নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের রমনা কাথিড্রালে সম্পন্ন হয়েছে বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজকদের বার্ষিক নির্জনধ্যান। ১৫ থেকে  ২০ এবং ২২ থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দুটি দলে এই নির্জনধ্যান অনুষ্ঠিত হয়। দুটি দলে ৪জন বিশপ ও ১৭১জন ধর্মপ্রদেশীয় যাজক নির্জনধ্যানে অংশগ্রহণ করেন। “যীশুর সাথে, মা মারীয়ার পথে যাজক” মূলভাবের আলোকে ফাদার মার্কুস মুর্মু নির্জনধ্যান পরিচালনা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ধর্মপ্রদেশীয় যাজক ভ্রাতৃসংঘের প্রেসিডেন্ট ফাদার মিন্টু লরেন্স পালমা বলেন, সারা বছর আমরা জনগণের জন্য সময় দিয়েছি। আমাদের নিজেদের যত্নের জন্য নির্জনধ্যানের এই চারটি দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিগত দলে যাজকগণ অত্যন্ত নীরবতা ও প্রার্থনাপূর্ণভাবে নির্জনধ্যান সম্পন্ন করেছেন। এবারো যেন এই চারটি দিন ঈশ্বরের সান্নিধ্যে নিজের জন্য সময় কাটাতে চেষ্টা করি।

ফাদার মার্কুস মুর্মু নির্জনধ্যান পরিচালনায় আধুনিক জগতে যাজকত্ব, যাজকীয় সেবাকাজ, যাজকীয় জীবনে মা মারীয়া, সিনোডালিটি ও সিনোডীয় আধ্যাত্মিকতা বিষয়ে কথা বলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, অভিষেকের দিন থেকে আমাদের যাজকীয় জীবন কেমন চলছে, পবিত্র আত্মা ঈশ্বর আমাকে কী বলছেন? যে যিশুকে আমরা অনুসরণ করি, তিনি কী করতেন; আর আমরা এখন কী করি? নির্জনধ্যানের এই কয়েকটি দিন আমরা যেন উক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করি। যাজকীয় জীবন হচ্ছে প্রার্থনারত যিশুকে অনুসরণ করার জীবন। যাজকত্বের ভিত্তি হবে প্রার্থনা।

ফাদার মার্কুস মুর্মু আরো বলেন, নির্জনধ্যানের এই সুযোগ হচ্ছে ঈশ্বরের নিকট থেকে মূল্যবান উপহার। আমরা দীক্ষাগ্রহণের মধ্য দিয়ে বাণীপ্রচারের দায়িত্ব পেয়েছি। আর এই প্রচার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমরা করি। আমাদের জীবনে আমরা যা করি তা মানুষের মঙ্গলসাধনের নিমিত্তে। তাই জনগণের সাথে সংলাপ করাটা জরুরি। আর যিশুর জীবনেও সংলাপের এই চিত্র দেখতে পাই। যাজকীয় জীবনে চারটি স্তম্ভ থাকা দরকার। স্তম্ভগুলো হলো, ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক, বিশপের সাথে সম্পর্ক, অন্য যাজকদের সাথে সম্পর্ক এবং জনগণের সাথে সম্পর্ক।

একজন যাজককে অতীতের দিকে কৃতজ্ঞতা, বর্তমানের দিকে অনুরাগ এবং ভবিষ্যতের দিকে আশার দৃষ্টিতে তাকাতে হয়। মা মারীয়া ঈশ্বরের মা এবং বিশ্বজনীন মা। মা মারীয়ার সাথে একজন যাজককে প্রতিদিন যাত্রা করতে হয়। মা মারীয়ার মধ্যস্হতায় ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করলে ঈশ্বর তা ফেলতে পারেন না। মা মারীয়া ব্যতিত একজন যাজক অনাথ। সিনোডীয় আধ্যাত্মিকতায় মণ্ডলীকে চলা দরকার। আর একজন যাজককে মণ্ডলীর সাথে যুক্ত থাকার কারণে সিনোডীয় আধ্যাত্মিকতায় চলতে হয়। পবিত্র আত্মার দানকে সিনোডীয় আধ্যাত্মিকতায় বরণ করে নেওয়া উচিত। মণ্ডলী যদি তীর্থযাত্রী ও শ্রবণধর্মী হতে পারে তাহলে সিনোডীয় আধ্যাত্মিকতায় পথ চলতে পারবে। সিনোডাল যাত্রায় সবার কথা ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে শুনে একটি সিদ্ধান্তে আসতে হয়। তাই মিলন সমাজ গড়তে হলে একই আধ্যাত্মিকতায় আসা দরকার।

নির্জনধ্যান সমন্ধে ফাদার মাইকেল কোড়াইয়া বলেন, ফাদার মার্কুস মুর্মু অত্যন্ত সুন্দর ও ফলপ্রসুভাবে নির্জনধ্যান পরিচালনা করেছেন। বাইবেল, মণ্ডলীর শিক্ষা, পিতৃগণ ও পোপদের শিক্ষার আলোকে আমাদের নির্জনধ্যানে আলোকিত করেছেন। আমাদের প্রচার ও প্রৈরিতিক কাজ যেন শুধুমাত্র উদাহরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং জনগণের প্রতি অনুকম্পা ও ভালবাসা নিয়ে নিজের জীবনাচরণের মধ্য দিয়ে জনপদের যাজক হয়ে উঠার কাজ অব্যাহত রাখা দরকার।

 

 

Please follow and like us: