ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক
ভূমিকা : প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যালোচনার ৪র্থ পর্ব তুলে ধরা হলো।
বোর্ণী ধর্মপল্লীর “পারবোর্ণী খ্রিস্টান শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংঘ” প্রতি বছর বড়দিনে ন্যায় এবারও প্রকাশ করেছে বড়দিন সংখ্যা ‘শিকড়’। গত ১৭ বছর ধরে এই সংগঠন তাদের বড়দিন সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে। পত্রিকার সম্পাদকীয়তে সর্বজনীন বড়দিন উৎসব সম্পর্কে আনন্দ প্রকাশের পাশাপাশি বলা হয়েছে, “এই মাসটি বাঙালি জাতির বিজয়ের মাস” এবং যারা স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়েছে। প্রচ্ছদটি বেশ ভালো হয়েছে। সাধু যোসেফ গোপনে মারীয়াকে ত্যাগ করতে চাইলেও যিশুকে পেয়ে অনেক হাসিখুশি। পত্রিকাটি উৎসর্গ করা হয়েছে, স্বর্গীয় সিমন রোজারিও, মাগ্দালেনা রড্রিক্স, শিশিলিয়া কস্তা (ফুলি) ও পবিত্র মাহাত্ব’কে উদ্দেশ্য করে। এবারের সংখ্যার প্রথম খ্রিস্টীয় প্রবন্ধটি লিখেছেন ফা. দিলীপ এস. কস্তা, “পাপস্বীকার সংস্কার: জীবন নবায়নের আহ্বান” শিরোনামে। মণ্ডলিতে পাপস্বীকার সংস্কারের গুরুত্ব তিনি তার লেখায় গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন। যাদের মধ্যে পাপস্বীকারের প্রতি অনীহা রয়েছে- তাদের বিবেক জাগ্রত করার জন্য লেখাটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।
“বিশ্বসৃষ্টি- মানুষের দায়িত্ববোধ- কোভিড বড়দিন” শিরোনামে লিখেছেন এই প্রতিবেদক। প্রতিবেদক বলতে চেয়েছেন- সৃষ্টির প্রতি মানুষের যে অবিচার, যা হলো আজকের মহামারি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে উৎসব নয়- প্রকৃতিকে লালন-পালন করে, প্রকৃতির সঙ্গে সংলাপ করেই সমন্বিত মানব উন্নয়ন ও সভ্যতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব। ফা. সাগর কোড়াইয়া লিখেছেন, “আত্মহত্যাই কি সব সমস্যার সমাধা ”? শিরোনামে। ফাঁসির দড়ি যখন গলায় আটকে যায় তখন আত্মহননকারি একবারের জন্য হলেও ভাবে, “জীবন কি সুন্দর ও আনন্দময়”। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। একজনের আত্মহননের কারণে পরিবারে এবং সমাজে হাজারটা সমস্যা তৈরি হয়। শ্যামল এইচ কস্তা লিখেছেন, “রূপান্তরে মোটিভেশন” নামে একটি শিক্ষণীয় প্রবন্ধ। ইংরেজি মোটিভেশনের বাংলা অর্থ হলো উদ্বুদ্ধ বা প্রণোদিত হওয়া। সুস্থ মোটিভেশনের মধ্যদিয়ে মানুষ অর্জন ও উচ্চতায় আরোহণ করতে পারে। “ Covid-19 এর প্রভাব” নিয়ে লিখেছেন হিউবার্ট রোজারিও। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে বিশ্বের ক্ষতি অপূরণীয়। তবে সবচেয়ে ক্ষতি বহন করছে শিক্ষাখাত। এই সংখ্যায় ছোটো দু’টি গল্প স্থান পেয়েছে- “হাত বদল” লিখেছেন, ডা. আগষ্টিন ডি. কস্তা এবং “রাজুদের দুঃখ-সুখের পরিবার” নিয়ে লিখেছেন পাপিয়া রোজারিও। শেষদিকে কবিতা গুচ্ছতে বেশকিছু কবিতা স্থান পেয়েছে। কবিতাগুলো বেশ উচুমানের দাবি রাখে।
উপসংহার : একটি একক গ্রামের পত্রিকা হিসেবে “শিকড়” প্রশংসার দাবি করতে পারে। জোনাইল বাজারের সাহা প্রেস থেকে মুদ্রিত হলেও লেখা ঝকঝকে ও বিজ্ঞাপনের ছবিগুলো সুন্দর হয়েছে। বানানের দিকে যথেষ্ঠ নজর দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় লেখকদের উৎসাহিত করতে হবে- যেনো লেখক তৈরি হয়। পত্রিকার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শুভেচ্ছা।