সংবাদদাতা: বেনেডিক্ট তুয়ার বিশ্বাস
যুবাদের মনোভাব এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে তারা ভয় না পায়। ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখার চেয়ে জেগে স্বপ্ন দেখতে হবে; জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের স্বপ্ন দেখা দরকার। এমন স্বপ্ন দেখতে হবে না যাতে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ১২ মার্চ সাধু পিতরের ধর্মপল্লী মুসরইলে অনুষ্ঠিত যুব সেমিনারে বিশপ জের্ভাস রোজারিও এই কথা বলেন।
সেমিনারে মূলসুর হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল “যুবক, আমি তোমাকে বলছি ওঠ”। রাজশাহী শহরের বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও নার্সিং এর ছাত্র-ছাত্রী, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশনের ভলেন্টিয়ার, এনিমেটর ও ফাদার-সিস্টারসহ একশত চৌষট্রি জন দিনব্যাপি এ সেমিনারে অংগ্রহণ করে। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশপ হাউজের পরিচালক ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশনের সম্মানিত উপদেষ্টা ফাদার নবীন পিউস কস্তা, রাজশাহী কারিতাস অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আরোক টপ্য, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের রাজশাহী এপির সিনিয়র ম্যানেজার ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশনের সম্মানিত উপদেষ্টা লুক লোটাস চিসিম, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশনের কো-অর্ডিনেটর ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ, মুশরইল ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় যুব কমিশনের সহকারী কো-অর্ডিনেটর ফাদার প্রশান্ত থিওটোনিয়াস আইন্দ।
সেমিনারের আরম্ভ হয় প্রার্থনা, পবিত্র আত্মার গান, ভক্তিমূলক নৃত্য এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে। উদ্বোধনী বক্তব্যে ফাদার নবীন পিউস কস্তা বলেন, মণ্ডলীতে ছোট বড় সবার জন্য বিভিন্ন ধরণের গঠনের ব্যবস্থা রয়েছে; আর তাই হয়তো বিভিন্ন অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতিতেও আমাদের খ্রিস্টান যুবারা বিভিন্নভাবে ভালো আদর্শ দেখিয়ে যাচ্ছে, আর যার কারণে আমি বলবো আমাদের গঠন এখানেই স্বার্থক। আমাদের অনেক আগে থেকেই ইচ্ছা ছিল শহরের অধ্যয়নরত বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও অনান্য ছাত্র-ছাত্রীদের একত্রিত করে একটা সেমিনারের আয়োজন যা কিনা আজ আমরা করতে পেরেছি। তাই তোমাদের সবাইকে আজকের এ সেমিনারে অংশগ্রহণ করার জন্য ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
ড. আরোক টপ্য শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আমি আমার পড়াশোনার জীবনে প্রথমবার সফলতা অর্জন করতে পারিনি, কিন্তু তাই বলে আমি থেমে থাকিনি; দ্বিতীয়বার সাহস করে চেষ্টা করেছি এবং আমি সফল হয়েছি। তাই যুবক-যুবতীরা তোমাদের কাছে একটা অনুরোধ পড়াশোনা চালিয়ে যাও। বর্তমানে দেখা যায় আমাদের বই পড়াতে প্রচুর অনীহা কিন্তু বই হলো একমাত্র সমৃদ্ধ জ্ঞানভাণ্ডার, তাই জ্ঞানার্জনের জন্য বই পড়া আবশ্যক। ফাদার শ্যামল জেমস্ গমেজ বলেন, যুবা বন্ধুগণ তোমরা যিশুর পথে এসো, তার দেখনো পথ ধরে চলো। এই সেমিনারের মূল উদ্দেশ্য হলো খ্রিস্ট বিশ্বাস নিয়ে একসাথে যাত্রা করা। আমরা যুবারা হলাম তীর্থযাত্রী, তাই আমরা সবাই মিলে এ প্রোগ্রাম সার্থক করে তুলবো এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সেমিনারের মূল বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন ওয়ার্ল্ড ভিশনের সিনিয়র ম্যানেজার লুক লোটাস চিসিম। তিনি বলেন, আমাদের যুবাদের উঠে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজন খ্রিস্টিয় নেতৃত্ব এবং খ্রিস্টিয় ভালবাসার আশ্রয়। আমাদের এটা জানতে হবে আমরা কিভাবে মণ্ডলীতে, সমাজে এবং বিশেষ করে আমাদের যুব সমাজে খ্রিস্টিয় নেতৃত্ব দান করবো। আমাদের খ্রিস্টের আদর্শে জীবন গড়তে হবে এবং প্রার্থনাপূর্ণ জীবন গঠন করতে হবে। তবেই আমরা খ্রিস্ট সৈনিক হয়ে জেগে উঠতে পরবো।
বিসিএসএম রাজশাহীর প্রতিনিধি সৈকত কাউরিয়া বিসিএসএম সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দিয়ে বলেন, আমাদের শিক্ষার ওপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কারণ শিক্ষা আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য খুবই প্রয়োজন। সৈকত থাইল্যাণ্ডে রাজশাহী ধর্মপদেশের পক্ষে একটি কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন এবং সে কর্মশালার একটি বিষয় সহভাগিতা করে বলেন, আমি দেখেছি ভিয়েতনামের এক মেয়ে মাত্র বিশ বছর বয়সে নিজ ধর্মপল্লীতেও সেবা দিয়ে নিজের পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ আমরা আমাদের দেশে মণ্ডলীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি না পড়াশোনার অজুহাত দেখিয়ে। ফলে দেখা যায় একটা পর্যায়ে এসে আমরা মণ্ডলী থেকে দুরে সরে যাই। মণ্ডলীর সাথে যুক্ত থেকে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গেলে বাধাগ্রস্থ হবো না বরং তা আরও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।