“এই জগতে তোমাকে সুখ-শান্তি দেবার প্রতিশ্রুতি দিতে পারি না, কেবল পরবর্তী জীবনে তা দিতে পারি।” এ কথা মা মারিয়া সাধ্বী বার্নাদেত্তাকে বলেন। কিশোরী বার্ণাদেত্তা নীরবে তার জীবন কাটাতেন, এক সময় তিনি একটি মঠে বা সন্ন্যাসীনি আশ্রমে যান এবং নিজের প্রতি কোন দৃষ্টি না দিয়ে কেবল ঈশ্বরের কাছে সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। অতঃপর তিনি একজন মহান সাধ্বী হন। আজ অবধি তাঁর মৃতদেহ একই অবস্থায় রয়েছে এবং ইহা দেখতে এতোই সুন্দর মনে হবে যেন তিনি ঘুমিয়ে আছেন! সত্যিই এটা আশ্চর্যজনক!”
গত ৯ ফেব্রুয়ারি, লুর্দের রাণী মারিয়া তীর্থ ও বনপাড়া ধর্মপল্লীর পর্ব উদযাপন করা হয়। তীর্থের ও পর্বদিনের খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও। তাঁর সহার্পিত খ্রিস্টযাগে ধর্মপল্লীর পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ এস.কস্তা, সহকারি পাল-পুরোহিত ফাদার পিউস নিকু গমেজ ও সেন্ট যোসেফ স্কুল ও কলেজের প্রিন্সিপাল শংকর ডমিনিক গমেজসহ আরো ১১ জন ফাদার, ১৪ জন সিস্টার ও প্রায় ৩,০০০ মত খ্রিস্টভক্ত পর্বীয় খ্রিস্টযাগে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক খ্রিস্টভক্ত তাদের মানত পূর্ণ হওয়ায় মায়ের প্রতি তাদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার উদ্দেশ্যেও খ্রিস্টযাগে যোগদান করতে আসেন। এখানে উল্লেখ্য যে, তীর্থের প্রস্তুতিস্বরূপ চলে নয় দিনের নভেনা। বিভিন্ন ফাদারগণ, মা মারিয়ার বিভিন্ন গুণাবলী নিয়ে ৯ দিন ব্যাপী নয়টি উদ্দেশ্য ১ম দিন- মা মারিয়ার আত্মনিবেদন, ২য় দিন- নম্রতার আদর্শ মা মারিয়া, ৩য় দিন- মা মারিয়া মণ্ডলির মাতা, ৪র্থ দিন- নিরাময়কারী মা মারিয়া, ৫ম দিন- দুর্বল ও অসহায়ের শক্তি মা মারিয়া, ৬ষ্ঠ দিন- পরিবারের রাণী মা মারিয়া, ৭ম দিন- অমলোদ্ভবা মা মারিয়া, ৮ম দিন- পাপীদের আশ্রম এবং ৯ম দিন- লূর্দের রাণী মা মারিয়া: আমাদের প্রতি পালিকা বিষয়ের উপর ভিত্তি করে খ্রিস্টযাগের উপদেশ দেন ও নভেনা পরিচালনা করেন। নভেনার খ্রিস্টযাগে শত শত খ্রিস্টভক্তগণ যোগদান করেছেন বলে জানিয়েছেন নভেনায় অংশগ্রহণকারি খ্রিস্টভক্তগণ।
খ্রিস্টযাগের শুরুতেই বিগত বছরের সকল দয়াদানের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে পর্বকর্তা ও মিশার উদ্দেশ্য দাতাদের নাম ঘোষণা করা হয়।
রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ জের্ভাস রোজারিও পর্বদিনে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, ধর্মপল্লীর প্রতিপালিকা লূর্দের রাণী মা মারিয়ার পর্বদিনে আমি আসতে পেরে নিজেই অনেক খুশি হয়েছি। আজ আমি সত্যিই খুবই আনন্দিত। আজকের এই পর্বীয় খ্রিস্টযাগে অনেকেই যোগদান করেছেন এবং মা মারিয়ার মধ্যস্থতায় প্রার্থনা করেছেন। তবে যারা আজ এই পবিত্র উপাসনায় আসতে পারেনি তাদের সকলকে আমি পর্বীয় শুভেচ্ছা জানাই। আমি মনে করি লূর্দের রাণী মারিয়া প্রার্থনার মধ্যদিয়ে, তার সহায়তার মধ্যদিয়ে সকল খ্রিস্টভক্তদের যারা বিশেষভাবে এ পর্ব করতে এসেছেন এবং মানত করেছেন যেন তাদের ইচ্ছা পূরণ করেন এবং সৎ পথে পরিচালনা করেন। এই প্রার্থনা করি এবং ঈশ্বর সকলকে আশির্বাদ দান করুন।
পবিত্র খ্রিস্টযাগের শেষ আশির্বাদের আগে পর্বীয় বিস্কুট আশির্বাদ করেন ও পরে রোগীদের নিরাময় কামনা করে প্রার্থনা করা হয়। অতঃপর পর্বীয় মহা খ্রিস্টযাগের বিশেষ আশির্বাদ দান করেন বিশপ মহোদয়। তারপর সকল ফাদারগণ লূর্দের রাণী মারিয়ার মূর্তির কাছে গিয়ে নীরবে প্রার্থনা করেন।
পর্বে অংশগ্রহণকারী মিসেস ডালিয়া বলেন, এই পার্বণে আসার উদ্দেশ্য হলো-আমার স্বামী, সন্তান ও আত্মীয় পরিস্বজন বন্ধুবান্ধব যেন ভালো থাকে, সুস্থ্য থাকে। এ পার্বণে যেন প্রতিনিয়ত দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসে এবং এই জায়গাটি যেন একটি তীর্থভূমি হয়ে উঠে।
মিসেস সাগরী গমেজ তার অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, আমি মথুরাপুর ধর্মপল্লী থেকে এসেছি। আমার মানত ছিল। আমার পরিবারের শান্তি, সারা বিশ্বের শান্তি সব কিছুর জন্য আমি এখানে প্রার্থনা করতে এসেছি। আজকে এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে কারণ এতো মানুষের সমাগম অনুষ্ঠানকে আরো প্রার্থনাপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ করে তুলেছে। আমরা সকলে মনোযোগ সহকারে খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণ করেছি। খ্রিস্টযাগে বিশপ মহোদয় অনেক সুন্দর উপদেশ বাণী রেখেছেন। আমরা যেন সকলে সেই বাণী আমাদের সকলের মাঝে প্রচার করতে পারি। এই আশা এবং এই প্রার্থনা নিয়ে আমরা বাড়ি যাব। সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
বনপাড়া ধর্মপল্লীর পালকীয় পরিষদের সদস্যা মিসেস কুসুম কস্তা তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন এইভাবে, আমি মায়ের অনেক কৃপা আশিষ লাভ করেছি। আমার ছেলে যখন অনেক অসুস্থ্য ছিল। আমি মায়ের কাছে অনেক আকুতি মিনতি করেছি। মা আমার আশা পূরণ করেছে। তাই আমার সমস্ত বিশ্বাস মায়ের কাছে রাখি তিনি আমার সমস্ত আশা পূর্ণ করেছেন এবং করবেন এ প্রত্যাশাও রাখি। সেই সাথে আজও মায়ের কাছে অনেক কৃপা ও আশির্বাদ যাচ্না করছি।
পাল-পুরোহিত ফাদার দিলীপ এস.কস্তা খ্রিস্টযাগে অংশগ্রহণকারী সকল ফাদার, সিস্টার ও খ্রিস্টভক্তদেরকে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন- সবাইকে পর্বীয় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। লূর্দের রাণী মা মারিয়া আমাদের ধর্মপল্লীর প্রতিপালিকা। প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও আমরা যথাযথ প্রস্তুতির মধ্যদিয়ে এই পর্ব উদযাপন করেছি এবং এবছর আমি অনেক বেশি আনন্দিত অনেক খ্রিস্টভক্তগণ সমবেত হয়েছেন এবং সুন্দরভাবে পর্ব দিবসটি উদযাপন করতে পেরেছি বলে আমি অনেক আনন্দিত। মা মারিয়া আমাদের অনেকভাবে সহায়তা দিয়ে থাকেন রক্ষা করেন সেইজন্য মা মারিয়ার প্রতি আমাদের ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। মায়ের মধ্যদিয়ে আমাদের ধর্মপল্লী তথা বিশ্ব মণ্ডলির শান্তি বিরাজ করুক সেই প্রার্থনা করি আজকের এই পর্ব দিনে। সকলে ভাল থাকবেন এই প্রত্যাশা করি। ধন্যবাদ।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার