ফাদার ফাবিয়ান মারাণ্ডী

ভূমিকা
এক শীতের রাত। বেথলেহেম শহরের বাইরে এক গোয়ালঘর। কোনো আলো নেই, কোনো নিরাপত্তা নেই, কোনো চিকিৎসা নেই, কোনো সম্মান নেই। সেই গোয়ালঘরেই জন্ম নিলো একটি শিশু- যার জন্য আজ আমরা ক্রিসমাস উদযাপন করি। প্রশ্ন জাগে: ঈশ্বর যদি আসতেন, তিনি কি রাজপ্রাসাদে আসতে পারতেন না? কেন তিনি জন্ম নিলেন দরিদ্রের ঘরে, সমাজের প্রান্তে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তরেই লুকিয়ে আছে ক্রিসমাসের সামাজিক ও মানবিক বার্তা।

বাইবেলীয় ভিত্তি: ঈশ্বর দরিদ্রের পাশে
“মরিয়ম তাঁর প্রথম সন্তানকে জন্ম দিলেন…এবং তাঁকে এক গোয়ালঘরে শুইয়ে রাখলেন।” ঈশ্বর নিজেই দারিদ্র্যকে বেঁছে নিলেন। তিনি ধনী হয়ে আমাদের সাহায্য করেননি; তিনি দরিদ্র হয়ে আমাদের উদ্ধার করলেন। “দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করতে আমাকে পাঠানো হয়েছে…” লুক ৪:১৮ । ঈশ্বরের দরিদ্রদের পাশে থাকা অর্থ হচ্ছে, দরিদ্রের জীবনে ঈশ্বরের প্রবেশ, বঞ্চিত মানুষের মর্যাদার ঘোষণা ও প্রান্তিক মানুষের গল্পকে কেন্দ্রে আনা।

ধর্মতাত্ত্বিক তাৎপর্য

অবতার-ঈশ্বর মানুষের মতো হলেন। “বাক্য মাংসধারী হলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করলেন” যোহন ১:১৪। এটাকে বলা হয় দেহধারণ। ঈশ্বর কেবল স্বর্গে নন, মানব বাস্তবতায় প্রবেশ করেছেন ক্ষুধা, কষ্ট, অনিশ্চয়তা-সবকিছুকে ঈশ্বর নিজে অনুভব করেছেন। মানুষের মর্যাদা ঈশ্বর নিজেই গ্রহণ করেছেন। সেন্ট আথানাসিয়াস বলেন, “ঈশ্বর মানুষ হলেন, যেন মানুষ ঈশ্বরের জীবনে অংশ নিতে পারে।” তাই কোনো মানুষ “অপ্রয়োজনীয়” নয় কোনো জীবন “মূল্যহীন” নয়।

ক্যাথলিক মণ্ডলীর সামাজিক শিক্ষা ক্রিসমাস

ক্রিসমাস আমাদের Catholic Social Teaching-এর মূল স্তম্ভগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়:

) মানব মর্যাদা (Human Dignity) যিশু একটি শিশুরূপে জন্ম নিয়ে বললেন- প্রতিটি শিশু, নারী, পুরুষের জীবন পবিত্র। Gaudium et Spes এ দেখি- ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবিতে সৃষ্ট হওয়ার কারণে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

) দরিদ্রদের প্রতি অগ্রাধিকার ((Preferential Option for the Poor)পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “ক্রিসমাস আমাদের শেখায় দরিদ্রদের চোখ দিয়ে পৃথিবী দেখতে।” যিশু জন্ম নিলেন: দরিদ্র পরিবারে, শরণার্থীর মতো (মিশরে পালিয়ে যাওয়া, মথি ২:১৩)। আজকের শরণার্থী, পথশিশু, বস্তিবাসী-তাঁদের মাঝেই বেথলেহেম পুনরাবৃত্তি হয়।

) সংহতি সহমর্মিতা (Solidarity)– পোপ দ্বিতীয় জন পল বলেন, “সংহতি মানে কেবল সাহায্য নয়, একসাথে ভাগ করে নেওয়া।” বড়দিন মানে: দূর থেকে দান নয়, পাশে দাঁড়ানো, একসাথে কষ্ট ভাগ করা। বড়দিন আমাদের শেখায়: কাজের আগে দৃষ্টি পরিবর্তন, উপকারভোগী নয়-সহযাত্রী, প্রজেক্ট নয়-মানুষ। আপনি যখন একজন শিশুর চোখে আশা ফেরান, একজন নারীর আত্মসম্মান ফিরিয়ে দেন, একজন বৃদ্ধকে ভালবাসা দেন ও কাছে ডাকেন-
সেই মুহূর্তে বেথলেহেম আবার জীবিত হয়।

উপসংহার

বেথলেহেম আজ কোথায়? বড়দিন কেবল ২৫ ডিসেম্বর নয়। বড়দিন ঘটে- বস্তিতে, শরণার্থী শিবিরে, প্রত্যেকের নীরব সেবায়। পোপ ফ্রান্সিস বলেন, “যেখানে ভালোবাসা কাজের রূপ নেয়, সেখানেই বড়দিন।”

Please follow and like us: