গত ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ নবাই বটতলা ধর্মপল্লীর উদ্যোগে ‘অংশগ্রহণকারী মণ্ডলিতে যুবক-যুবতীদের ভূমিকা’- মূলসুরের উপর ভিত্তি করে নবাই বটতলা ধর্মপল্লীতে বিভিন্ন গ্রাম হতে আগত ৬ষ্ঠ শ্রেণী হতে কলেজ-বিশ্ব বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত যুবক-যুবতীদের নিয়ে সারাদিনব্যাপী ধর্মপল্লীর পর্যায়ে যুবক-যুবতীদের আগমনকালীন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে ২৩৩ জন যুবক-যুবতী অংশগ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানসূচীতে ছিলো আসনগ্রহণসহ ক্ষুদ্র প্রার্থনা, অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা, পালক-পুরোহিতের শুভেচ্ছা বক্তব্য ও ফাদার সাগর কোড়াইয়ার মুলসুরের উপর উপস্থাপনা। তিনি যে কয়েকটি দিক তুলে ধরেন- (ক) সাধু ডন বস্কের উক্তিটির সাথে একমত হয়ে বলেন, যুবক-যুবতীদের দৌঁড়-লাফঝাঁপ করলেও পাপ করা উচিত নয় (খ) যুব বা তরুণ বয়সের ধর্মই হচ্ছে ছুটাছুটি করা। সব কিছু ভেঙ্গে নতুন করে গড়ে তোলা। কোন কিছুকে তোয়াক্কা না করা। একজন বৃদ্ধ বা মধ্য বয়স্ক যা করতে পারে না তা তরুণ ও যুবরাই করে দিতে পারে (গ) ২য় ভাটিকান মহাসভার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যুবরা তোমরাই তোমাদের বয়োজেষ্ঠ্যদের হাত থেকে মশাল গ্রহণ করবে এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যাপক পরিবর্তনের এমন এক যুগে বাস করবে যা পূর্বে কোন সময়ই বাস্তবরূপ লাভ করেনি (ঘ) তোমাদের পিতা-মাতা ও তোমাদের শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীদের শিক্ষার সবচেয়ে ভাল উদাহরণ গ্রহণ করে তোমরাই আগামী দিনের সমাজ গড়বে, সব রকম অহংবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাও। সহিংসা ও ঘৃণার প্রবৃত্তির দিকে অবাধ পশ্চাদ্ধাবন প্রত্যাখান কর কারণ তা থেকেই জন্ম নেয় যুদ্ধ ও তার ফলশ্রুতি হিসেবে যত দুর্দশা। উদার, পবিত্র, সশ্রদ্ধ ও অকপট হও এবং উৎসাহ নিয়ে তোমাদের প্রবীণদের চেয়ে আরও ভাল একটা বিশ্ব গড়ে তোল এবং (ঙ) ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে পুণ্যপিতা ফ্রান্সিসের বাংলাদেশ সফরে নটর ডেম কলেজে যুব সমাবেশে বলা কথা দিয়ে সহভাগিতা শেষ করেন, “যুবরা তোমরা আধুনিক ডিভাইসে সময় নষ্ট করো না, বরং বয়োজেষ্ঠ্যদের কাছে যাও, তাদের সময় দাও ও জ্ঞান অর্জন করো”।
ফাদার আরতুরো স্পেজিয়ালে, পিমে ‘যুবদের খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ ও পাপস্বীকার’ বিষয়ে সহভাগিতা করতে গিয়ে বলেন, ছোটকাল থেকেই পিতা-মাতার সাথে তিনি নিয়মিত গির্জায় যেতেন, প্রার্থনা করতেন, এমনকি মণ্ডলি বিভিন্ন সেবাকাজে অংশগ্রহণ করতেন। ভাল ও সৎ চিন্তাশীল ব্যক্তি পাপের পথ হতে নিজেকে অনেকটাই দূরে রাখতে পারে। দিনে দিনে মানুষ খ্রিস্টযাগে যোগদান করাকে অনেকটাই জাগতিক কাজ অপেক্ষা গুরুত্বহীন মনে করছে। আর এইজন্য পাপের অনুভূতি হারিয়ে যাচ্ছি। পাপকেও স্বাভাবিক মনে করছে। পাপের পথ ছাড়তে না পারলে যিশুর জম্ম উৎসব সত্যিকার অর্থে পালন করা সম্ভব নয়। তিনি যুবক-যুবতীদের অনুপ্রেরণা দেন নিয়মিত গির্জা-প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করার, ভাল চিন্তা ও কাজ করার। যিশুর ক্রুশের দিকে তাকানো যাতে যিশু তাদেরকে নিয়ে কী করতে চান তা বুঝতে পারেন।
খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্যকারী ফাদার সাগর বলেন, সজাগ-সতর্ক-সচেতন না হলে আমার জীবনে যিশুর আগমন অর্থহীন। পাপ-পঙ্কিলতাকে জয় করা, আকা-বাকা পথ সোজা-সরলকরণ, উচু-নীচু পাহাড়-পর্বত সমান্তরাল করণের মাধ্যমে যিশুর রাজ্য বিস্তার করতে পারি।
পাপস্বীকার সংস্কার গ্রহণ, সেমিনারের মূল্যায়ন, পালক পুরোহিতের ধন্যবাদ জ্ঞাপন, সহকারী পালক পুরোহিতের প্রার্থনাসহ আশির্বাদ ও দুপুরের আহারের মধ্য দিয়ে সেমিনারের পরিসমাপ্তি ঘটে।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার মার্টিন স্বপন পিউরীফিকেশন