বাংলাদেশের বৃহত্তর ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের বর্তমান পাবনা এবং নাটোর জেলায় বসবাসরত বাঙালি খ্রিস্টভক্তদের আগমনের শতবর্ষ পূর্ণ হতে যাচ্ছে ২০২০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। বৃহত্তর ঢাকা জেলার ভাওয়াল জনপদ থেকে শতবর্ষ আগে বাঙালি খ্রিস্টানরা বর্তমান পাবনা এবং নাটোর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। সেই থেকে বড়াল নদ এবং চলনবিলের অববাহিকায় আর একটি ভাওয়াল জনপদ গড়ে ওঠে। আদি ভাওয়াল আর উত্তরবঙ্গ- এই দুই জনপদের বাঙালি খ্রিস্টানদের মধ্যে আচার-আচরণ, অভ্যাস-ঐতিহ্য, খাদ্যাভাস, ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় ক্রিয়াকলাপের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। স্থানীয়দের সাথে মিলে মিশে গেলেও শতবর্ষ ধরে তারা লালন করে আসছেন তাদের আদি বৈশিষ্ট। এটা কম কথা নয়। কীসের তাগিদে বা কোন্সব কারণে তারা যমুনা পাড় হয়ে বড়াল ও চলনবিলের আশেপাশে বিশাল আর একটি বসতী গড়ে তুলেছেন- এটা হয়তো গবেষণার বিষয়। কিন্তু এটা একটা ঈশ্বরের আর্শীবাদ হিসেবেও দেখা যেতে পারে। তাদের কথায়, বাপ-দাদারা এদেশে এসে ভালোই করেছেন। কারণ শিক্ষা-দীক্ষায়, অর্থ-সম্পদে স্থানীয়দের থেকে তারা এগিয়ে গেছেন।
গত পাঁচ ডিসেম্বর, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ ধানাধীন আভে মারীয়া চার্চ চত্বরে, রাজশাহী ডাইয়োসিসের দক্ষিণ ভিকারিয়ার শীতকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। এখানে উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ ভিকারিয়ার পাবনা ও নাটোর জেলাতেই আদি ভাওয়াল বাঙালি খ্রিস্টানরা বসবাস করছেন। এই দক্ষিণ ভিকারিয়া বৈঠকেই সর্বসম্মতিক্রমে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, ২০২০ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে অথবা ২০২১ খ্রিস্টাব্দের প্রথমভাগে, ভাওয়াল অঞ্চল থেকে বাঙালি খ্রিস্টানদের আগমনের শতবর্ষ পালন করা হবে। বিষয়টি প্রায় সবার কাছে এখনো অজানা। উত্তরবঙ্গের পাবনা ও নাটোরের জেলা শহর এবং বিভিন্ন উপজেলায় বাঙালি খ্রিস্টানরা প্রথমদিকে বসতী গড়ে তুললেও বর্তমানে তারা ছড়িয়ে গেছেন, রাজশাহী, বগুড়া ও দিনাজপুর জেলায়। সব মিলে কমপক্ষে ২৫ হাজার বাঙালি খ্রিস্টান উত্তরবঙ্গে বসবাস করছেন- যাদের আদি পুরুষগণ ঢাকার ভাওয়াল থেকে এসেছেন।
শতবর্ষ উদ্যাপন সামনে রেখে ভিকারিয়া বৈঠকে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করা হয়। সাত সদস্যবিশিষ্ট এই ওয়ার্কিং কমিটির প্রাথমিক কাজ হবে একটা খসড়া প্রস্তাব/পরিকল্পনা তৈরি করা। দক্ষিণ ভিকারিয়ার পরবর্তী বৈঠকে এই খসড়া প্রস্তাব/পরিকল্পনা পূর্ণ অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে। আর সেই বৈঠকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি এবং অন্যান্য বিষয় চুড়ান্ত করা হবে। সেই সাথে খ্রিস্টভক্তদের মাঝে বিষয়টি জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া শতবর্ষের এই অনুষ্ঠান পালন সম্ভব নয়। ফাদার সুনীল রোজারিও।

Please follow and like us: