ফাদার দিলীপ এস. কস্তা

০১. জীবন ঈশ্বরের দেয়া উপহার

জীবন ঈশ্বরের দেয়া সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার এবং তা সাজিয়ে তুলতে আমরা প্রত্যেকেই আহুত। কেননা ঈশ্বর মানুষকে স্বাধীনভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং ভাল-মন্দ বেছে নেবার মতো বুদ্ধি বিবেচনা দান করেছেন। পবিত্র বাইবেল ও জুবিলী বাইলের ঐশতাত্ত্বিক শব্দকোষে বলা হয়েছে, “জীবন ঈশ্বরের দান: কেবল তিনি জীবনের প্রভু। জীবনের পূর্ণতা হলো সেই অনন্ত জীবন। বিশ্বাসের জীবন যিশুতে নিহিত: তেমন জীবন পবিত্রতা দাবি করে, আত্মায় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন যাপন করাও দাবি করে (আদি ২:৭; ৯:৪; সাম ১০৪:২৯; যোহন ১০:১০; রোমীয় ৮:১; ফিলিপীয় ১:২১; কল ৩:৩)”।

সাধু পল  খ্রিস্টিয় জীবনকে সাজিয়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন ‘দয়া-মায়া, ভালবাসা- ক্ষমা, কমলতা, প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা’র আবরণে (দ্রষ্টব্য: কলসীয় ১২:৩- ১৭) । তাই দীক্ষিত মানুষ মাত্রই জীবনকে ঈশ্বরের হাতে সঁপে দেওয়া ও তাঁর ইচ্ছা অনুসারে জীবন পরিচালনা করার জন্য আহুত। ঈশ্বর বিশ্বাসী মানুষ মাত্রই নিজেকে জীবন স্রষ্টার নিকট  সঁপে দেয় জীবনের পূর্ণতা আনার লক্ষে। রাত্রিকালীন প্রার্থনায় বলা হয়, “প্রভু, তোমার হাতে আমার প্রাণ সমর্পণ করি”।

০২. ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নিবেদিত জীবন

ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে জীবন নিবেদন করার প্রথা ও প্রচলন আদি যুগ থেকেই। কিছু  কিছু  নর-নারী সম্পূর্ণভাবে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন ঈশ্বরের হাতে। নিবেদিত বা উৎসর্গকৃত কিছু  সংখ্যক নারী রয়েছে পুরাতন নিয়মে: তারা হলেন-

) প্রাক্তন সন্ধিতে

পুরাতন নিয়মে  বিভিন্ন পরিস্থিতে নারীদের ভূমিক। “হবা: জীবিতদের মতো (দ্র: আদিপুস্তুক ১-৩)। সারা ও আগার: নিরাশা থেকে আশার দিকে (দ্র: আদিপুস্তুক ১৬-১৮)। তামার: পরিত্রাণের ইতিহাসে অংশগ্রহণকারিণী (আদিপুস্তুক ৩৮)। সাহসী ধাত্রী শিফ্রা ও পূয়া (দ্র: যাত্রাপুস্তুক ১)। মিরিয়াম: স্বাধীনতার পথে নেত্রী (দ্র: যাত্রাপুস্তুক ১২)। দেবরা: তাঁর জাতির জন্য সংগ্রামী (দ্র: বিচারকচরিত্র ৪-৫)। আন্না: পারস্পরিক বিশ্বস্ততা (দ্র: সামুয়েল ১৪)। আবিগাইল: সুন্দরী, ভাল ও স্পষ্টবাদী (দ্র: ১ সামুয়েল ২৫)। তেকুয়ার বুদ্ধিমতী নারী (দ্র: ২ সামুয়েল ১৪)। হুলদা: “যাকে সেবা করতে চাও- তোমরা ঠিক কর!” (দ্র: ২ রাজাবলি ২২)। রুথ: পুরুষের পরিবেশ নারী দ্বারা পরিবর্তন। যোবের স্ত্রী: রাগী, নির্বোধ, তিত্ত”।

) নবসন্ধিতে

যিশু তাঁর পালকীয় কাজের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নারীদের সান্নিধ্যে আসেন এবং সহায়তা দেন। “কানা নগরে মারীয়া (দ্র: যোহন ২:১-১২)। কূপের পাশে  এক নারী (দ্র: যোহন ৪:১-৩১)। মার্থা ও মারীয়া (দ্র: লুক ১০:৩৮-৪২)। ব্যাভিচারিণী নারী (দ্র: যোহন ৮:১-১১)। সিরিয়া নিবাসী নারী (দ্র: মার্ক ৭:২৪-৩০; মথি ১৫:২১-২৮)। যাইরুসের কন্যা (দ্র: মার্ক ৫:২১-২৪,৩৫-৪৫)। রক্তস্রাবে অসুস্থ নারী (দ্র: লুক ৮:৪৩-৪৮; মার্ক ৫:২৪-৩৪; ২ তিমথি ২:৯-১৫; ১ করিন্থীয় ১৪: ২৮-৪০)। বেথানীর নারী (দ্র: মার্ক ১৪:৩-৯)”।

০৩. মহিলাদের সেবাদায়িত্ব

পবিত্র বাইবেলের নতুন নিয়মে যিশুর অনুসারীদের মধ্য অনেকেই ছিলেন মহিলা (লুক ৮৫: ১-১৩)। তারা বিভিন্ন সময়ের মণ্ডলীর পালকীয় কাজে সহায়তা দিয়েছেন। “পরে তারা মঙ্গলবাণী প্রচার ও প্রাবক্তিক বাণী ঘোষণায় অংশগ্রহণ করেন (রোম ১৬:১-৩; ফিলিপীয় ৩:২-৩; ১ করিন্থিয় ১১:৪-৫; শিষ্যচরিত  ২১:৯), কিন্তু পুরুষদের সেবাকার্যগুলোর সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য খুঁজে বের করা শক্ত।

ভক্তমণ্ডলীর সভায় মহিলাদের সক্রিয় ভূমিকার ব্যাপারে আপত্তি ও অনিচ্ছা সবিশেষ লক্ষণীয় (১ করিন্থিয় ১৪:৩৪-৩৫; ১ তিমথি ২: ১১-১৮)। বিভিন্ন ভক্তমণ্ডলীতে বিধবা সংঘের উৎপত্তি হয় ( ১  তিমথি ৫: ৩-১৬)। এরা প্রার্থনা ও মহিলাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সেবাকাজ, যেমন রোগীদের পরিদর্শন করার কাজে ব্যপৃত থাকেন। তৃতীয় শতাব্দীতে সিরিয়ার ‘পরিসেবিকাদের’ অস্তিত্বের বেশ স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়। এরা মহিলাদের  সেবাকাজে পরিসেবকদের সমকক্ষ ছিলেন এবং তাদের উপর হস্তস্থাপন করা হত। সমাজে ‘কুমারীগণ’ প্রায় একটি স্বতস্ত্র গোষ্ঠী বা দল তৈরী করতেন” (উৎস: মণ্ডলীর ইতিহাস পরিচিতি, পৃষ্ঠা, ৫৯-৬০)।

) আদি মণ্ডলীতে নিবেদিত নারী

নির্যাতনের যুগে (৬৪- ৩১২) অনেক সাহসী নারী মণ্ডলীর বিভিন্ন সেবা কাজে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রোমের দমিতিল্লা ছিলেন  একজন ধনী ব্যক্তি। তিনি খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন তার সমস্ত সম্পত্তি মণ্ডলীকে দান করেছিলেন যা বর্তমানে দমিতিল্লর করবস্থান নামে পরিচিত। নির্যাতনের  যুগে আরো কয়েকজন সাহসী ও নিবেদিত মহিলা পাওয়া যায় যারা যিশুর প্রেমে জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁরা হলেন: সাধ্বী পের্পেতুয়া ফেলেসিতা (মৃত্যু ২৩৩), সাধ্বী সিসিলিয়া (৩০০), সাধ্বী আগাথা (২৫১), সাধ্বী আগ্নেস (৩০৮), সাধ্বী বারবারা (৩০৪), সাধ্বী ফিলোমিনা প্রমুখ।

