আগষ্টিন রোজারিও

খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীত হলো পবিত্র খ্রিস্টযাগের প্রাণ। উপাসনা সঙ্গীত হলো খ্রিস্টযাগের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধু আগষ্টিন বলেছেন- ‘যে ভাল গান করে, সে দু’বার প্রার্থনা করে’। তাই আমরা যেন খ্রিস্টযাগে ভক্তি, বিশ্বাস, আধ্যাত্মিকতাপূর্ণ মনোযোগ সহকারে উপাসনা সংগীতগুলো পরিবেশন করি। প্রতি ধর্মপল্লীতে একটি গানের দল থাকে। গানের দল ভাল করলে উপাসনা হয়ে উঠে অর্থপূর্ণ, প্রাণবন্ত ও প্রাঞ্জল। খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীত খ্রিস্টযাগে প্রাণ সঞ্চার করে। খ্রিস্টিয় সংগীতের ব্যাপারে পূর্ব-প্রস্তুতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খ্রিস্টযাগে গানের দলের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ যথার্থ হওয়া আবশ্যক। সেই জন্য পূর্ব প্রস্তুতির বিকল্প নেই। গানের দলের অবস্থান বা বসার জায়গা এমন জায়গায় হতে হবে যেখান থেকে বেদী ও যাজককে দেখা যায়, এমনকি সহজে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়। আগেই বলেছি, খ্রিস্টীয় সংগীত উপাসনার প্রাণ। গান ভাল না হলে উপাসনা বিঘ্নিত হয়।

রবিবাসরীয় উপাসনায় নির্দিষ্ট মূলভাব থাকে এবং তার সঙ্গে মিলিয়ে খ্রিস্টিয় সঙ্গীত বাছাই করা আবশ্যক। এ ব্যাপারে ‘উপদেশ সহায়ক’ উপাসনা পুস্তকের সাহায্য নেয়া যেতে পারে। তাছাড়া গীতাবলীতে গানের শ্রেণিবিন্যাস আছে। প্রবেশ গীতিকা কিংবা কম্যূনিয়ন গান সুন্দরভাবে দেওয়া আছে। গীতাবলী আমাদের অন্যতম সম্পদ ও উপাসনা সহায়ক গীতাঙ্ক। অনেক সময় দেখা যায় গান বাছাইয়ের ব্যাপারে, গানের দলের পরিচালকগণ যথাযথ দিকনির্দেশনা মানছেন না। নিজেদের পছন্দমত গান গাওয়া হচ্ছে। এতে কোন্ গান কখন গাওয়া হবে এই বিষয়গুলো তালগোল পাকিয়ে ফেলা হচ্ছে। প্রবেশ গীতিকায় গাওয়া হচ্ছে কম্যূনিয়ন গান। আবার উৎসর্গে গাওয়া হচ্ছে প্রবেশ গীতিকা। রবিবাসরীয় উপাসনায় নির্দিষ্ট দিনের মূলভাবকে কেন্দ্র করে খ্রিস্টযাগের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে মিলিয়ে যথাযথ প্রাসঙ্গিক গান গাওয়া শ্রেয়।

ছোটবেলায় দেখতাম বাড়িতে বাবা দোতারা বাজিয়ে গান গাইতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাড়িতে গানের আসর বসত আর পাড়ার মুসলমান ও খ্রিস্টান লোকজন এসে গান শুনতো। এই পরিবেশে বড় হতে হতে কখন যে গানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গেলাম বুঝতেই পারিনি। বাবা দোতারা বাজিয়ে গান গাইতেন আর আমি খুব লক্ষ্য করতাম। এভাবে দেখে দেখেই আমি দোতারা বাজনা শিখে গেলাম এবং বিভিন্ন জায়গায় মঞ্চে গান গাইতাম। যখন আমি গান গাইতাম, তখন দোতারা আমার চেয়ে বড় ছিল। আমি গান গেয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক পুরষ্কার অর্জন করেছি।

