ফাদার সুরেশ পিউরীফিকেশন
আমরা প্রত্যেকেই মুক্তিদাতা যিশু খ্রিস্টের আগমনের প্রত্যাশা ও অপেক্ষায় রয়েছি। আমাদের কাছে এক মহা আনন্দের বার্তা নিয়ে দীক্ষাগুরু যোহন এসেছেন খ্রিস্টের অগ্রদূত হিসেবে। তাঁর জন্মের মাধ্যমে এ জগতে মানবত্রাতার আগমনের জন্য ঈশ্বরের যে পরিকল্পনা তা চূড়ান্তভাবে বাস্তবায়িত হওয়া শুরু হয়। তিনি নতুন যুগের আগমন সম্বন্ধে ঘোষণা করলেন; ঈশ্বর তাঁর জনগণের জন্য মহা আনন্দ ও কল্যাণ নিয়ে আসবেন। এই নতুন আনন্দের জন্য কী ধরনের পথ, কী উপায় তিনি গ্রহণ করতে বলছেন? সে পথ হচ্ছে ন্যায্যতা ও ভালবাসার পথ। লোকেরা যোহনের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল- নতুন যুগে প্রবেশ করতে হলে “এখন আমাদের কী করা উচিত?”(লুক ৩:১০)। যোহন ধনীদের বললেন, ‘সম্পদের সহভাগিতা করতে, কর আদায়কারীদের বললেন সততা বজায় রাখতে, সৈনিকদের বললেন মানুষের মর্যাদা দিতে।’ সত্যিকারভাবে আগমনকাল আমাদের কাছে প্রভুর পথ প্রস্তুত ও মনপরিবর্তন ক’রে প্রভু যিশুর জন্মোৎসবের আনন্দের সহভাগী হ’তে আহ্বান করছেন।
প্রবক্তা জেফানিয়া আনন্দের কথা বলার পূর্বে খুব কঠোর ভাষায় তাদের প্রতিবাদ করেছেন যারা ভোগ-বিলাসে মত্ত, যারা অহংকারী ও ক্ষমতাশালী এবং যারা দরিদ্রদের শোষণ ক’রে ও ছল-চাতুরী দিয়ে অন্যায়ভাবে ধনী হচ্ছে। প্রভুর শক্তি দ্বারা সকল অন্যায় থেকে মুক্তি ও পরিশুদ্ধ জেরুসালেমবাসীর নিকট তিনি ঘোষণা করেন, “আনন্দধ্বনি কর, ওগো সিয়োন কন্যা। জয়ধ্বনি কর ওগো ইস্রায়েল, আনন্দ কর মনেপ্রাণে ওগো জেরুসালেম। ভগবান দূরে সরিয়ে দিয়েছেন তোমার যত শত্রুকে ” (জেফা ৩:১৩-১৪)। প্রবক্তা জেফানিয়া আমাদের কাছে এই বলতে চান যে, ন্যায্যতার প্রতিষ্ঠা ও তার ফলই হবে মানুষের মহা আনন্দ। আবার সাধু পৌল ফিলিপ্পীয়দের নিকট বলেন, “ভাইয়েরা, আনন্দ কর, আবার বলি তোমরা প্রভুতে আনন্দ কর”(৪:৪)” ফিলিপ্পীয়দের কাছে পত্রে সাধু পৌল সব চাইতে বেশী আনন্দের কথা বলেছেন। প্রভুতে এই আনন্দ কিসের? ব্যক্তিগত ভাবে সাধু পৌল আনন্দ করছেন কেননা সুসমাচার জনগণের কাছে পৌঁছেছে; আনন্দ করছেন এই দেখে যে তিনি বিশ্বাসের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে যাচ্ছেন।