) সাধু পলের পালকীয় কাজে নারী

সাধু পলের প্রচার কাজে নিবেদিত নারীগণ হলেন লিদিয়া (শিষ্য:১৬:১৪-১৫) যিনি ধনী কাপড় ব্যবসায়ী ছিলেন। দীক্ষাগ্রহণ করে তিনি সাধু পলের প্রচার কাজের সঙ্গী হন এবং বাড়ীতে আশ্রয় দেন। প্রিস্কা ও আকুইলা দু’জন সহকর্মী (রোমীয় ১৬:৩৪) হিসেবে সহায়তা দেন। সাধু পল নারীদেরকে তার কাজে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন (দ্র: রোমীয় ১৬:১২,১৩)। এছাড়া পারিবারিক জীবন, নর-নারীর মর্যাদা, স্বামী-স্ত্রী দায়িত্ব কর্তব্যের বিষয়ে শিক্ষা দেন (কলসীয় ৫:২১-৩২, ১ম করিস্থীয় ৭) ।

০৪. সন্ন্যাস জীবন সাধনায় নিবেদিত নারী

সন্ন্যাস জীবনের শুরু থেকেই কয়েকজন নারী নিবেদিত হয়ে নারীদের জন্য সন্ন্যাস জীবন প্রথা প্রচলন করেন। তারা পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্য সন্ন্যাস জীবন ব্যবস্থা করেন।

* মিশরের সাধু আন্তনী (৩৫১-৩৫৬) মরুবাসীদের পিতা নামে পরিচিত।  তিনি কঠোর ত্যাগ ও কৃচ্ছতা জীবন বেঁছে নেন এবং ধ্যান সাধনার জীবন যাপন করেন। তিনি তার বোনের জন্য সহায় সম্পত্তি আলাদা করে দেন এবং তার বোনও সন্ন্যাসীদের মতোই ত্যাগের জীবন বেঁছে নেন।

* সাধু জেরম (৩৪৭-৪১৯) একজন পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সন্ন্যাস সুলভ ধারায় জীবন যাপন করতেন এবং গোটা বাইবেল ল্যাতিন ভাষায়  অনুবাদ করেন। পাওলা নামে বান্ধবী ছিল যাকে তিনি সন্ন্যাস সুলভ জীবন যাপন করতে সহায়তা দেন।

* রোমের ধনী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন সাধু বেনেডিক্ট (৪৮০-৫৪৭)। তার জমজ ছোট বোনের  সাধ্বী স্কলাস্টিকা। সাধু বেনেডিক্ট ও সাধ্বী স্কলাস্টিকা সন্ন্যাসী হিসেবে পাশা-পাশি আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন। সাধু বেনেডিক্টক পশ্চিমা সন্ন্যাসীদের পিতা এবং ইউরোপের প্রতিপালক হিসেবে পরিচিত।

* ইতালির আসিসি নগরের ধনী পরিবারের সন্তান হলেন সাধু ফ্রান্সিস (১১৮১-১২২৬)। তার জীবন সাধনায় খ্রিস্টের দারিদ্রতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। আসিসি নগরের ধনী পরিবারের ক্লারা ( ১১৯০-১২৫৩) তার সহযাত্রী হয়ে উঠেন এবং দরিদ্রতার ও ত্যাগের জীবন বেঁছে নেন এবং আজীবন সামান্তরাল সম্পর্ক রেখে জীবন যাপন করেন।

০৫. নিবেদিত জীবনযাত্রা (Vita Consecrata) আদি মণ্ডলীতে

‘উৎসর্গীকৃত জীবন বা নিবেদিত জীবন’ অতি পুরাতন একটি জীবন ব্যবস্থা যা পবিত্র বাইবেল এর আদি মণ্ডলী ও সন্ন্যাস জীবন ধারার বিদ্যমান, তবে উৎসর্গীকৃত জীবন (Vita Consecrata) নামক প্রৈরিতিক পত্রের মাধ্যমে সাধু পোপ ২য় জন আরো গুরুত্ব দিয়েছেন এবং উৎসর্গীকৃত জীবনের সৌন্দর্য ও মাহিমা বৃদ্ধি করেছেন। প্রৈরিতিক পত্রটি ২৪ মার্চ, ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং বাংলা অনুবাদ প্রকাশিত হয় ১লা নভেম্বর ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দ। পত্রটির উল্লেখযোগ্য দিক।

