পোপ ফ্রান্সিস নভেম্বর মাসের ২০ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত থাইল্যান্ড এবং জাপান সফর করেছেন। ইটালির বাইরে এটা তাঁর ৩২তম বিদেশ সফর এবং এশিয়ায় ৪র্থ। তাঁর সফরকৃত পূর্ব এশিয়ার দক্ষিন কোরিয়া, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং জাপান- কোথায়ও খ্রিস্টাধর্ম বড় সম্প্রদায় নয়। আর দেশগুলো পোপ তাঁর সফরের সময় শান্তি ও সম্প্রীতির কথা বেশি বলেছেন। এটা খুবই যুক্তি সঙ্গত যে, যেখানে খ্রিস্টধর্মের লোক হাতে গোণা, সেখানে মিলে মিশে থাকার কথা, বাইবেলে বর্ণিত খামিরের কথা স্বাভাবিক। একই বাণী নিয়ে পোপ ২০ থাইল্যান্ডে পা রাখেন। ব্যাংককেও পোপ ২০-২১ নভেম্বর বৌদ্ধ ধর্মগুরু, সরকারি কর্মকর্তা এবং বিশপ-ফাদারদের সাথে সাক্ষাতের সময় শান্তি-সম্প্রীতির কথাই বলেছেন। নারী জাতিকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা, তাদের দিয়ে অনৈতিক ব্যবসা না করার আহ্বান জানিয়েছেন। পোপ ফ্রান্সিস ২২ নভেম্বর চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। এই ভাষণে পোপ শান্তি-সম্প্রীতির কথা বললেও মূলত: পরমানু অস্ত্র উৎপাদন, ব্যবহার এবং তার সঞ্চয়সহ সকল প্রকার বিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার ও উৎপাদনের বিরুদ্ধে জোড়ালো ভাষায় চার্চের অবস্থান তুলে ধরেছেন। পোপের জাপান সফরের একদিন আগে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, সেখানে তিনি কোন্ ভাষায় কথা বলবেন।
জাপান সরকার ছয়মাস আগেই জানতেন পোপ পরমানু অস্ত্র নিয়ে কথা বলবেন। জাপান সরকারও চাইতো পোপ এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলুক। কারণ জাপান বিশ্বের একমাত্র দেশ যাদের দু’টি পরমানু বোমার আঘাত হজম করার অভিজ্ঞতা ররেছে। পোপের জাপান সফর শুরু হয় নাগাসাকি এবং হিরোসিমা সফরের মধ্যদিয়ে। এই নাগাসাকি শহরেই সর্বপ্রথম খ্রিস্টধর্ম শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছিলেন সাধু ফ্রান্সিস জেভিয়ার ১৫৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট এবং জাপানে খ্রিস্টধর্মের গোড়া পত্তন করেন। তার ৪৭০ বছর পরে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আনবিক বোমার আঘাতে নাগাসাকি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এই মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি পরমানু অস্ত্র বন্ধ এবং শান্তির কথা বলেছেন। এর আগে বিশ্বের কোনো নেতা এতো জোড়ালো ভাষায় পরমানু অস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। পোপের জাপান সফরের মূল স্লোগান ছিলো “সর্বজনের জীবন রক্ষা।” পোপের ভাষায়- অভিভাসী, স্মরণার্থী, নৃ-গোষ্ঠী, বোট পিপুল; সবার মধ্যে রয়েছে ঈশ্বরের দেওয়া জীবন। আর মানুষের মধ্যে সমস্ত বিভেদ মানুষেরই তৈরি।
২০১৩ খ্রিস্টাব্দের মার্চে ফ্রান্সিস পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর ৮ জুলই সর্বপ্রথম রোমের বাইরে ইটালির ক্ষুদ্র অভিভাসন দ্বীপ লাম্পেদুসা সফর করেছিলেন। সেখানে তিনি কাঠের নৌকার বেদিতে খ্রিস্টযাগ অর্পণের সময় উপদেশ বাণীতে বলেছিলেন, আমরা বিশ্বায়নের এক উদাসীন সময়ে বসবাস করছি।” লাম্পেদুসা হলো আফ্রিকার সবচেয়ে কছের ইটালীয় দ্বীপ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কাঠের নৌকায় চড়ে ভুমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এই দ্বীপে আসতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি স্মরণার্থী ডুবে মারা গেছে। লাম্পেদুসা থেকে জাপান- গত প্রায় সাত বছরে পোপ ফ্রান্সিস হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁর মূল বার্তা থেকে একটুও সরে আসেননি। তাঁর এই মূল বার্তা হলো জীবন ঈশ্বরের দান। জাপানে পোপ পরমানু অস্ত্রের কথা বলতে গিয়ে বার বার উল্লেখ করেছেন, “এমন সমাজ গড়তে হবে যেখানে কেউ বাদ যাবে না।” তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যাই সেতু তৈরি করতে হবে তবে দেওয়াল নয়। জাপান বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। তবে ধনী হলেই যে মানুষ সুখে শান্তিতে থাকবে- এই দিকে ইংগীত দিয়ে পোপ বলেছেন, জাপান হলো এমন দেশ যেখানে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। যার প্রধান কারণ নি:সঙ্গতা ও শ্রদ্ধাহীনতা। তাঁর ভাষায়, প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্থবিত্তে নয়, কিন্তু প্রেম ভালোবাসায়। ফাদার সুনীল রোজারিও

Please follow and like us: