ফাদার প্যাট্রিক গমেজ
বিশপ মহোদয়ের পালকীয় পত্রটা পড়লাম। মূল কথা : কৃতজ্ঞতা।
তাৎক্ষণিক ভাবনা: আমি যে এই পৃথিবীতে এসেছি, আমার বিদ্যমানতা; এটাইতো ঈশ্বরের এক মহাদান। বাবা মা পেয়েছি, এটা ঈশ্বরের এক মহাদান। পুনরায় বলি, আমি যে জীবিত আছি; সুস্থ আছি, কর্ম করতে পারছি এসবই তো আমার কাছে ঈশ্বরের দান। ব্যক্তি জীবনের আরো অনেক কিছুই সব কিছুই আমার নিজের বলে নয়; ঈশ্বরই আমাকে, আমাদের প্রত্যেককে দিয়েছেন এবং দিয়েই যাচ্ছেন। ঈশ্বরের এই অনুগ্রহ আমি কি একবারও আমার চেতনায় নিয়ে আসি? নাকি, জেগে উঠি-কাজ করি, খাই-দাই-ঘুমাই, এই ধারা নিয়ে জীবন কাটাই? পক্ষান্তরে প্রাত্যহিক সত্যগুলোকে আমি যদি চেতনায় নিয়ে আসি, তবে তো প্রথমেই আমার মাথা নত হবে এই ভেবে যে, আমার সমস্ত কিছুই ঈশ্বরের মহাদান! নম্র অন্তর বলে উঠবেঃ তোমায় প্রভু ধন্যবাদ! হয়তো বা সাধু পিতরের মত বলে উঠবঃ “প্রভু, আমি যে পাপী!”
কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ : কৃতজ্ঞতা অন্তরের ব্যাপার, বলা যায় অন্তরের অন্তঃস্থলের ব্যাপার। আর ধন্যবাদ হল অন্তরের সেই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। আর এই বহিঃপ্রকাশ বিচিত্র! এই প্রকাশের মধ্যে আবেগ-অনুভূতি জড়িত। কান্নার মধ্য দিয়ে, বিস্ময়-মাখা চাহনীর মধ্য দিয়ে, উজ্জ্বল মুখাবয়বের মধ্য দিয়ে, করমর্দনের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাপূর্ণ সেলামের মধ্য দিয়ে. আলিঙ্গনের মধ্য দিয়ে, মুচকি হাসির মধ্য দিয়ে, কিছু উপহার দিয়ে, এমনকি নীরবতার মধ্য দিয়েও ; আরো হাজারো উপায়ে হতে পারে অন্তরের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। যখন কেউ জাগ্রত চৈতন্যে উপলব্ধি করে যে, তার প্রতি অনেক অনেক কল্যাণ করা হল, সমর্থন, স্বীকৃতি, সাহায্য-সহযোগীতা, বিপদে আশ্রয় ইত্যাদি) এবং সে তা স্বীকার করছে তখনই তার মধ্যে জেগে উঠে নম্রতায় ভরা এক অনভূতি (feeling) যা বর্ণনা ক’রে বুঝানো কঠিন। অন্তরের অনুভ’তি জাগবে তখনই যখন অন্তরের অন্তঃস্থলের যে চৈতন্য তা জাগ্রত হয়। তবে মানুষের চেতনা/চৈতন্য কি জাগ্রত থাকে? “আমি জাগিয়া ঘুমাই নিশিদিন প্রভু, আমারে জাগাবে কবে?”
চেতনায় বিশ্বসৃষ্টিঃ সত্যিকারের অনুভূতি আসে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে; সচেতন অন্তর থেকে। ছাদের উপর থেকে যদি তাকাই : চারিদিকে সবুজ বনাঞ্চল, নদীনালা অর্থাৎ বিশ্ব প্রকৃতি, ঢাকা থেকে বিমানে যাত্রাকালে বিমানের জানালা দিয়ে তাই যদি আকাশের মেঘমালা যার উপর দিয়ে বিমানটি উড়ছে; অবতরণকালে দেখি নিচের সমৃদ্র, নদীনালা, শহর-গ্রাম, আঁকাবাঁকা মেঠোপথ, পাঁকা সড়ক — তখন জাগ্রত অন্তর বিস্ময়ে বলে উঠবেঃ আহ! এতো সুন্দর! ঈশ্বরের এতো সুন্দর সৃষ্টি ! তখনই কৃতজ্ঞ অন্তর গেয়ে উঠবে একটি ধন্যবাদ প্রকাশের গান ! আহা কি অপরূপ সৃষ্টি তোমার ভাবি যদি বারে বার, মুগ্ধ নয়নে হেরিয়া তাহার জুড়ায় প্রাণ আমার! ঈশ্বর তুমি কত মনোহর তোমায় জানাই ধন্যবাদ।
একটি একান্ত ব্যক্তিগত প্রশ্নঃ আমি কি ঈশ্বরের এই সৃষ্টি, ঈশ্বর দেওয়া আমার জীবন, আমার সময়-কাল, স্বাস্থ, কর্মক্ষমতা এবং আরো অনেক দান যে ঈশ্বর-প্রাপ্ত সে বিষয়ে আমি কি সচেতন? রাত্রে যে সুখ নিদ্রা হয়েছে এবং সকালে যে জীবিত অবস্থায় উঠেছি, সে বিষয়ে আমি/আমরা কি সচেতন? যদি সচেতন, তাহলে আমি অবশ্যই বিছানায় থাকতেই আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেব। গাছপালা নদীনালা ঘরবাড়ী পশুপাখি এগুলোর দিকে ধ্যানময় দৃষ্টি দিয়ে বলতে পারিঃ ছন্দে ভরা তোমার গড়া এই পৃথিবী আমার কাছে এতো ভাল লাগে! এর পরেই তোমায় প্রভু ধন্যবাদ! তবে প্রশ্নঃ আমার/আমাদেও মধ্যে কি এই সত্যের উপর চেতনা জেগে উঠে?
অনেকেই বোধ হয় এই মহা বিশ্বসৃষ্টিকে ; taken for granted এই হিসাবে বিবেচনা করে ব’লে কোন অনুভূতিই আসেনা; ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা তো দূরে থাক। সৃষ্টিকে নষ্ট করে ; গাছটির গোড়ায় কুড়োল মারে ; অযথা পাতা ছিড়ে ; আরো কত কি! চৈতন্য জাগ্রত থাকলে কি এ-সব হত?
পবিত্র বাইবেলঃ আদিপুস্তক প্রথম অধ্যায়ঃ জগত সৃষ্টি; সবই উত্তম। উত্তম সৃষ্টিকে রক্ষা করার জন্য বিবেকবান মানব সৃষ্টি; ঈশ্বরের সাদৃশ্যে; প্রাণবায়ু অর্থাৎ ঈশ্বরের আত্মা যার দ্বারা সে ভাল-মন্দ বিচার করতে পারবে; ঈশ্বরের সান্নিধ্যে থাকবে। এই মানুষটির মধ্যেই ঈশ্বর দিয়েছেন চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, বিচার করার শক্তি, চিন্তা। এবং এই প্রাণবায়ুর শক্তিগুণেই মানুষ ভালবাসতে পারে ; দিতে পারে কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ । এই শক্তিগুণেই সে সৃষ্টিকে যত্ন করতে পারে। আর তাই বিশ্বসৃষ্টিকে রক্ষণাবেক্ষণের ভার ঈশ্বরের হাত থেকে পায় মানুষ। অতএব সৃষ্টি ধ্বংস নয়, সৃষ্টির যত্ন; সৃষ্টিকাজকে চলমান রাখা। সৃষ্টির সৌন্দর্যকে বর্ধন করা। ক্ষতি করা নয়। আর এইভাবেই প্রকাশ পায় সৃষ্টিকর্তার প্রতি সৃষ্টজীবব মানুষের সৃষ্টির জন্য কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা।
ঈশ্বরের মহাদানসমূহ: আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে সহজ চিন্তাধারায় ঈশ্বরের মহাদান আমার/আমাদের যা আছে সবইঃ প্রাণ, দেহ-মন-আত্মা, সৃষ্টজগত তথা প্রতিটি সৃষ্টবস্তু। একটা গান আছেঃ দিয়েছ ফুল-ফল আকাশে নীল, জীবেতে নরে অপূর্ব মিল; সকলের মাঝে তব বিরাজে তোমার আশীর্বাদ। ধন্যবাদ, হে প্রভু ধন্যবাদ। তাই এই যে আমরা ভাইবোন ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব, আত্মীয়তা, শান্তি-সম্প্রীতি এ-সবই ঈশ্বরের দান। এই যে আমাদের প্রতিভা, জ্ঞান-বুদ্ধি সৃজনশীলতা —- সবই তাঁরই দান। বিষয়টি কি আমাদের চেতনায় আসে? যদি থাকে তবেই মিলন ও ভ্রাতৃত্ব শুধু কথায় নয়, বাস্তবে। চেতনায় নাই তো এগুলো নিয়ে অহংকার ; বা অন্যের বিষয়ে পরচর্চা, সমালোচনা, দ্বেষ-বিদ্বেষ আর এইভাবেই তো মহাদানের পদদলিতকরণ!
ভাল-মন্দের চেতনাঃ ক) পাপের চেতনায় রাজা দায়ুদঃ ব্যভিচারের মহাপাপ করার পর ঘুমন্ত থাকে রাজা দায়ুদের চৈতন্য। তবে প্রবক্তা নাথানের প্রতীকি গল্প দিয়ে যখনই দায়ুদেও কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ঃ রাজা কি ঠিক কাজ করেছে? দাউদ উত্তর দেয়ঃ অবশ্যই না! গরীরের প্রতি অন্যায়।” নাথান বলে উঠেঃ লোকটি আপনি। তক্ষনই রাজা দায়ুদের চৈতন্য জেগে উঠে: রচনা কওে সামসঙ্গীত ৫১। ক্ষমা পাবার পর রচনা করেন সাম ৩২। ঈশ্বরের মহাদানগুলো চেতনায় এনে আরো অনেক ধন্যবাদ ও প্রশংসার সামসঙ্গীত রচিত হয় এই দায়ুদের দ্বারাই।
খ) মারীয়ার কৃতজ্ঞতা : আর নতুন নিয়মে মা মারীয়ার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতার প্রকাশ তো Magnificat আমার অন্তর প্রভুর জয়গান করে, প্রাণ আমার উল্লসিত। পুণ্য পুণ্য তাঁর নাম।
গ) দশজন কুষ্ঠ রোগী : সুস্থ হয়েছে দশজনই! যীশু দ্বারা সাধিত কৃত কল্যাণটির বিষয় চেতনা এসেছে মাত্র একজনের। এবং সে একজন বিজাতীয়। ফিরে গেল ধন্যবাদ জানাতে। আর নয়জন? এটি শুধু আমার আপনার প্রশ্ন নয়; যীশুরও প্রশ্ন। নিজ জাতির লোকেরাই যীশুকে ধন্যবাদ দেবার প্রয়োজন মনেই করল না। চেতনাই হল না। তাদের চৈতন্য ঘুমন্ত!
বর্তমান বাস্তবতায় কোনটি বেশী প্রত্যক্ষ হয়ঃ একজনের আচরণ বা নয়জনের আচরণ?
বাস্তবতার নিরিখে চেতনায় কৃতজ্ঞতা
১। খ্রীষ্টযাগে অংশ গ্রহণ : চৈতন্যকে জাগ্রত রাখি ; সক্রিয়ভাবে ঈশ্বরের আহার তাঁর বাণী ও জীবনময় রুটি গ্রহণ করি। সচেতন হয়ে কমুনিয়ন গ্রহণের পর হাটু দিয়ে যীশুকে ধন্যবাদ দেই। গান একটা বড় অংশ ; তাই সচেতন হয়ে ঈশ্বরের দেওয়া কণ্ঠ দিয়ে গানে অংশ গ্রহণ করি যেন গান হইয়ে উঠে কৃজ্ঞতার প্রকাশ; প্রভুর প্রশংসার প্রকাশ!!
২। বহু যুগের ঐতিহ্যঃ ঐতিহ্যঃ জমির ফসল, জাঙলার প্রথম শব্জি; গাভীর দুধ এবং আরো। ঈশ্বরের দয়ায় পাওয়া ; তাই গীর্জায় দেওয়া; অর্ঘের সময় বেদীতে নেওয়া। চেতনায় ঈশ্বরকে এইভাবেই কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ। ঐতিহ্য বাঙ্গালী ও আদিবাসী খ্রীষ্টবিশ্বাসীদের। এই ঐতিহ্যটি বর্তমান ডিজিটাল যুগে কতটুকু চলমান ?
৩। খ্রীষ্টযাগের উদ্দেশ্য: শুধু নভেম্বরের ২ তারিখে তো অবশ্যই; বছরের সব দিনেই আমরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করার জন্য নির্ধারিত অনুদান দিয়ে যাজককে করতে পারি। বিভিন্ন উপলক্ষ্য, যেমন জন্মদিন; বিবাহ-বার্ষিকী, সন্তান ভাল রেজাল্ট করেছে; সুস্থ হয়েছে কেউ; গাভী বাচ্চা দিয়েছে; নতুন সন্তান জন্মেছে, কোন বিদ থেকে রক্ষা এবং আরো হাজারো উদ্দেশ্য।
৪। খ্রীষ্টযাগে দান: দান-তোলা একটি অংশ। এই দান ঈশ্বরের প্রতি, মণ্ডলির প্রতি আমার/আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বাস্তব চিহ্ন। আমি/আমরা এই ব্যাপারে কতটুকু সচেতন? শুধু কি পুণ্য শুক্রবার ও পাস্কার সময় দান দেব? অথচ প্রতি নিয়তই তো ঈশ্বরের কাছ থেকে দানঃ আধ্যাত্মিক অনুগ্রহ মণ্ডলির মধ্য দিয়ে, বৃষ্টি-সৃষ্টিসজীব সবই তো পাচ্ছি প্রতিক্ষণ।
৫। গ্রামে-গঞ্জে বরেন্দ্র ও সমভূমি : কতভাবে আমি/আমরা করোনার থাবা থেকে, অন্যান্য রোগবালাই থেকে রক্ষা পেয়ে যাচ্ছি ! শত বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাচ্ছি। ঘরে পাট আসছে; জমিতে ধান লাগানো হচ্ছে ; দিন-মজুর ভাইবোনেরা সকাল থেকে বিকেল দুইটা/তিনটাপর্যন্ত কাজ করে। সকাল দশটায় খুব ভাল আহার, কাজ শেষে প্রতিদিন এক কেজি চাউল ও ৩৫০/- টাকা পাচ্ছে ! পাট কাটলে ও ধুইয়ে দিলে ৫০০/- বা ৫৫০/- টাকা। এটাও যে ঈশ্বরের দান জমির মালিকের মধ্য দিয়ে; ঈশ্বর যে আমাকে শক্তি-সামর্থ দিয়েছেন এ বিষয়ে কি তাঁরা সচেতন? রবিবার দিন গীর্জায় আসার জন্য, ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাবার জন্যে চেতনা জাগ্রত?
৬। পরস্পরের প্রতি কৃতজ্ঞ হও : একে অন্যের কাছ থেকে আমরা পাচ্ছি কত সাহায্য, উপকার, সহযোগীতা বিভিন্নভাবেঃ আধ্যাত্মিক, আর্থিক, বস্তুগত বা বৈসয়িক; সময়দান; বিভিন্ন প্রতিভা দ্বারা সহায়তা এবং আরো। তা পাচ্ছি পরিবারে, সমাজে, স্থানীয় মণ্ডলিতে, প্রতিষ্ঠানে, সামাজিক সংস্থায় এবং আরো অনেক পরিসরে। উপকারভূগী আমরা/তোমরা/তারা আমি/সে/তুমি কি এ বিষয়ে সচেতন? স্থানীয় মণ্ডলির মধ্য দিয়ে কত যে আধ্যাত্মিক ও পালকীয় যত্ন; আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা-সেবা, স্বাস্থ্য-সেবা এবং আরো হাজারো উপকার পাচ্ছি সে বিষয়ে আমি/আমরা তুমি/তোমরা, সে/তাহারা কি সচেতন? চেতনা জাগ্রত? এগুলোর জন্য কি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি ? শুধু মুখে নয়, concrete কোনকিছু করে দৃশ্যনীয়ভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি? পালকীয় যত্ন পেয়ে আমি/আমরা কি প্রত্যেককেই সমানভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই ?
৭। কৃতজ্ঞতায় সার্বজনীনতা: সাধ্বী মাদার তেরেজা বলেন, “We all cannot do great things; but we all can do small things with great love.” সবাই বড় বড় কাজ করতে পারে না; কিন্তু সবাই বড় ভালবাসা দিয়ে ছোট ছোট কাজ করতে পারে। ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের বেলায় বড়-ছোট আবার কি? পছন্দের-অপছন্দের আবার কি ? সবাই তো সেবা করছে। উপকার করছে; এমন কি একজন অতি বৃদ্ধ/বৃদ্ধাও যাজককে/সমাজ নেতাকে; অধ্যাপক-অধ্যক্ষকে আশীর্বাদ করছে; প্রার্থনা করছে। তাঁকে/তাঁদের কেন ধন্যবাদ দেব না? শক্তি-সামর্থ-সম্পদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করব না?
সার্বজনীনতা প্রকাশই তার/তাদের মনমানসিকতা, চেতনার মাপকাঠি। হতেও তো পারে যে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যা কারো কারো জন্যে চৈতন্য একটুতেই যেন খুবই জেগে উঠে; তাই প্রকাশের ধারাও উচ্চ মার্গের ; আবার কারো কারো জন্য চৈতন্য যেন একেবারেই নীরব, ঘুমন্ত ; বা নিজেই চৈতন্যকে ঘুম পাড়িয়ে রাখি/রাখে। ঈশ্বর তো সবার জন্যেই বৃষ্টিধারা নামিয়ে আনেন! কোন পার্থক্য করেন না!
৮। পারিবারিক গঠন: প্রথমে পিতামাতাকে এবং বয়োজেষ্ঠ ব্যক্তিদের চেতনা রাখতে হবে যে পরিবার, সন্তান-সন্তদিসহ পরিবারের সকল সদস্য; অর্থ-সম্পদ, ভিটা-মাটি, চাকুরী, বেতন সবই ঈশ্বরের দান। তাই তাঁদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশঃ পরিবারে ধন্যবাদের প্রার্থনা; গীর্জায় পরিবার থেকে অর্ঘ্যদান; এক পরিবার অন্য পরিবারকে ধন্যবাদ (তবে ব্যবসায়িক মানদন্ডে নয়); ইত্যাদি। স্ত্রী স্বামীকে বা শ্বশুর-শ্বাশুরীকে ধন্যবাদ জানায় সেলাম করে, উপহার দিয়ে; ভাল রান্না করে ; স্বামীও তেমনই আচরণ করেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য উপহার দিয়ে, প্রশংসা করে; সাহায্য সহযোগিতা দিয়ে এবং আরো। আর সন্তানেরা দেখতে পায়।
তখনই সন্তানেরা কৃতজ্ঞতার চৈতন্য নিয়ে বেড়ে উঠে এবং তারাও ধন্যবাদ-কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে শিখে একেবারে বাস্তবেঃ ওরাও গীর্জায় দান দেয়। গুরু ব্যক্তিদের ভক্তি-শ্রদ্ধা করে। পরিবারে ভাই বোনকে সাহায্য করে; বোন ভাইকে আম কেটে তিনভাগের দুই ভাগ ভাইতে দেয়; পিতামাতার জন্ম দিনে তাঁদেরকে এক প্যাকেট চানাচুর উপহার দেয় টিফিনের টাকা জমা রেখে ; পিতামাতার বাধ্য হয় হয়। শিক্ষক দিবসে এমন পরিবারের সন্তানেরাই তথা স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাই সংগোপনে উপহার (ক্ষুদ্র ও অতি সাধারণ হলেও) দেয় তাদের শিক্ষাগুরুজনদের।
“চেতনায় কৃতজ্ঞতা ” এই ধারায় বেড়ে উঠার তো শেষ নেই! আমরা প্রত্যেকেরই বেড়ে উঠার প্রয়োজন রয়েছে। চৈতন্য জাগ্রত থাকুক সবার। শুধু কৃতজ্ঞতা-ধন্যবাদ প্রকাশের বেলায়ই নয় ; ভাল-মন্দ, কথা-কাজ-আচরণে, শব্দ চয়নে আমাদো প্রত্যেকের চৈতন্য sense of good and evil যেন জাগ্রত থাকে। অনেক প্রবীণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠেঃ আজকাল যেন পাপের চেতনা sense of sin হারিয়েই গেছে ! বর্তমানে মনে হচ্ছে “সবই চলে!” বিশেষভাবে যুবক যুবতীদের বেলায় ! এমন কি অন্যদের বেলায়-ও। ঘুমন্ত চৈতন্য জাগ্রত হউক সবারই।
“চেতনায় কৃতজ্ঞতা” “চেতনায় ভাল-মন্দ” এমনিভাবেই বেড়ে উঠুক আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং আমরা বিশ্বাসী ভক্ত-সমাজ; আমরা যাজক-সমাজ সকল পরিসরে ও সকল ক্ষেত্রে হইয়ে উঠি ওদের সামনে জাগ্রত চৈতন্যের নিত্যদিনের বাস্তব ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ; অনুকরণীয় উদাহারণ। উপরন্তু, জাগ্রত চেতনার এই দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে দেই আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃমাণ্ডলিক পরিসরেও।!