“উৎসর্গীকৃত জীবন খ্রিস্টপ্রভুর জীবনাদর্শ ও শিক্ষার সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং পবিত্র আত্মার মাধ্যমে মণ্ডলীর নিকট পিতা পরমেশ্বরের এক প্রীতি-উপহার। মঙ্গলসমাচারীয় মন্ত্রণাত্রয় অনুযায়ী ব্রতজীবনের মাধ্যমে যিশুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য-শুচিতা, দারিদ্রতা ও বাধ্যতা-জগতের মাঝে প্রতিনিয়ত “প্রকাশ” পায় এবং বিশ্বাসীবর্গের দৃষ্টি ইতিহাসের গতিধারায় ইতিমধ্যেই বিদ্যমান এবং স্বর্গে যার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের অপেক্ষায় আছে সেই ঐশরাজ্যের রহস্যের দিকে নিবদ্ধ থাকে” (উৎস: উৎসর্গীকৃত জীবন, পৃষ্ঠা ১) ।

“প্রৈরিতিক যুগ হতে সুপরিচিত (তুলনীয় ১ তিমথী ৫: ৫, ৯-১০; ১ করিন্থিয় ৭:৮) বিধবা ও বিপত্নীকদের উৎসর্গীকৃত রেওয়াজ অদ্যাবধি বিদ্যমান। এসব নারী-পুরুষ ঐশরাজ্যের চিহ্নস্বরুপ আজীবন শুচিতাব্রত পালনের মাধ্যমে প্রার্থনায় ও মণ্ডলীর সেবাকাজে আত্মনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে তাদের জীবন উৎসর্গ করেন। নারী অথবা পুরুষদের নিয়ে গঠিত সম্পূর্ণ ধ্যানসাধনায় নিবেদিদ ধর্মসংঘগুলো মণ্ডলীর জন্য গর্বের বিষয়ে ও ঐশকৃপার উৎসস্বরুপ। তাদের জীবনযাত্রা ও প্রেরণকাজের দ্বারা এসব ধর্মসংঘের সদস্য-সদস্যাগণ পর্বতের উপরে প্রার্থনারত খ্রিস্টকে অনুকরণ করেন, ইতিহাসের প্রভুরূপে ঈশ্বরের সাক্ষ্য বহন করেন এবং ভাবী গৌরবময় জীবনের দান করেন।

নির্জন ও নীরবতায় ঈশ্বরের বাণীর প্রতি নিবিষ্টচিত্ত হয়ে, ঐশ উপাসনায় অংশগ্রহণ করে, ব্যক্তিগত তপস্যা, প্রার্থনা, প্রায়শ্চিত এবং ভ্রাতৃপ্রেমে মিলিত হয়ে তারা তাদের গোটা জীবন ও কর্মকাণ্ড ঈশ্বর-ধ্যানের দিকে পরিচালিত করেন। এভাবে তারা মাণ্ডলীক সমাজের নিকট প্রভুর প্রতি মণ্ডলীর ভালবাসার অনুপম সাক্ষ্য হয়ে ওঠেন এবং প্রচ্ছন্ন প্রৈরিতিক ফলপ্রসূতা দিয়ে ঐশজনগণের শ্রীবৃদ্ধিতে অশেষ অবদান রাখেন” (উৎস: উৎসর্গীকৃত জীবন পৃষ্ঠা: ১, ৮)

দ্বিতীয় ভাটিকান মহাসভার দলিলের ‘সন্ন্যাস জীবনের সময়োপযোগী নবায়ন বিষয়ক নির্দেশনাময় ১২ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “স্বর্গরাজ্যের কারণে সন্ন্যাব্রতীগণ যে শুচিতা ব্রত গ্রহণ করেন তাকে একটি অসাধারণ অনুগ্রহদান বলে শ্রদ্ধা করতে হবে। এটি মানুষের হৃদয়মনকে অনন্যরূপে মুক্ত করে দেয়, যার ফলে তিনি ঈশ্বর ও সকল মানুষকে অধিকার নিষ্ঠার সাথে ভালোবাসতে সক্ষম হন। শুচিতা বা কৌমার্য তাই স্বর্গীয় সম্পদের এক মহান নিদর্শন এবং সন্ন্যাসব্রতীদের জন্য ঈশ্বরে সেবায় ও প্রৈরিতিক কাজে সহজভাবে আত্মনিয়োগ করার উৎকৃষ্টতম পন্থা। সন্ন্যাসব্রতীগণ এভাবে খ্রিস্টবিশ্বাসীদের কাছে মণ্ডলী ও তাঁর একমাত্র পুত্র খ্রিস্টের মধ্যে অত্যাশ্চর্য বিবাহবন্ধনের সাক্ষ্য দান করেন”।

০৬. মিলন সাধনার আক্ষরিক অর্থ 

সাধনা ছাড়া কোন কিছুই অর্জন বা আয়ত্ব করা সম্ভব নয়। মুণি-ঋষি, সাধু-সন্ত, কবি-গবেষক, বিজ্ঞানীসহ সকলকেই লক্ষ্যে পৌছাঁনোর জন্য সাধনার পথ বেছে নিতে হয়। সাধনা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো একই কাজ বার বার করার প্রচেষ্টা করা এবং তা অভ্যাসে পরিণত। আধ্যাত্মিক অর্থে সাধনা হলো আরাধনা করা মিনতি জানানো, ব্রত নেওয়া এবং সিদ্ধি লাভ করা।

ফাদার সুনীল ডানিয়েল রোজারিও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপের পালকীয় পত্র ২০২৪ এর একটি পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন: “সাধনা হলো একটি অনুশীলন। নিজের মধ্যে লক্ষ্যটা পুরো মাত্রায় অন্তর্ভুক্ত করা। মিলন সাধনা যখন নিজের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়- তখন তাঁর মধ্যে আবেদন জেগে ওঠে, অন্যকে তার অন্তরে স্থান দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা। যেমন ঈশ্বর মানুষকে সমানভাবে ভালোবেসে পারস্পরিক সহায়তায় জীবন যাপন ও সৃষ্টির মধ্যে সর্বজনীন মিলন গড়ে তোলেন”।

ইংরেজী Solidarity শব্দটির মধ্য দিয়ে একতা, মিলন, ভ্রাতৃত্ব ও সহভাগিতার অর্থ প্রকাশ করে। খ্রিস্টমণ্ডলীতে বিশ্বাসী হিসেবে আমরা সর্বজনীন মণ্ডলীর সদস্য এবং বিশ্বাসের গুণে আমরা প্রত্যেকে পুণ্যপিতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করি। ফাদার সুনীল ডানিয়েল রোজারিও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপের পালকীয় পত্র ২০২৪ এর পর্যালোচনায় আরো উল্লেখ  করেন: “সংহতি” হলো- অন্যের সঙ্গে এক হয়ে যাওয়া, একাত্ম হয়ে যাওয়া, মিশে যাওয়া ও অন্যের মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়া।

এই একাত্ম হওয়া মানে প্রতিবেশীকে নিজের অন্তরে ধারণ করে প্রাত্যহিক জীবনে সুখ-দুঃখ, আনন্দ-উৎসবের সহযাত্রী হয়ে মিলন-ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা। আবার এই মিলনের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে বসবাস করতে হয়। ঈশ্বরবিহীন মানুষ যেমন দিক ভ্রষ্ট হয়, তেমনি প্রতিবেশীর প্রতি ভালোবাসাবিহীন মানুষ ঈশ্বরের ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়। মনে রাখতে হবে- ঈশ্বরকে লাভ করতে হলে আগে মানুষকে লাভ করতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, মানুষের মধ্যদিয়েই ঈশ্বরের কাছে গিয়ে পৌঁছে। সৃষ্টিকে ভালো না বেসে, স্রষ্টাকে ভালোবাসা যায় না’।

(চলমান)

Please follow and like us: