লর্ড রোজারিও
শৈশব ও পারিবারিক পটভূমি
রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট জন্মগ্রহণ করেন ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে। তার পিতা লুইস মারিয়াস প্রেভোস্ট ছিলেন ফরাসি ও ইতালীয় বংশোদ্ভূত এবং মাতা মিলড্রেড মার্টিনেজ ছিলেন স্প্যানিশ ভাষাভাষী। এমন এক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা, যেখানে বহু সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের সংমিশ্রণ ঘটেছিল। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। শৈশব থেকেই তার মধ্যে ছিল বিনয়, জ্ঞানের প্রতি আগ্রহ এবং এক গভীর আধ্যাত্মিকতা।
শিক্ষা ও ব্রতীয় জীবন
অগস্টিনিয়ান সম্প্রদায়ে প্রবেশের মধ্য দিয়ে রবার্ট ফ্রান্সিসের ব্রতীয় জীবনের যাত্রা শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ভিলানোভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি লাভের পর তিনি রোমে যান উচ্চতর ধর্মতত্ত্ব ও মাণ্ডলিক আইন অধ্যয়নের জন্য। সেখানে তিনি পন্টিফিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
যাজকীয় অভিষেক ও মিশনারী কর্মজীবন
১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে রবার্ট ফ্রান্সিস প্রেভোস্ট আগস্টিনিয়ান সম্প্রদায়ের পুরোহিত অভিষিক্ত হন। এরপর তাকে পাঠানো হয় দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে। সেখানে তিনি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের মাঝে চিকলায়ো অঞ্চলে খ্রিস্টের বার্তা ছড়িয়ে দেন। তার মিশনারী কাজ ছিল কেবল ধর্মপ্রচার নয় বরং শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও সেবা। ২০০৪ খ্রিস্টাব্দে পোপের অনুমোদনে তাকে চিকলায়োর বিশপ নিযুক্ত করা হয় এবং ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেই অঞ্চলটির অ্যাপোস্টলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিযুক্ত হন।
কার্ডিনাল নিযুক্ত
২০২৩ খ্রিস্টাব্দে পোপ ফ্রান্সিস বিশপ রবার্ট ফ্রান্সিসকে কার্ডিনাল নিযুক্ত করে রোমে আনেন এবং বিশ্বব্যাপী নতুন বিশপ নিয়োগ দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব প্রদান করেন।
পোপ নির্বাচিত হওয়া
২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর ৮ মে কার্ডিনালদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কার্ডিনাল রবার্ট ফ্রান্সিসকে প্রেভোস্টকে পোপ নির্বাচিত করেন। তিনি পোপীয় নাম গ্রহণ করেন চতুর্দশ লিও। পোপ চতুর্দশ লিও প্রথম মার্কিন নাগরিক ও ইংরেজি ভাষাভাষী; যুক্তরাষ্ট্র ও পেরুর দ্বৈত নাগরিক হিসাবে পোপ নির্বাচিত হন। এছাড়াও আগস্টিনিয়ান সম্প্রদায় থেকেও প্রথম পোপ হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি ইংরেজি, স্প্যানিশ এবং ইতালিয়ান ভাষায় দক্ষ।
পোপ হবার পর পোপ চতুর্দশ লিও তার বক্তব্যে শান্তি-সংলাপের সংস্কৃতি গড়ে তোলা, প্রান্তিক মানুষের ন্যায্যতা, অধিকার রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, অভিবাসী ও শরণার্থীদের প্রতি সদয় দৃষ্টিপাতের ওপর জোরারোপ করেন। বিশপ এবং কার্ডিনাল থাকা অবস্থায় পোপ চতুর্দশ লিও মণ্ডলীর অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও তাত্ত্বিক বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে রক্ষণশীল অবস্থানে থেকেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি সমলিঙ্গ পরিবার কাঠামোকে সমর্থন করেননি, যা তার বিশ্বাসগত অবস্থানের প্রতিফলন।
পোপ চতুর্দশ লিও শুধু একজন ব্যক্তি নন বরং তিনি একটি যুগের প্রেরণা। বিশ্ব যখন বিভক্তির মুখোমুখি, তখন তিনি একতা, ন্যায়, ও বিশ্বাসের পথে আলো ছড়াতে এসেছেন। পোপের নেতৃত্বে কাথলিক মণ্ডলী আবারও খুঁজে পাবে সেই নবজীবনের পথ, যা প্রেরিতশিষ্যগণ রেখে গিয়েছিলেন।