আমরা সে বিষয় থেকে মুক্ত হতে পারি” এর আলোকে আলোচনা করেন মিসেস টগর পিরিচ। তিনি বলেন, অভাব-অনটন, দুঃখ-কষ্ট. দুঃশ্চিন্তা, টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ, অস্তিত্ব বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ, অসুস্থতা, একাকিত্ব, স্নেহ-ভালবাসাহীনতা, পারিবারিক ভাঙ্গন, অসুস্থ নেতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা, ক্ষমতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি, পাপ-পঙ্কিলতা, প্রলোভন, অন্যায্যতা, পরাধীনতা ও বঞ্চনা আমাদের জীবনকে আনন্দহীন করে তুলে।
“ক্ষমা পাওয়া ও ক্ষমা দেওয়া’র বিষয়ে আমাদের মনোভাব কী? যারা সামাজিক ও আর্থিকভাবে ঋণগ্রস্ত তাদেরকে কীভাবে সহায়তা দিতে পারি” বিষয়ে ড. আরোক টপ্য বলেন, ক্ষমা হলো পবিত্র বাইবেলের অন্যতম প্রধান শিক্ষা। পুরাতন এবং নতুন নিয়মে ঈশ্বরের দয়া এবং অন্যদের ক্ষমা করার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। অন্যকে ক্ষমা করা বিষয়ে যিশু খ্রিস্ট আমাদের শিক্ষা দেন যে, ক্ষমা করা বাধ্যতামূলক, এর কোন বিকল্প নেই। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঋণে জর্জরিত মানুষদের সেবা ও সহায়তা প্রদর্শন করা আমাদের দায়িত্ব। শিশুদের শিক্ষাদান ও সমাজসেবা কার্যক্রমে যুক্ত করা, দরিদ্র ও প্রতিবন্ধী মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং সমাজের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করানো সামাজিক ঋণ পরিশোধের কার্যকর উপায়।
ফাদার বিশ্বনাথ ফাউস্তিনো মারাণ্ডী তার আলোচনায় “কীভাবে আমরা আশার তীর্থযাত্রায় অংশগ্রহণ করতে পারি? মণ্ডলীর বাণী প্রচার ও দয়ার কাজে কীভাবে আমরা অংশ নিতে পারি? মণ্ডলীর পঞ্চম আজ্ঞা পূরণ করতে আমাদের কী করা উচিত?” বিষয়গুলো তুলে ধরেন। উল্লেখ যে, প্রতিটি প্রশ্নের আলোকে আলোচনার পর রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের তিনটি ভিকারিয়া থেকে তিনজন তাদের মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
পালকীয় কর্মশালার মধ্যে আরো ছিলো প্যানেল আলোচনা, বিশপীয় পালকীয় পত্রের প্রশ্নের ওপর ভিকারিয়াভিত্তিক আলোচনা ও উত্তর লিপিবদ্ধকরণ, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পয়ত্রিশতম বার্ষিকীতে পদার্পণ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন, ধর্মপল্লীভিত্তিক বাস্তবভিত্তিক বাস্তবায়নযোগ্য ৫টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, মুক্তালোচনা, মূল্যায়ন এবং প্রেরণ বিবৃত্তি উপস্থাপন।
সিস্টার বিনু পালমা এলএইচসি মূল্যায়নে বলেন, মূলসুরের আলোকে তিনজন বক্তা পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে উপস্থাপনা করেছেন। তাদের উপস্থাপনা ছিল বাস্তবধর্মী ও অভিজ্ঞতাপূর্ণ। প্যানেল ও মুক্তালোচনায় বিষয়গুলো আরো পরিস্কারভাবে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। বাবলু রেনাতুস কোড়াইয়া বলেন, ক্রেডিট নির্বাচন নিয়ে যেন আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে কোন বাঁধা না আসে। এছাড়াও ক্রেডিটের কারণে যেন ধর্মপল্লী তথা মণ্ডলী কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। আব্রাহাম এক্কা বলেন, ধর্মপল্লীভিত্তিক কার্যক্রমের পরিকল্পনা গ্রহণ, আদর্শ পরিবার গড়ে তোলা ও পরিবারের মধ্যে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা সকলের প্রচেষ্টায় মোকাবেলা করা আমাদের দায়িত্ব।