প্রিয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বন্ধুরা,
বিগত বছরগুলোর ন্যায় বৌদ্ধ পূর্ণিমার আনন্দময় উৎসবে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। বুদ্ধের জন্ম, জ্ঞানার্জন এবং পরলোকগমনকে স্মরণ করে এই পবিত্র উৎসবটি আপনাদের জন্য গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য বহন করে। এই বছর আপনাদের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা প্রভু যিশুর জন্মজয়ন্তীর চেতনা দ্বারা আরও সমৃদ্ধ, যা আমাদের কাথলিকদের জন্য অনুগ্রহ, পুনর্মিলন এবং আধ্যাত্মিক পুনর্নবীকরণের সময়।
সংলাপে অংশগ্রহণকারী হিসাবে আমরা নস্ট্রা আতেতে (Nostra Aetate) চেতনায় আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই প্রৈরিতিক পত্রের আলোকে অন্য ধর্মের সাথে মণ্ডলীর সম্পর্কের ওপর দ্বিতীয় ভ্যাটিকান মহাসভার যুগান্তকারী ঘোষণার ষাটতম বার্ষিকী আমরা এই বছর উদযাপন করছি। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে নস্ট্রা আতেতে (Nostra Aetate) ঘোষণার পর থেকে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। এই পত্রের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আবারও নিশ্চিত করছি যে “কাথলিক মণ্ডলী অন্যান্য ধর্মের সত্য এবং পবিত্র কোন কিছুকেই প্রত্যাখ্যান করে না” এবং “জীবনযাত্রা, আচরণ, নীতি এবং মতবাদের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। কাথলিক মণ্ডলী নিজস্ব শিক্ষায় অনেক দিক থেকে ভিন্ন হলেও ধর্মীয় সত্যের আলোকরশ্মি দ্বারা সবাইকে আলোকিত করে” (নোস্ট্রা আতেতে, ২)।
নস্ট্রা আতেতে আপনাদের নিজস্ব ঐতিহ্যের বিষয়ে ইতিবাচক স্বীকৃতি প্রদানের মধ্য দিয়ে সংলাপের প্রতি আমাদের অঙ্গীকার আরও নিশ্চিত করে এবং বৌদ্ধধর্ম যে পরিবর্তনশীল বিশ্বে বিভিন্ন রূপে এই অপরিহার্য সাক্ষ্য দেয় তা প্রকশ করে। এটি এমন একটি জীবনযাত্রার কথা বলে যার মাধ্যমে মানুষ আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বাসের সাথে পরিপূর্ণ মুক্তি অর্জন করতে পারে এবং নিজস্ব প্রচেষ্টা অথবা ঐশ্বরিক সাহায্যে আলোকিত হতে পারে” (নোস্ট্রা আতেতে, ২)। বৌদ্ধিক পথ অন্তর্দৃষ্টি, নীতিগত আচরণ এবং মানসিক শৃঙ্খলার মাধ্যমে অজ্ঞতা, আকাঙ্ক্ষা এবং কষ্টকে অতিক্রম করে থাকে। জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের চক্র থেকে বের হয়ে চূড়ান্ত মুক্তি ও নির্বাণের যাত্রায় প্রজ্ঞা এবং করুণার শক্তিকে তুলে ধরে।
সত্য এবং জীবনের পূর্ণতার যৌথ সাধনা আমাদের নিজ নিজ ঐতিহ্যের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বুদ্ধ শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, “যিনি তৃষ্ণা এবং আসক্তি থেকে মুক্ত, তিনি শিক্ষার প্রকৃত অর্থ উন্মোচন এবং পবিত্র গ্রন্থের সঠিক ব্যাখা জানেন; আর তিনি প্রকৃতপক্ষে তার দেহের নিয়ন্ত্রণকারী ও তাকে প্রকৃতপক্ষে গভীর জ্ঞানী ও মহাপুরুষ বলা হয়” (ধম্মপদ, অধ্যায় ২৪, শ্লোক ৩৫২)। যিশু বলেন, সত্যের জ্ঞান মুক্তিদানকারী: “তোমরা সত্যকে জানবে এবং সত্য তোমাদের স্বাধীন করবে” (যোহন ৮:৩২)।
বর্তমান সময় বিভাজন, দ্বন্দ্ব এবং দুঃখকষ্টে আবৃত্ত। তাই মুক্তিদানকারী সংলাপের প্রয়োজনীয়তা আমরা স্বীকার করি, যা কেবলমাত্র কথায় সীমাবদ্ধ নয় বরং সকলের জন্য শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মর্যাদার জন্য সেই কথাগুলোকে বাস্তবকর্মে রূপান্তর করতে হয়।
“নস্ট্রা আতেতে” পত্রে যেমনটি বলা হয়েছে, আজকের পৃথিবীও অবিচার, দ্বন্দ্ব এবং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় ভারাক্রান্ত। তবুও আমরা “মানব অস্তিত্বের অমীমাংসিত ধাঁধার” অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া বিষয়ে ধর্মগুলোর গভীর ক্ষমতা সম্পর্কে জানি (নস্ট্রা আতেতে, ১)। সংলাপ ধর্মীয় ঐতিহ্যের ভাণ্ডারগুলোকে যোগাযোগ, চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং জ্ঞানকে কাজে লাগানোর একটি উপায় হিসেবে কাজ করে।
“নস্ট্রা আতাতে”র ভ্রাতৃত্ব এবং খাঁটি সংলাপের বিষয়ে শিক্ষা সকল মানুষ এবং জাতির মধ্যে ঐক্য এবং ভালোবাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলে। এই পত্র আমাদের গঠন, পার্থক্য উপলব্ধি এবং বিভিন্ন ঐতিহ্য থেকে পারস্পরিক সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
এই চেতনা আরও গভীর হয় যখন আমরা জীবনের জন্য পারস্পরিক সহযোগিতা, পদ্ধতি এবং পারস্পরিক বুঝাপড়াসহ এগিয়ে যাওয়ার পথ হিসাবে সংলাপের সংস্কৃতিকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করি (বিশ্ব শান্তি এবং একসাথে বসবাসের জন্য মানব ভ্রাতৃত্বের ওপর দলিল, আবুধাবি, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৯)।
এই প্রার্থনাপূর্ণ অনুধ্যানের মাধ্যমে আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি যে, সংলাপ বর্তমান সময়ের চ্যালেঞ্জ বুঝতে ও মোকাবেলা করতে সহায়ক। আমরা আপনাদের আশির্বাদপূর্ণ ও ফলপ্রসু ভেসাক উৎসবের শুভেচ্ছা জানাই।
ভ্যাটিকান থেকে, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
জর্জ যাকোব কার্ড কোভাকাড মন্সিনিয়র ইন্দুনীল জানাকারাত্নে কোদিথুওয়াকু কানকানামালাগি
পরিচালক সেক্রেটারি