ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিনিধি

ভাটিকান:

পোপ ৬ষ্ঠ পৌল এবং প্যাট্রিয়ার্ক আথেনাগোরাস-এর মধ্যে সম্প্রীতি-আলীঙ্গনের ৬০ বছরের বর্ষপূর্তি উল্লেখ করে পোপ ফ্রান্সিস এই ঘটনাকে “অযোগ্য যোগাযোগের প্রাচীর পতন” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি পোপ ভাটিকান অবস্থিত সাধু পিতরের মহা মন্দিরে খ্রিস্টযাগ অর্পণ শেষে দূতসংবাদ বার্তায় এই কথা বলেন। এখন থেকে ৬০ বছর আগে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দের ৫ জানুয়ারি জেরুসালেম নগরীতে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যপথ অনুসারি প্যাট্রিয়ার্ক আথেনাগোরাস এবং পোপ ৬ষ্ঠ পৌলের মধ্যে সম্প্রীতির আলীঙ্গন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। যার ফলে দুই চার্চের মধ্যে শতাব্দিকাল ধরে চলমান বৈরী মনোভাবের অবসান হয়েছিলো। প্রসঙ্গক্রমে পোপ ফ্রান্সিস শান্তির বার্তায় বলেন, এই মূহুর্তে মধ্যপ্রাচ্য, প্যালেষ্টাইন-ইস্রায়েল, ইউক্রেন-রাশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলে যে সংঘাত চলছে তার একমাত্র কারণ, “শান্তি উদ্যোগের অভাব।” পোপ বলেন, একমাত্র যুদ্ধের কারণে প্রতিদিন মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, মানুষ অসহায় হচ্ছে এবং ধ্বংস যজ্ঞ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোপ বলেন, এই দুই মহান নেতার কাছ থেকে আমাদের পথের শিক্ষা নিতে হবে যেনো “একসঙ্গে প্রার্থনা, একসঙ্গে যাত্রা এবং একসঙ্গে কাজ করতে পারি।” পোপ ফ্রান্সিস সবশেষে বলেন, “ঈশ্বর পৃথিবীতে নেমে এসেছিলেন একসঙ্গে চলার পথের সন্ধান দেওয়ার জন্যে। তাই আমাদের আপন আপন ধর্মের উর্ধ্বে উঠে একসঙ্গে এই চলার পথ প্রতিদিনই সন্ধান করতে হবে।”

শ্রীলঙ্কা :

শ্রীলঙ্কার চিলাউ ধর্মপ্রদেশের ক্যাথলিকগণ বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য প্যাগোডা নির্মাণে সহায়তা দান করেছেন। চিলাউ ধর্মপ্রদেশের কালপিতিয়া শহরে এই প্যাগোডা নির্মাণের মধ্যদিয়ে ক্যাথলিকগণ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের নিদর্শন তুলে ধরেছেন। কালপিতিয়া ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত সম্পথ প্রসঙ্গা পেরেইরা এবং তার দুইজন সহকারি পুরোহিত জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ এই কাজে এগিয়ে আসেন। কালপিতিয়া বৌদ্ধ আশ্রমের প্রধান ভিক্ষু দিয়াসেনা থেরো ক্যাথলিক চার্চের এই পদক্ষেপকে এই অঞ্চলের মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। চিলাউ ধর্মপ্রদেশের কালপিতিয়া শহরে বৌদ্ধ, হিন্দু, ক্যাথলিক এবং মুসলিম ধর্মের অনুসারিগণ একত্রে বসবাস করছেন। এই ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত সম্পথ প্রসঙ্গা পেরেইরা বলেন, “আমরা বিভিন্ন ধর্মের অনুসারি হতে পারি কিন্তু সবাই এক স্রষ্টার মানুষ, তাই আমাদের সর্বদা ঐক্য এবং ভালোবাসার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।

মিয়ানমার :

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নবাদীদের যুদ্ধ খ্রিস্টানদের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি সে দেশের নির্বাচিত সরকার অং সান সু কী’কে ক্ষমতাচ্যূত করার পর থেকে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো সোচ্চার হয়ে উঠে। সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার জন্য বিভিন্ন স্থাপনার উপর বিমান হামলা শুরু করে। এই বিমান হামলায় মিয়ানমারের খ্রিস্টান অধ্যূষিত চিন প্রদেশে কমপক্ষে ১০টি গির্জাসহ নানা স্থাপনা ও বসতীর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চিন প্রদেশে প্রায় ৮৫ শতাংশ জনগণ খ্রিস্টধর্মের অনুসারি। এই প্রদেশের মানবাধিকার সংস্থার হিসাব মতে, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ থেকে এ যাবৎ ১০০টি ধর্মীয় এলাকায় ৫৫টি খ্রিস্টান প্রতিষ্ঠান বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়েছে। এইসব হামলার ফলে দিন দিন খ্রিস্টানদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ছে। মিয়ানমারে ৫৪ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ৮৯ শতাংশ বৌদ্ধ এবং মাত্র ৬ শতাংশ খ্রিস্টান।