আমি যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে হস্তার্পন অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ঈশ্বরের সেবক আর্চবিশপ অমল থিয়োটনিয়াস গাঙ্গুলী আসেন। ঐদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমি দোতারা বাজিয়ে গান গেয়েছিলাম। দোতারাটা আমার চেয়ে বড় হওয়ায় আমি নাগাল পাচ্ছিলাম না। গান শেষ হতেই সবাই প্রচুর করতালি দিতে থাকে। এমন সময় আর্চবিশপ অমল গাঙ্গুলী তার আসন থেকে উঠে এসে আমাকে স্টেজের মধ্যেই কোলে তুলে নিয়ে একটা মেডেল উপহার দিলেন। সে দিনের কথা এখনও আমার স্পষ্ট মনে আছে। তিনি আমাকে অনেক অনেক আশির্বাদ করেছিলেন। সত্যি কথা বলতে কি- সেদিন থেকে সব সময়ই ঐ ঘটনা আমার মনে দাগ কাটতো এবং গানের প্রতি আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। এভাবে চলতে থাকে দিন।

আমি বিভিন্ন জায়গায় ওস্তাদদের কাছে গান শিখেছি। প্রথমে চাটমোহর, দিনাজপুর এবং ঢাকার বনানী সেমিনারীতে ২০ দিনের ও ৪ দিনের কোর্সে দুইবার অংশগ্রহণ করি। বনানীতে আমি ফাদার ফ্রান্সিস গমেজ সীমা, লিউ জে. বাড়ৈ, দীপক বোস, যোসেফ কমল রড্রিক্স, ফাদার মারিও মিস্ত্রী, পূরবী সরকারের কাছে গানের তালিম নিই এবং বাংলাদেশের সকল ধর্মপল্লী থেকে আগত ১৯২জন খ্রিস্টভক্তের মধ্যে পরীক্ষায় ২য় স্থান পেয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলাম। ফাদার কার্লো বুজ্জি, পিমে আমাকে ঢাকা বনানীতে সংগীত কোর্সে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে খ্রিস্টযাগে গান পরিচালনা শুরু করি। ঐ থেকে শুরু হয় খ্রিস্টিয় সংগীতের সাথে আমার পথচলা। মথুরাপুর ধর্মপল্লীতে এবং নিজ গ্রামেও অধিকাংশ গানই আমার শিখানো। এ পর্যন্ত অনেক যাজকীয় অভিষেক, বড়দিন, ইস্টার ও বিভিন্ন পর্বানুষ্ঠানে গান পরিচালনা করেছি। বোর্ণী, ফৈলজানা এবং রাজশাহী বিশপ মহোদয়ের অভিষেক অনুষ্ঠানেও সংগীত পরিচালনা করেছি। রাজশাহী পালকীয় কেন্দ্রে সংগীত প্রশিক্ষক হিসেবে ছেলেমেয়েদের গান শিক্ষা দিয়েছি ও বিভিন্ন স্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি।

আধ্যাত্মিকতা বৃদ্ধিতে খ্রিস্টিয় উপাসনা সংগীত বিশেষ ভূমিকা রাখে। সর্বপ্রথম মাথায় রাখতে হবে সংগীত নির্বাচন। কোন অনুষ্ঠানে কোন গান প্রযোজ্য সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। গান যেন অর্থপূর্ণ ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সে বিষয়ে বিশেষ সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বর্তমানে ধর্মের প্রতি মানুষের অনীহা লক্ষ্য করা যায়। বাহ্যিক জৌলুস চাকচিক্যের গহীন অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে ধার্মিকতা। ভালো সংগীত পরিবেশন করে মানুষের অন্তরের অন্তস্থল স্পর্শ করা যায়। তেমনি খ্রিস্টযাগে ভালো গানের মাধ্যমে ধর্মের প্রতি মানুষের অনুরাগ বৃদ্ধি করা যায়। খ্রিস্টযাগে বা অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যদি মানসম্পন্ন গান পরিবেশন করা হয়, তাহলে সবাই বলেন অনুষ্ঠান বা খ্রিস্টযাগ ভালো হয়েছে ও প্রাণবন্ত হয়েছে। খ্রিস্টযাগ প্রাণবন্ত করার পুরো দায়িত্ব গানের পরিচালক এবং কয়্যার গ্রুপের।

