‘সমাজ ও পরিবারে অধিকাংশ শিশু, নারী এবং ঝুঁকিপূর্ণরা সুরক্ষিত নয়। আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থানে থেকে ঝুঁকিপূর্ণদের সুরক্ষায় কাজ করতে হবে। তবে মনে রাখা দরকার, আমি যা ভালো করছি সেটা বাইবেলের শিক্ষাকেই প্রকাশ করে’। ন্যায় ও শান্তি বিষয়ক বিশপীয় কমিশন-সিবিসিবি এবং রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় ন্যায় ও শান্তি কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তব্যে ন্যায় ও শান্তি বিষয়ক বিশপীয় কমিশন- সিবিসিবির চেয়ারম্যান ও রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও এই কথা বলেন।

২৫ ও ২৬ এপ্রিল রাজশাহী এবং খুলনা ধর্মপ্রদেশে কর্মরত ফাদার-সিস্টার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অংশগ্রহণে রাজশাহী ধর্মপ্রদেশের খ্রিস্টজ্যোতি পালকীয় সেবাকেন্দ্রে দুইদিনব্যাপী সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত কর্মশালায় বিশপসহ ন্যায় ও শান্তি বিষয়ক বিশপীয় কমিশন- সিবিসিবির সেক্রেটারী ফাদার লিটন গমেজ, সিএসসি, রাজশাহী ও খুলনা ধর্মপ্রদেশীয় ন্যায় ও শান্তি কমিশনের সমন্বয়কারী ফাদার সাগর কোড়াইয়া, ফাদার জেমস মণ্ডল, রাজশাহী ধর্মপ্রদেশীয় ন্যায় ও শান্তি কমিশনের শিশু সুরক্ষা ডেস্কের আহ্বায়ক ব্রাদার প্লাসিড রিবেরু, সিএসসি এবং খুলনা কারিতাসের আঞ্চলিক পরিচালক আলবিনো নাথ উপস্থিত ছিলেন।

কর্মশালার শুরুতে সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিষয়ে ফাদার লিটন গমেজ, সিএসসি আলোচনা করেন। ফাদার, সিস্টার, ব্রাদার সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠানের সুরক্ষা নীতিমালার ওপর আলোচনায় সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফাদার মিন্টু যোহন রায় বলেন, ‘রাজশাহী ধর্মপ্রদেশ এবং কারিতাস রাজশাহী শিশু সুরক্ষায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একত্রে কাজ করছে’। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ও সম্প্রদায়ে সুরক্ষা নীতিমালা নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরী বলে আলোচনায় উঠে আসে। 

দ্বিতীয় দিনে সকালের অধিবেশনে সুরক্ষা সেবাকাজে কাথলিক মণ্ডলির শিক্ষা এবং পালকীয় দিক নির্দেশনার ওপর ফাদার উত্তম রোজারিও, শিশু ও নারী সুরক্ষাবিষয়ক বাংলাদেশ সরকারের আইন-কানুন বিষয়ে অ্যাডভোকেট আওরঙ্গজেব কাকন, জজকোর্ট, রাজশাহী, শিশু সুরক্ষাবিষয়ক মাণ্ডলিক আইন (ক্যানন ল) অনুধাবনের ওপর ফাদার উইলিয়াম মুর্মু, সুরক্ষা বিষয়ক নীতিমালা প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা, রিপোর্টিং তদন্ত, দায়িত্বপ্রাপ্ত টিমের কর্মসূচি ব্যবস্থাপনা (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট) বিষয়ে মিসেস স্টেলা রূপা মল্লিক, ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর চাইল্ড প্রটেকশন, ওয়ার্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশ এবং রিচার্ড অজয় সরকার আলোকপাত করেন।

অংশগ্রহণকারীদের মুক্তালোচনায় খুলনা ধর্মপ্রদেশের ফাদার জুয়েল ম্যাকফিল্ড বলেন, ‘যাজক, ব্রতধারী-ধারিণী ও জনগণ হিসেবে আমাদের ভালোর পাশাপাশি মন্দ কিছু থাকতে পারে। আমাদের মনে রাখা দরকার আমার দ্বারা যেন অন্যের কোন ক্ষতি না হয়’। শিশুদের প্রতি বড়রা নানাভাবে ভালবাসা প্রকাশ করেন যা দৃষ্টিকটু এবং তা করা উচিত নয়। একইসাথে কৃষ্টি-সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে যদি সুরক্ষা নীতিমালা শুধু লিখিতাকারে রেখে দিই তাহলে ভবিষ্যতে অনেকেই এটির সুযোগ নিয়ে অপরাধ করতে পারে বলে কারিতাস খুলনা অঞ্চলের কর্মকর্তা স্নিগ্ধা মৌ ঘোষ অভিমত ব্যক্ত করেন। খুলনা কারিতাস অঞ্চলের পরিচালক আলবিনো নাথ বলেন, ‘শিশু ও নারীদের সুরক্ষা বিষয়ে ফাদার-সিস্টার ও জনগণকে সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ কারিতাসের কার্যক্রমগুলো বেশ লক্ষ্যণীয়’।  

বিকালের অধিবেশনে আদালতে শিশু ও নারীদের সুরক্ষা সেবাসমূহের ওপর বিজয় কুমার বসাক, অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) রাজশাহী আলোচনা করেন। তিনি তার আলোচনায় বলেন, ‘আমরা আইন জানি না বিধায় অপরাধ করি। তাই শিশু ও নারীদের সুরক্ষায় প্রণীত আইনগুলো আমাদের সবাইকে জানা দরকার। শিশু ও নারীদের সুরক্ষায় বর্তমান সরকার বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছেন। এছাড়াও আদালতে শিশু ও নারীদের সুরক্ষায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে’।

সুরক্ষা বিষয়ক কর্মশালা প্রত্যেকটি ধর্মপল্লী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা দরকার। এই কর্মশালার শিক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলেই এই কর্মশালা সার্থক হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অংশগ্রহণকারী জাসিন্তা মুর্মু।

বরেন্দ্রদূত রিপোর্টার: ফাদার সাগর কোড়াইয়া

Please follow and like us: