সিলেট ধর্মপ্রদেশের লক্ষীপুর ধর্মপল্লীতে মহাসমারোহে উদযাপন করা হলো জুবিলীর পুণ্যবর্ষে জাতীয় যুব দিবস। এ যুব দিবসে গোটা বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০০ এর অধিক যুবারা অংশগ্রহণ করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, লক্ষীপুর ধর্মপল্লীতে শুরু হয় জুবিলীর পুণ্যবর্ষে জাতীয় যুব দিবস। এ বছর “আশায় আনন্দিত হও”এ মূলসুরকে কেন্দ্র করে ৪ দিন ব্যাপি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়।
যুব দিবসের সূচনা হয় যুব ক্রশ স্থাপনের মধ্য দিয়ে।এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ জের্ভাস রোজারিও, বিশপ শরৎ ফান্সিস গমেজ, এপিসকপাল যুব কমিশনের নির্বাহী সচিব ফাদার বিকাশ জেমস রিবেরুসহ আরও অনেক ফাদার, ব্রাদার ও সিস্টারগণ। অনুষ্ঠানসূচি হিসেবে ছিল পতাকা উত্তোলন, যুব সংগীতে নৃত্য, লগো উন্মোচন ও শুভেচ্ছা  জ্ঞাপন।
সন্ধ্যায় ক্রুশের পথের পরে উদ্বোধনী খ্রিষ্টযাগ উৎসর্গ করেন বিশপ শরৎ ফান্সিস গমেজ। তিনি বলেন , আমরা যুবারা অনেক সময় অল্পতেই যে কোনো সাধারণ বিষয়েই নিরাশ হয়ে পড়ি। কিন্তু,  আমাদের উচিত বিষয়টি নিয়ে একটু চিন্তা করা এবং তার মধ্যে থেকে আশার বাণী খুঁজে বের করা । আর আমরা যদি নিরাশ না হয়ে আশা খুঁজে বের করতে পারি তবেই রোমীয় ১২:১২ পদের সাথে আমাদের জীবনের মিল হয়ে উঠবে এবং আমরাও আশায় আনন্দিত হয়ে উঠতে পারবো। খ্রিষ্টযাগের পর সিলেট ধর্মপ্রদেশের স্থানীয় কৃষ্টিতে সকলকে বরণ করে নেয়।
২৪ তারিখ ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা ও স্টল উদ্ধোধন। বাংলাদেশে কর্মরত প্রায় ২৮ টি সম্প্রদায়েরর ফাদার, ব্রাদার ও সিস্টারগণ স্টল সাজিয়ে ছিলেন। এটি ছিল যুবাদের মধ্যে আহ্বান বৃদ্ধির এক ভিন্নধর্মী আয়োজন। যুব র‌্যালির পর ব্যানার, শ্লোগান ও গান বাজনার মধ্য দিয়ে নতুন নুন্সিওকে বরণ করে নেওয়া হয় এবং তিনি ধর্মপ্রদেশীয় সকল স্টল উদ্বোধন করেন । এদিন ৩ দলে ধর্মক্লাশ পরিচালনা করেন এপিসকপাল যুব কমিশন। ধর্মক্লাসের বিষয়সমূহ যথাক্রমে : ইয়ুথ কাউন্সিলিং, খ্রিষ্ট বিশ্বাসের যুব জীবনে মণ্ডলির শিক্ষা ও যুব পরামর্শ, মানব পাচার রোধে যুব সচেতনতা ও করণীয় এবং সন্ধ্যায় রোজারি মালা, বিশ্ব যুব দিবসের অভিজ্ঞতা সহভাগিতা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার মধ্য দিয়ে এদিনের কার্যক্রম শেষ হয়।
২৫ তারিখ ছিল এক্সপোজার।এদিন অংশগ্রহণকারীরা জোনভিত্তিক বিভিন্ন পুঞ্জি ও বাগান পাড়াতে যুরতে যায় এবং অভিজ্ঞতা করে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা।বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে ২ টি বিষয়ে সহভাগিতা করা হয়। বিষয়সমূহ:Wild Life Trafficking, protecting Wildly life Trafficking . এবং সন্ধ্যায়  জিজাস ইউথ এর পরিচালনায় পবিত্র ক্রুশের আরাধনা ও পাপস্বীকার, আলোর উৎসব ও বন্ধুত্বের আনন্দ,মূল্যায়ন ইত্যাদি ছিল দিনের কর্মসূচি।
২৬ তারিখ প্রাতঃকালীন প্রার্থনার মধ্য দিয়ে দিনের সূচনা করা হয়। যুব দিবসের একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় ছিল ধর্মপ্রদেশ পর্যায়ে ফিরে গিয়ে আমাদের যুবারা কি ধরণের কাজ করবে মণ্ডলির জন্য । এতে প্রত্যেক ধর্মপ্রদেশ তাদের যুবাদের নিয়ে একত্রে আলোচনা করে কিছু পরিকল্পনা করেন যা তারা নিজ নিজ ধর্মপ্রদেশে বাস্তবায়ন করবেন ।
জুবিলির পূণ্য বর্ষের যুব দিবসের সমাপনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বাংলাদেশে অবস্থানরত পোপের রাষ্ট্রদূত আর্চবিশপ কেবিন রানাল্ড। তিনি বলেন, প্রিয় যুবা বন্ধুরা,আজ আমি সত্যিই খুব আনন্দিত তোমাদের মাঝে এসে। তোমাদের মাঝে রয়েছে অনেক জাতিগোষ্ঠী, অনেক ভাষা ও সংস্কৃতির সমাহার।এটি আমাকে সত্যিই আপ্লূত করেছে। এখানে তোমরা  বিভিন্ন ধর্মপ্রদেশ থেকে এসে সমবেত হয়েছে, একসাথে মিলেমিশে এই অনুষ্ঠানটি সার্থক করে তুলেছো তাতে এটাই প্রমান করে যে, তোমরা প্রভু যিশু ও পরস্পদের ভালোবাসো। যিশুকে ভালোবাসার মধ্যেদিয়ে খ্রিস্টমণ্ডলিকে এগিয়ে নিয়ে যাও এবং একজন ভালো মানুষ হয়ে গড়ে উঠো এবং পরস্পরের মধ্যে  ক্ষমার মনোভাব গড়ে তোলো। অন্যকে ক্ষমা করা নেতিবাচক কিছু নয়, বরং এটি সুন্দর ও ইতিবাচক বিষয়।
পবিত্র খ্রিস্টযাগ শেষে অর্চবিশপ কেবিন রানাল্ড, ময়মনসিংহ ধর্মপদেশের হাতে যুব ক্রুশ হস্তান্তর করেন এবং ঘোষণা করেন জাতীয় যুব দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশে।
বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার : তুষার বিশ্বাস
Please follow and like us: