ফাদার সুনীল রোজারিও। বরেন্দ্রদূত প্রতিবেদক
ভূমিকা: প্রতিবারের মতো ২০২১ খ্রিস্টাব্দে রাজশাহী ডাইয়োসিসের বিভিন্ন ধর্মপল্লী, সংগঠন এবং গ্রাম থেকে বড়দিন উপলক্ষে সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। কিছু সাময়িকী ইতিমধ্যেই বরেন্দ্রদূত দপ্তরে এসে পৌঁছেছে। এবারই সম্ভবত প্রথম খ্রিস্টজ্যোতি মিডিয়া সেন্টার এসব সাময়িকী নিয়ে পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নিয়েছে। আজকে এই পর্যালোচনার ৭ম পর্ব তুলে ধরা হলো।
বড়দিন সংখ্যা “শুকতারা” প্রকাশিত হয়েছে, নিত্য সাহায্যকারিনী মা-মারীয়া’র ধর্মপল্লী, আন্ধারকোঠা, হরিপুর, পবা, রাজশাহী থেকে। পত্রিকার প্রচ্ছদ সম্ভবত: ছাপার কারণে ততো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। তবে প্রচ্ছদের নিচের দিকে ধর্মপল্লীর প্রাচীন বাড়িঘরের সাদাকালো ছবি স্মরণ করে দেয় অনেক ঐতিহ্য-ইতিহাস। বর্তমান রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ধর্মপল্লী হলো আন্ধারকোঠা। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে এই ধর্মপল্লীটি গড়ে উঠেছিলো এবং তখন এই ধর্মপল্লী থেকে বর্তমান রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় পালকীয় কাজ পরিচালিত হতো।
শুকতারা পত্রিকাটি উৎসর্গ করা হয়েছে স্বর্গীয় পাল-পুরোহিত শহিদ ফাদার আঞ্জেলো মাজ্জনী’র করকমলে। ইটালিয়ান মিশনারি ফা. মাজ্জনী ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৪ আগস্ট তাঁর বাসভবনে আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। এবছর পালিত হচ্ছে শহিদ ফাদারের ৫০ বছরের মৃত্যু বার্ষিকী। তাঁর আত্মার কল্যাণ কামনা করি।
পত্রিকার প্রথম প্রবন্ধটি লিখেছেন, পাল-পুরোহিত প্রেমু টি. রোজারিও, “যীশুর জন্মদিন ঐশ্ব মাতৃত্বের প্রকাশ” শিরোনামে। মুক্তির ইতিহাসে মা মারীয়ার অবদান লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে। মা মারীয়া শুধু যিশুখ্রিস্টের মাতা: নন, তিনি বিশ্বজননী- আমাদের সবার মাতা। ফাদার লুইস সুশীল লিখেছেন, “ছেলেমেয়েদের সাধু যোসেফের পরিবারের শিশু যীশুর কাছে শিক্ষা” নাম দিয়ে। ক্যাথলিক চার্চে আমরা সাধু যোসেফ বর্ষ পালন করছি। সেই হিসেবে, সাধু যোসেফের পবিত্র পরিবারে শিশুযিশু কীভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন- তা আজকের দিনে আমাদের সন্তানদের জন্য একটি আদর্শ শিক্ষা। ফাদার দিলীপ এস. কস্তা লিখেছেন “মিলনধর্মী খ্রীষ্টমণ্ডলী ও সিনড্” নিয়ে। আগামী বছর রোম নগরীতে ক্যাথলিক বিশপদের ধর্মসভা (সিনড) অনুষ্ঠিত হবে। এই ধর্মসভা সামনে রেখে গোটা বিশ্বের ক্যাথলিক চার্চে আলোচনা, সেমিনার ও কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজশাহী ডাইয়োসিসেও বিষয়টি এখন সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়। তাই বলা যায় বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। পাঠকগণ লেখাটি পাঠ করে উপকৃত হবেন।
“শীতমাঝে এলো বড়দিন” জনপ্রিয় এই গানের কলি দিয়ে সাজিয়েছেন ফাদার সাগর কোড়াইয়া। বড়দিন ঘিরে কতোকিছু করা হয়- যা অনেকের জন্য অজানা। এইসব অজানাকে জানতে হলে, লেখাটি পড়ার গুরুত্ব রয়েছে। ফাদার উত্তম রোজারিও লিখেছেন, “ঈশ্বরের সেবক দীক্ষাগুরু সাধু যোহনের গুণাবলী” নিয়ে। দীক্ষাগুরু যোহন শুধু কী যিশুর আগমন বার্তা প্রচার করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন ? ফাদার রোজরিও তার লেখায় দীক্ষাগুরু সাধু যোহনের ১০টি গুণাবলী উল্লেখ করেছেন। “মারীয়া: প্রাক্তন ও নবসন্ধির মিলনসেতু” প্রসঙ্গে লিখেছেন, ফা. যোহন মিন্টু রায়। মা মারীয়াকে নিয়ে বাইবেলের আলোকে, সেই সঙ্গে ক্যাথলিক চার্চে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে ফাদার রায় বহু অজানা তথ্য তুলে ধরেছেন। ফাদার অনিল ইগ্নেসিউস মারান্ডী, “সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বড়দিন উৎসব উদযাপন” নিয়ে লিখেছেন। সাঁওতাল খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী কীভাবে তাদের বড়দিন উৎসব পালন করেন, সেই বিষয়টি ফাদার তার লেখায় আলোকপাত করেছেন। লেখাটি, বিশেষ করে বাঙালি খ্রিস্টানদের জন্য শিক্ষণীয়। আদিবাসীদের অনেক ধর্মীয় কৃষ্টি আজকে নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে লেখালেখি হলো কৃষ্টি রক্ষা করার প্রধান উপায়। এই ব্যাপারে আদিবাসীদের বেশি করে এগিয়ে আসতে হবে। এই কৃষ্টি রক্ষা নিয়ে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশে পালকীয় কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপসংহার : আন্ধারকোঠা ধর্মপল্লী থেকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শুকতারা প্রকাশিত হলো। পত্রিকাজুড়ে নীল রং ব্যবহার না করলেই ভালো হতো। পত্রিকায় কালোর কোনো বিকল্প নেই। বিজ্ঞাপনের ছবিগুলো তেমন ফুটে ওঠেনি। শব্দ বিন্যাসে বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বানান অনুসরণ করা উচিৎ বলে মনে করি। অন্যথায় বানান ভুল বলে ধরে নিতে হবে।
রাজশাহী ডাইয়োসিসের- মধ্য ও উত্তর ভিকারিয়া থেকে আর কোনো বড়দিন সংখ্যা আমাদের মিডিয়া সেন্টারে এসে পৌঁছায়নি। সম্ভবত: এই দু’টি ভিকারিয়ার আর কোনো ধর্মপল্লী থেকে বড়দিন উপলক্ষে কোনো সাময়িকী প্রকাশিত হয়নি। আদিবাসী খ্রিস্টান অধ্যুষিত এই ধর্মপল্লীগুলো থেকে বড়দিন সাময়িকী বের হলে আদিবাসীদের অনেক কৃষ্টি ওঠে আসতো। ধর্মপল্লীর ফাদার ও জনগণকে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো। আশা করি, আগামীতে ধর্মপল্লীগুলো এই উদ্যোগ নিবে। পত্রিকার লেখক ও পাঠকদের শুভেচ্ছা।