গাজা ভূ-খন্ড :

গাজা ভূ-খন্ডে আহত শিশুদের ইটালিতে চিকিৎসা সেবা দেবার বিষয়ে ভাটিকানের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সংস্থাটির ভিকার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন যে, খুব শীগ্রই তারা ইস্রায়েলের সম্মতি নিয়ে মিসরের সহায়তায় আহত ফিলিস্তিনি শিশুদের ইটালি এনে চিকিৎিসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করবেন। খবরে বলা হয়েছে যে, প্রথম দুই কিস্তিতে ১০০ জন শিশুকে ইটালিতে নেওয়া হবে এবং পরে সুযোগ ও হাসপাতালের ব্যবস্থা করে আরো আহত শিশুকে চিকিৎসার জন্য ইটালিতে নেওয়া হবে। মানবাধিকার সংস্থার সঙ্গে জড়িত ফাদার ইব্রাহিম ফালতাস, ভাটিকানের লা’অজ্জারভাতরে রোমানো সংবাদপত্রের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তিনি বহুদিন ধরে গাজা ভূ-খন্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে সহায়তা দিয়ে আসছেন। ইটালি সরকার ফিলিস্তিনি আহত শিশুদের চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে ফাদার ফালতাসের সহায়তা চাইলে তিনি এই ব্যাপারে এগিয়ে আসেন। ভাটিকান এই সংস্থার মতে, শিশুদের যত্ন নেওয়া মানে ভবিষ্যতের যত্ন নেওয়া।

উগান্ডা :

উগান্ডার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত আরুয়া ধর্মপ্রদেশের বিশপ সাবিনো ওচান ওদোকি তার ধর্মপ্রদেশে বসবাসরত স্মরণার্থীদের সাহায্য সহায়তা দেওয়ার জন্য ভাটিকানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিশপ সাবিনো ভাটিকান নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, হলি সী স্মরণার্থীদের মধ্যে পালকীয় কাজ করার জন্য যে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন সে জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। তিনি স্মরণার্থী ও অভিবাসীদের জন্য বিশেষ পালকীয় অঞ্চল ঘোষণা ক’রে ফাদার ফেলিক্স দ্রানি’কে সার্বক্ষণিক কাজ করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশপ সাবিনো তার আরুয়া ধর্মপ্রদেশে স্মরণার্থী ও অভিবাসীদের পালকীয় ও অন্যান্যভাবে সাহায্য করার জন্য স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে উগান্ডা সরকার ও জাতিসংঘ স্মরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আরুয়া ধর্মপ্রদেশ দক্ষিণ সুদান ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বর্তমানে এই ধর্মপ্রদেশে এক মিলিয়নের বেশি স্মরণার্থী অবস্থান করছে।

বাংলাদেশ :

গত ২ ফেব্রুয়ারি ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ভাবধারায় পানজোড়াসহ দেশের বিভিন্ন ধর্মপল্লী ও কেন্দ্রে সাধু আন্তনীর পর্ব পালিত হয়েছে। ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের নাগরী ধর্মপল্লীর অদূরে অবস্থিত সাধু আন্তনীর তীর্থভূমিতে অনুষ্ঠিত এই ধর্মীয় সমাবেশ ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সমাবেশ। সাধু আন্তনীর প্রতি ভক্তি ও ভক্তদের মানত-নিয়ত পূরণের আশায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খ্রিস্টভক্তগণ এই তীর্থ উৎসবে যোগদান করেন। তীর্থপর্বের পূর্বে মাসব্যাপী নানা ধর্মকর্মের মধ্যদিয়ে ভক্তদের আধ্যাক্তিক সেবা প্রদান করা হয়। দিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় মহাখ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন, ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের আর্চবিশপ বিজয় এন. ডি’ক্রুশ, ওএমআই এবং সঙ্গে অন্যন্য যাজকদের মধ্যে ছিলেন ভাটিকানের পোপের প্রতিনিধি আর্চবিশপ কেভিন রান্ডাল।

এদিকে একই তারিখে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের মথুরাপুর ধর্মপল্লীর কাথুলি উপধর্মপল্লী কেন্দ্রে ধর্মীয় ভাবধারায় সাধু আন্তনীর পর্ব পালিত হয়েছে। পর্বদিনের খ্রিস্টযাগে পৌরহিত্য করেন বরিশাল ধর্মপ্রদেশের বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও। এখানে উল্লেখ্য যে, বিশপ রোজারিও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের  বৃহত্তর মথুরাপুর সেন্ট রীতা ধর্মপল্লী এবং বর্তমান ফৈলজনা অন্তর্গত সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ধর্মপল্লীর সন্তান। বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও’কে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে স্বাগতম।

Please follow and like us: