গত ০৯ হতে ১০ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ‘পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীতে’ বেদীসেবক ও ক্যাসাক প্রদান অনুষ্ঠান হয়। ০৯ ফ্রেব্রুয়ারি রোজ শুক্রবার বিকেল ৪:৩০ মিনিটে পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী’র গেট থেকে বেদীসেবক প্রার্থী ও পিতা-মাতাদের কীর্তন সহযোগে নতুন পবিত্র আত্মা ভবনের সামনে আনা হয়। শ্রদ্ধেয় ফাদার পল গমেজ, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারী’র পরিচালক, শ্রদ্ধেয় ফাদার রোদন রবার্ট হাদিমা, সহকারী পরিচালক, শ্রদ্ধেয় ফাদার আন্তনী হাঁসদাক, শিক্ষা পরিচালক, শ্রদ্ধেয় ফাদার স্ট্যানলী কস্তা, আধ্যাত্মিক পরিচালক, শ্রদ্ধেয় ফাদার ফ্রান্সিস মূর্মু, শ্রদ্ধেয় ফাদার পিটার শ্যানেল গমেজ এবং অন্যান্য ফাদারগণ, সিস্টারগণ, অভিভাবকগণ, আত্মীয়-স্বজনদের উপস্থিতিতে বেদীসেবক প্রার্থী অভিভাবকদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ বিনিময় এবং ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। শেষে শ্রদ্ধেয় ফাদার ফ্রান্সিস মূর্মু ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা এবং আরাধনা আরম্ভ হয়। আরাধনার মূলসুর: “আনন্দে চিত্তে, বিনম্র সেবায়, আমাদের যাত্রা”।
এই উপাসনায় বা খ্রিস্টযাগে ফাদারগণ, সিস্টাগণ এবং বেদীসেবক প্রার্থীর অভিভাবকগণ, আত্মীয়স্বজন ও খ্রিস্টভক্তগণ প্রায় ২৫০ জনের মতো উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান পুরোহিত্য করেন পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, দিনাজপুর ধর্মোপ্রদেশ। তিনি তাঁর উপদেশ বাণীতে ‘বাইবেলের আলোকে ও বেদীসেবক প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে’ দায়িত্ব নিয়ে সুন্দরভাবে আলোকপাত করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সবাই পাপী মানুষ; পাপী হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন দিকে থেকে ঈশ্বরের মনোনীত জন; ঈশ্বর আমাদেরকে মনোনীত করে বিভিন্ন কাজের জন্য। বিশেষ করে ঈশ্বরের ক্রিয়াকর্মে, পবিত্র কাজের জন্য, যাজকদের সেবার জন্য ও বেদীতে সাহায্য করা। এমনকি খ্রিস্টপ্রসাদ বিতরণ সাহায্য করবেন। এই পবিত্র কাজের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের কাছাকাছি থাকার সুযোগ হয়। তিনি বলেন: মা-মারিয়া যিশুকে গ্রহণ করেন তাঁর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ঈশ্বর তাঁকে সুন্দর সুযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন। একইভাবে আজ যারা বেদীসেবক দায়িত্ব পাবে; তারাও মা-মারিয়ার মতো যিশুকে অন্যের কাছে প্রচার করবে। কারণ স্বয়ং যিশু হচ্ছেন ‘কৃপাদানকারী ও কৃপা পাওয়ার পথ’। যিশু নিজে অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছেন এবং নিরাময় করেছেন। ঠিক তেমনি তোমরাও নিজেদেরকে যোগ্য করে তুলবে।
কেন পোষাক প্রয়োজন? এই শুভ্রপোষাক নিজেকে সুসজ্জিত করার জন্য নয় বরং এই পোষাক পরিধানের মধ্য দিয়ে সুন্দর পবিত্র হওয়ার আহ্বান ও পবিত্র হওয়া। শুভ্রতার চিহৃ হচ্ছে এই পোষাক। শুভ্রপোষাক পাওয়ার সাথে সাথে পবিত্র হওয়ার ধ্যান-সাধনা চলমান থাকবে। এই ধ্যান-সাধনা সহজ নয়, অনেক কষ্টভোগ করতে হয়। যিশু তাঁর জীবনে অনেক কষ্টভোগ করেছেন। যিশু বলেছেন “তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হোক”। তাই আমাদেরকেও নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে আত্মনিয়োগ করতে হবে। শেষে তিনি বলেন, “সাতজন ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করি এবং অনুপ্রেরণা, উদ্দীপনা, উৎসাহ প্রদান দিই।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্বাগতম একটি নৃত্যের মধ্য দিয়ে বিশপ, ফাদারগণ ও শুভ্রপোষাক লাভকারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, তিনি বলেন, “সাতজন ভাই ঈশ্বরের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা যাজক হওয়ার জন্য ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরোও বলেন, তোমরা সকল জাতির মধ্যে যিশুকে প্রচার করবে তোমাদের জীবনাচরণের মধ্যদিয়ে। তোমাদের জীবনাচরণ যেন হয়ে উঠে যিশুময় জীবন। এই জন্য আমাদের আরোও ফাদার, সিস্টার, ব্রাদার প্রয়োজন; যিশুর মহিমান্বিত প্রকাশ করার জন্য। মাদার তেরেজা বলেন, “শান্তি বার্তা বয়ে আনতে হবে”। তাই সবাইকে আহ্বান করে বলেন, “আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা লাভের জন্য উৎসাহ, উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণা যোগাতে হবে; যাতে আমাদের মণ্ডলিকে নতুন রূপে, রূপান্তরিত করতে পারি। এরই মধ্য দিয়ে আমাদের খ্রিস্টমণ্ডলি প্রচার ও প্রসার হবে।
তারপর বেদীসেবক ও ক্যাসাক লাভকারী’র পৌলিনুস মূর্মু’র বাবা তাঁর ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। শেষে শ্রদ্ধেয় ফাদার পল গমেজ, পবিত্র আত্মা উচ্চ সেমিনারীর পরিচালক বলেন, “আজ মণ্ডলিতে খুশির দিন। এই সাতজন ভাইকে কেন্দ্র করে। তারা শুভ্রপোষাক করার ফলে ঈশ্বরের আহ্বান বা যাজক হওয়ার বাসনা জন্য এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমরা যাজকদের সাথে থেকে অভিজ্ঞতা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে।”
শেষে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পরম শ্রদ্ধেয় বিশপ সেবাস্টিয়ান টুডু, শেষ আশির্বাদের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি সমাপ্তি হয়।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : জের্ভাস গাব্রিয়েল মূর্মু