প্রভুর অগ্রদূত দীক্ষাগুরু যোহন ধনীদের সহভাগিতা করতে, কর আদায়কারীদের সততা বজায় রাখতে, সৈনিকদের বললেন মানুষের মর্যাদা দিতে আহ্বান করেন। তিনি সমাজের বিভিন্ন লোকদের এই কথা বলতেন, ‘ধনীরা দুটো জামা থাকলে, যার জামা নেই তাকে একটা দাও। যার খাবার নেই তাদের সাথে ভাগ করে খাও। তোমরা সচেতন হও, তোমাদের ভোগ বিলাস দ্বারা অন্যায় করছ, অন্যকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছ, তোমাদের প্রাচুর্য অন্যের দারিদ্র; অন্যকে সাহায্য করা সেটা শুধু প্রেম-করুণার দাবী নয়, সেটা ন্যায্যতার দাবী। খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন, আশ্রয়হীনদের সাহায্য করা তোমরা কাছে শুধু ভিক্ষা নয়- তাদের প্রতি যেমন তোমরা, তোমার প্রতিও তাদের ন্যায্যতার দাবি। তাই তাদের সাথে সম্পদ বন্টন কর, ভাগ কর।’ অর্থ-উপার্জনকারীদের কাছে বলতেন, ‘ধার্য টাকার চেয়ে বেশী টাকা আদায় ক’রো না, টাকা উপার্জন করতে গিয়ে অসৎ পথ বেছে নিয়ো না, চুরি ক’রো না, কাউকে ঠকিয়ো না, কাউকে বঞ্চিত ক’রো না তার ন্যায্য দাবী থেকে; অল্প সময় কাজ ক’রো পুরো বেতন নিয়ো না, কাজে ফাঁকি দিয়ে পুরো পারিশ্রমিক দাবি ক’রো না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত উপার্জন ক’রো না, তোমার যা প্রাপ্য তা-ই তুমি গ্রহণ কর। অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে সততা রক্ষা কর।’ ক্ষমতাশালী, নেতা ও পরিচালকদের কাছে বলতেন, ‘তোমরা কখনও কারও ওপর অন্যায়-অত্যাচার ক’রো না; কারো নামে মিথ্যা অভিযোগও এনো না। অন্যের প্রতি ন্যায় বিচার কর। মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ক’রো না। অন্যায়ভাবে অন্যের উপর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব করো না, অন্যকে ছোট ক’রো না, অহংকারী হয়ো না।’
আগমনকালে আমাদের কাছেও ঠিক একইভাবে দীক্ষাগুরু যোহন আমাদের কাছে প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত করতে, মনপরিবর্তন ক’রে প্রভু যিশুর জন্মোৎসবের আনন্দে সহভাগী হ’তে আহ্বান করেন। তিনি যে আনন্দের কথা বলছেন সে আনন্দ স্বার্থপরতার আনন্দ নয়, সে আনন্দ প্রভুতে আনন্দ; সে আনন্দ গভীর আনন্দ। জগতের কাছ থেকে সে আনন্দের বার্তা শোনা যাবে না। সে আনন্দ শুধু ঈশ্বরের সন্তানের কাছেই সম্ভব যে সন্তানেরা সব পুরুষ ও নারীকে ভাই ও বোন বলেই গ্রহণ করে। আমরা আর কিছুদিন পরে বড়দিন উৎসব পালন করব। বড়দিন হলো ঈশ্বরের মানবদেহ ধারণের দিন। বলা হয়েছে, মানবদেহ ধারণ ক’রে ঈশ্বর দরিদ্র হয়েছেন যেন আমাদেরকে ধনবান করতে পারেন। দীক্ষাগুরু যোহন যিশুর আগমনের জন্য পথ প্রস্তুত করেন। মানুষকে মন পরিবর্তনের বাণী শোনান, তিনিই মানুষকে মুক্তিদাতার সাথে পরিচয় করে দেন। ঈশ্বর চান আমরা প্রতকেকেই যেন শান্তিরাজ যিশু খ্রিস্টের শান্তি ও আনন্দ অন্তরে উপলব্ধি করতে পারি।