“সাধু আন্তনী, মোদের প্রতিপালক তুমি…” নয় দিন নভেনা প্রার্থনা, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, পাপস্বীকার সংস্কার ও সাধু আন্তনীর বিভিন্ন গুণাবলী ধ্যান করার পর গত ২ ফেব্রুয়ারি মহাসমারহে মথুরাপুর ধর্মপল্লীর অধীনস্থ কাতুলি গ্রামে পালিত হলো সাধু আন্তনীর তীর্থ উৎসব এবং ভক্ত হৃদয়ে বেঁজে উঠেছিল প্রিয় এই গান।
পর্ব দিনের আগের সন্ধায় আলোর শোভাযাত্রা করে সাধু আন্তনীর মধ্যন্থতায় কৃপা যাচনা করা হয়। এছাড়া পর্বীয় খ্রিস্টযাগে বনপাড়া, বোণী, মথুরাপুর, ফৈলজনা, ভবানীপুর, গোপালপুর-সহ বিভিন্ন মিশন থেকে আগত এবং সুদূর ঢাকা থেকে আগত অনেকেই সাধু আন্তনীর প্রতি ভক্তি, ভালোবাসা, ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও মানোত জানাতে এই পর্বীয় উৎসবে আসেন। পবিত্র খ্রিস্টযাগে বরিশাল ধর্মপ্রদেশ থেকে আগত বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও , দশজন যাজক , দুই জন রিজেন্ট, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সিস্টারগণ-সহ প্রায় ৪০০০- এর বেশি খ্রিস্টভক্ত পর্ব উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পর্বীয় খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করার পূর্বে পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ মহোদয়কে ফুলের মাল্য ও কীর্তন গানের মধ্য দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরবর্তীতে সাধু আন্তনীর নয়টি গুণের আলোকে নয়টি প্রদ্বীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়।
পর্বীয় খ্রিস্টযাগে প্রধান পৌরহিত্যকারী বিশপ মহোদয় তাঁর উপদেশ বাণীতে বলেন “ ভালোবাসি। আমরা সকলেই ভালোবাসি শব্দটি শুনতে চাই। যাকে ভালোবাসি তাকে বার বার ভালোবাসি বলি ও তাঁর কাছে ছুটে আসি। ঠিক তেমনি আমরা সাধু আন্তনীকে ভালোবাসি বলেই প্রতি বছর এই কাতুলি গ্রামে বিভিন্ন মিশন থেকে ছুটে আসি। সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় আমরা মানোত জানাই, অনেক কৃপা পাই এবং বিশেষভাবে হারানো জিনিস ফিরে পাই। আমি বিশপ হিসেবে বলছি, আমিও সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করার মধ্য দিয়ে আমার হারানো জিনিস ফিরে পেয়েছি। তাই আমি বলতে চাই, সাধু আন্তনী আমাদের অন্তরে যে বিশ্বাস জন্ম দিয়েছে আমরা যেন সর্বদা এই বিশ্বাস ধরে রাখি যাতে করে সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায়, তাঁর হাত ধরে আমরা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারি।
সাধু আন্তনীর তীর্থ উৎসবে যিনি গান পরিচালনা করে সাহায্য করে থাকেন; খ্রিস্টভক্ত সাগরী গমেজ তাঁর অনুভূতিতে বলেন “তীর্থ মানে পুণ্য অর্জন, তীর্থ মানে আনন্দ, সকলের মিলন মেলা। আমি সারা বছর অপেক্ষায় থাকি এই দিনটি কবে আসবে। যখন তীর্থ উৎসবের দিন তারিখ ঠিক হলো তখন আমার মনের মধ্যে নানান রকম পরিকল্পনা কাজ করতে থাকে। আমি যেহেতু তীর্থ উৎসবে গান পরিচালনা করে থাকি তাই কবে, কখন, কোন কোন গান শিখাবো আমার মাথায় ঘোর পাক খেতে থাকে। সে এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করে। সাধু আন্তনীর তীর্থে এত মানুষের উপস্থিতি, প্রার্থনাময় পরিবেশ আমার মনের বিশ্বাসকে আরো শতগুণ বাড়িয়ে দেয়। নয় দিন নভেনা, বিভিন্ন মিশন থেকে আগত ফাদারদের খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ, পাপস্বীকার আমার আধ্যাত্মিক প্রস্তুতি বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে। আরো ভালো লাগে যে গ্রামটিকে মানুষ এতদিন চিনতো না সাধু আন্তনীর তীর্থ উৎসবের কারণে এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা খ্রিস্টবিশ্বাসীরা এখন চিনতে পারছে। পর্বীয় খ্রিস্টযাগে বরিশাল ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ ইম্মানুয়েল কানন রোজারিও-এর উপদেশ বাণী সত্যিই মনকে আরো বেশি আবেগময় করে তুলেছে। তাঁর উপদেশ বাণী শুনে আমার মনে হয় আমিও সাধু আন্তনীকে বলি, I love you “ সাধু আন্তনী”। আমাদের এই অজপাড়া গাঁ হতে সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় খ্রিস্টবাণী প্রচার হচ্ছে এই কথা মনে হলে নিজেকে আরো বেশি ভাগ্যবতী মনে হয়। সাধু আন্তনীর অনেক গুণাবলী রয়েছে। এর মধ্যে দয়ালু গুণটি এ বছর আমার ভালো লেগেছে। কারণ এ বছর আমি তাঁর কাছ থেকে অনেক দয়া পেয়েছি। আপনারাও সাধু আন্তনীর মধ্যস্থতায় ঈশ্বরের কাছে বিশ্বাস নিয়ে প্রার্থনা করবেন, দেখবেন এর ফল পাবেনই। সাধু আন্তনীকে কেন্দ্র করে আমাদের গ্রামে যে উৎসবমূখর পরিবেশ, সত্যিই আমার কাছে অনেক ভালো লাগে, অনেক আনন্দ হয়, যে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। সকল খ্রিস্টভক্তদের আগামী বছরের তীর্থের অগ্রীম নিমন্ত্রণ/ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ”
পবিত্র খ্রিস্টযাগের পর খ্রিস্টভক্তদের মানোত আশির্বাদ, সাধু আন্তনীর পবিত্র কার্ড, সত্য ঘটনার সাক্ষ্য নিয়ে প্রকাশিত অনুগ্রহ পত্রিকার মোড়ক উন্মোচন, পর্বীয় স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ফটো সভা এবং পরবর্তীতে পর্বীয় শুভেচ্ছা, আশির্বাদের চিহ্ন হিসেবে বিস্কুট বিতরণ এবং দুপুরে আহারের মধ্য দিয়ে পর্ব দিনের উৎসব সমাপ্ত করা হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : ফাদার উজ্জ্বল রিবেরু