সাপ্তাহিক প্রতিদিনের খ্রিস্টযাগে সবাই অংশগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগে অধিকাংশ মানুষ অংশগ্রহণ করে। রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগে প্রতিটি গান, সামসংগীত আবৃত্তি করার কথা থাকলেও অনেকে তা করে না। এতে উপাসনার নিয়ম ব্যাহত হয়। গানের দলের বাদ্য-বাজনার ব্যাপারে যথেষ্ট সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। সাউণ্ড সিষ্টেমকে যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। বাজনার আওয়াজ যদি গানের কথাকে ঢেকে ফেলে তবে সেখানে খ্রিস্টভক্তগণ খ্রিস্টযাগে মনোযোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন।

ধর্মীয় সংগীত আমাদের খ্রিস্টযাগ বা যে কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে। যদি আমরা সঠিকভাবে, সঠিক সময়ে, যথাযথ স্থানে সংগীত উপস্থাপন করতে না পারি তাহলে পুরো অনুষ্ঠানটি প্রাণহীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে উপাসনা সংগীতে নতুন নতুন পরিচালক-পরিচালিকার সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমাদের খ্রিস্টমণ্ডলীর জন্য গর্বের বিষয়। খ্রিস্টযাগে খ্রিস্টভক্তগণ যেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগীতে অংশগ্রহণ করতে পারে এমন গান বাছাই করা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় দেখা যাচ্ছে এমন গান তারা বাছাই করে যা শুধু তাদের মধ্যে গুটি কয়েকজন গাইছে।

আবার অনেক সময় গানের তাল, সুর, লয় কিছুই ঠিক থাকছে না। বাণীদীপ্তি কর্তৃক যে সুর দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ আলাদা সুরে গাওয়া হচ্ছে। খ্রিস্টযাগে ছোটবড় সবগুলো গান যেমন- বিশ্বাসমন্ত্র, পুণ্য পুণ্য, স্মরণগীতি, যুগ যুগ ধরে, প্রভুর প্রার্থনা, হে বিশ্বপাপহর আবৃত্তি না করে গানের আকারে হওয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময় সব গান জানা নেই বিধায় তা গাওয়া হচ্ছে না। আর যারা জানে তাদের সাহায্যও নেওয়ার প্রয়োজন মনে করছে না। এতে উপাসনা নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না। নতুন নতুন গানের সমারোহে পুরনো গান হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু আগের গানগুলোতে যে ভাব গাম্ভীর্যতা ছিল তা বর্তমান গানগুলোর মধ্যে সব সময় পাওয়া যাচ্ছে না।

আগের এবং বর্তমানে খ্রিস্টিয় উপাসনা সংগীতে অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ পার্থক্য লক্ষ্যনীয়। আগের গানগুলোর কথা, সুর, তাল ও লয়ের সামঞ্জস্য খুব বেশি ছিল। বর্তমানে সব নয়, তবে কিছু কিছু গান খ্রিস্টযাগে গাওয়া তো দূরের কথা, গানটা প্রবেশ গীতি না অর্পণগীতি বা প্রসাদগীতি বুঝাই যায় না। বর্তমানে বাহ্যিক আড়ম্বরের সাথে সাথে মনে হচ্ছে গানগুলোও প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। আমি সব গানের কথা বলছিনা; কোন কোন ক্ষেত্রে এ বিষয় লক্ষ্যনীয়। আবার কোন কোন গানের কথা ও সুর খুবই সুন্দর যা খ্রিস্টযাগে গাওয়ার উপযোগী। নতুন নতুন শিল্পীদের মধ্যে অনেকেই খুব সুন্দর গাইছেন, সুর দিয়েছেন যা প্রশংসার দাবীদার। আগে হাতেগোনা গুটি কয়েকজন গান পরিচালনা করতেন কিন্তু বর্তমানে অনেক নতুন নতুন শিল্পী হওয়ায় প্রতিযোগিতার মতো হয় কে আগে বসবে গানের দলে। এটা একটা ভাল দিক, কারণ এতে উপাসনায় সবাই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করতে পারে।

খ্রিস্টযাগে উপাসনা সংগীত পরিচালনা করেন এমন কয়েকজনের কাছ থেকে খ্রিস্টিয় উপাসনা সংগীত বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকেই খ্রিস্টযাগে উপাসনা সংগীত বিষয়ে বলছেন যে, শুদ্ধ ও শ্রুতিমধুর সংগীত সবাইকে আকৃষ্ট করে। আর উপাসনা সংগীত মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিকতা, ভক্তি ও বিশ্বাস বাড়াতে খুবই প্রয়োজনীয়। তারা প্রত্যেকেই উপাসনা সংগীত সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা দরকার বলে মত ব্যক্ত করেছেন। মথুরাপুর ধর্মপল্লীর কাতুলী গ্রামের সাধু আন্তনী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সাগরী গমেজ বলেন, খ্রিস্টিয় উপাসনা সংগীত সফলভাবে পরিচালনার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমার একটাই লক্ষ্য থাকবে খ্রিস্টযাগ যেন সুন্দর, প্রাণবন্ত ও অর্থপূর্ণ হয়ে উঠে। গানের দল সঠিক সময়ে যথা স্থানে বসেছে কিনা তা লক্ষ্য রাখতে হবে। গানে ছেলে ও মেয়ে কন্ঠ আলাদা থাকলে সেভাবেই বসাতে হবে। বাদ্য যন্ত্র টিউনিং, সাউণ্ড সিষ্টেম, মাউথ পিচে শব্দের সমন্বয় আছে কিনা এবং গান যেন বাদ্যযন্ত্রের শব্দে ঢাকা পড়ে না যায় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

পরিচালক এবং খ্রিস্টযাগ উৎসর্গকারী পুরোহিতের সঙ্গে যোগাযোগ বা আই কন্টাক করা যায় কিনা সে রকম স্থানে বসতে হবে। গানের দলের পরিবেশ যেন ঠিক থাকে সে দিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরী। অনেকে অযথা কথা বলা ও হাসাহাসি করা; গানের দলে এ রকম পরিবেশ যেন অন্যের বিঘ্নের কারণ না হয়ে উঠে সে দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। অযথা বাইরে যাওয়া, পিছন বা এদিক সেদিক তাকিয়ে পরিবেশ যেন নষ্ট না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে গান বাছাই করতে হবে যেন অনুষ্ঠান অর্থবহ হয়ে উঠে। রবিবাসরীয় খ্রিস্টযাগে ক্ষমা অনুষ্ঠান হতে শুরু করে সমাপন গীতি পর্যন্ত প্রতিটি গান পরিবেশন করতে হবে। সামসংগীত প্রয়োজনে গানের আকারে করা যায়। গীতাবলীতে গানের সিরিয়াল অনুযায়ী যে গান দেওয়া থাকে সে অনুযায়ী গান বাছাই করতে হবে। আর খ্রিস্টযাগে সমাপন গীতিতে অবশ্যই ধন্যবাদমূলক গান গাওয়া দরকার। কুমারী মারীয়া বা অন্য কোন গান গাওয়া হতে বিরত থাকলে ভালো। খ্রিস্টযাগে মহিমা স্তোত্র, আল্লেলুইয়া গান সব সময় ব্যবহার করতে হয় না। তাই কখন করতে হবে বা কখন করতে হবে না সে বিষয়ে জানা ও লক্ষ্য রাখতে হবে।

সূচিত্রা রিবেরু যিনি সাধ্বী রীতা’র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। খ্রিস্টযাগে তিনি সংগীত পরিচালনা করে থাকেন। ধর্মপল্লীর পূর্বে এবং বর্তমান সঙ্গীতের হালচাল কেমন প্রশ্ন করাতে তিনি বলেন, ‘সুরেই স্রষ্টার আবির্ভাব’ ‘যে ভাল গান করে, সে দু’বার প্রার্থনা করে’। সাধু আগষ্টিনের এই কথাটি আমার অন্তরে তীক্ষ্নভাবে গেঁথে আছে। তাই শিশুকাল থেকে খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীতকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি এবং অন্তর থেকে এই সঙ্গীত করার চেষ্টা করি। তবে শিশু বয়সে দেখেছি বয়োজেষ্ঠ্য শিল্পীগণ কোন প্রকার বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই বেশিরভাগ সময় উপাসনালয়ে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। কারণ অতীতের সঙ্গীতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ছিল না। তবে মানুষের অন্তরে ভক্তি, ভালোবাসা ও প্রেম ছিল সংস্কৃতি-কৃষ্টির প্রতি। আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতে গেলে কৃষ্টি- সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে মঙ্গলবাণী প্রচার করা যেমন আমাদের দায়িত্ব তেমনি খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রার্থনায় সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করাও আমাদের কর্তব্য। তাই যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে অন্যান্য ধর্মপল্লীর ন্যায় আমাদের ধর্মপল্লীতেও একটি খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীত দলের গুরুত্ব রয়েছে।

শিশু নিকেতন, জগতলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অলিন্দা পালমাকে খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীত পরিচালনায় কাদের ভূমিকা বেশি রয়েছে বলে জানতে চাইলে বলেন, খ্রিস্টিয় সঙ্গীত আমাদের জন্য অতিশয় আনন্দময় একটি উপহার। এই সঙ্গীতের ওপর আমাদের সকলেরই যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। তবে উপাসনা পরিচালনা বা বিভিন্ন খ্রিস্টিয় অনুষ্ঠানে বা পর্বদিনে সঙ্গীত একটি বিশেষ ভূমিকা বহন করে। আমার দৃষ্টিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা উপাসনায় সঙ্গীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে খ্রিস্টবিশ্বাসী জনগণের ভূমিকা বেশি। তবে ব্রতধারী-ব্রতধারিণীদের সহযোগীতায় জনগণ উৎসাহ ও সুযোগ পায়। জনগণ বলতে সবার ভূমিকা যে সমান তা নয়। মাত্র বিশেষ কয়েকজন নিরলসভাবে খ্রিস্টিয় সঙ্গীত পরিচালনায় বা শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে সেবা দিয়ে থাকে। তবে বর্তমানে অনেক যুবক-যুবতী উপাসনায় সঙ্গীত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে।

পরামর্শ হিসাবে বলতে পারি, যদি প্রত্যেক ধর্মপল্লীতে দায়িত্বরত ফাদারগণ উপাসনা সঙ্গীত দল তৈরির ক্ষেত্রে উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রদান করেন তাহলে সফল খ্রিস্টিয় উপাসনা সঙ্গীত দল পূর্ণতা লাভ করবে বলে আশা রাখি। গোধূলী কস্তা মথুরাপুর ধর্মপল্লীর যুবতী; যিনি উপাসনায় সঙ্গীত পরিচালনায় দক্ষ। তিনি তার অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, আমি আমাদের ধর্মপল্লীর উপাসনা সঙ্গীত দলের সাথে জড়িত। আমি মনে করি গির্জায় সঙ্গীত পরিচালনার ক্ষেত্রে অবশ্যই পূর্বপ্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। কারণ প্রস্তুতি ছাড়া সঙ্গীত পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর বিশেষ করে বছরের বিশেষ উপাসনায় যেমন- বড়দিন, পুণ্য সপ্তাহ, পুনরুত্থান উৎসব এবং বিভিন্ন পর্বগুলোতে গান পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের বিষয় মাথায় রেখে উপাসনা সঙ্গীত নির্বাচন করা দরকার।

পরিশেষে পিতামাতা ও অভিভাবকদের নিকট জোর দিয়ে বলতে চাই, ছেলেমেয়েদের খ্রিস্টিয় সঙ্গীত শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন এবং বাড়িতে নিজেরাও চর্চা করাবেন। সংগীত ছাড়া আমাদের উপাসনা অচল। খ্রিস্টধর্মকে কৃষ্টি-সংস্কৃতির আদলে বিকশিত করতে ও উপাসনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে খ্রিস্টিয় সঙ্গীতের বিকল্প নেই। আসুন আমরা উপসনায় সব সময় প্রাণ খুলে গান গাওয়ার মধ্যদিয়ে খ্রিস্টের গৌরব বন্দনায় মুখর হয়ে উঠি।

Please follow and like us: